ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

দোকানে দোকানে নতুন কালেকশন, শুরু ঈদের বেচাকেনা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২৩
দোকানে দোকানে নতুন কালেকশন, শুরু ঈদের বেচাকেনা মার্কেটে ঈদের ভিড়

ঢাকা: দেখতে দেখতে রমজানের দুই সপ্তাহ পেরিয়েছে। স্থবিরতা কাটিয়ে স্বাভাবিকতা ফিরছে এবারের ঈদ বাজারে।

আসছে ঈদুল ফিতর ঘিরে রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরাও লাভের আশায় বুক বাঁধছেন। বিভিন্ন মার্কেট আর শপিংমলে শুরু হয়েছে ঈদের বেচাকেনা।

শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সরেজমিনে রাজধানীর নিউ মার্কেটে দেখা গেছে, ছুটির দিনে ক্রেতাদের আশাব্যঞ্জক উপস্থিতি। যদিও এর আগেও ক্রেতাদের ভিড় দেখা করা গেছে, তবে এদিন নিউ মার্কেটে ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

ক্রেতাদের চাহিদা ও রুচির বিষয়টি মাথায় রেখে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ সব বয়সী মানুষের জন্য নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক আনা হচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে বেচাকেনা। বিশেষ করে দুপুরের পর ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়ে যায়। তবে শুরুর দিকে শিশুদের পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে দোকানিরা জানিয়েছেন।

কাপড়-চোপড়সহ গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত টুকিটাকি দ্রব্যাদি, প্রসাধনী, শোপিস সামগ্রী, তৈজসপত্র, আসবাবপত্রসহ নানা বৈচিত্র্যময় পণ্যে ভরপুর রাজধানীর নিউ মার্কেট। একই ছাদের নিচে একসঙ্গে এত পণ্য অন্য কোথাও তেমন দেখা যায় না।  


পাইকারি বা খুচরা- সব সুবিধা পাওয়ায় এখানে সবসময় মানুষের জমজমাট উপস্থিতি থাকে। উৎসব বা বিভিন্ন পার্বণ ঘিরে সেই উপস্থিতি রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ব্যবসায়ীরাও এমন উৎসবে ক্রেতাদের বাড়তি নজর পেতে আগেভাগে প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। এবার পয়লা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন নিউ মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীরা।

চলতি বছরও রোজার শুরু থেকে আসন্ন পয়লা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে নিউ মার্কেট ও আশেপাশের বিভিন্ন শপিং সেন্টারগুলোতে। বেশি বেশি ক্রেতার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বরাবরের মতো এ বছরও ব্যবসায়ীরা নিচ্ছেন আগাম প্রস্তুতি।  

তারা বলছেন, গত কয়েক বছরে করোনা, মানুষের অর্থনৈতিক টানাপোড়েনসহ নানা বাস্তবতায় নিয়মিত বেচাকেনা নেই বললে চলে। উৎসব ঘিরে ব্যবসাও আগের মতো নেই। তবুও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বড় পুঁজি নিয়ে ঈদবাজারে লগ্নি করছেন ব্যবসায়ীরা।

এবার পয়লা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতরের প্রস্তুতি হিসেবে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের বেচাকেনার সুবিধার্থে সপ্তাহের সাত দিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিউ মার্কেট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটির দিন মঙ্গলবারসহ অন্যান্য দিনেও নিউ মার্কেট খোলা থাকবে।

নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছর করোনার প্রভাব এবং অন্যান্য সমস্যার কারণে এখানকার ব্যবসায়ীরা প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবসা করতে পারেননি। কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় রোজার শুরু থেকে মানুষের উপস্থিতি থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতার সুবিধার কথা চিন্তা করে আমরা আগেভাগেই ছুটির দিনে মার্কেট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সামনে পয়লা বৈশাখ, এরপর ঈদুল ফিতর, আমরা বেশ আশাবাদী। আগের তুলনায় এবার ভালো ব্যবসা হবে।

জামদানি বুটিকসের বিক্রয়কর্মী রফিকুল ইসলাম বলেন, রোজার কারণে দিনে বিক্রি কিছুটা কম হলেও সন্ধ্যার পর মানুষ ঈদের কেনাকাটার জন্য ভিড় করছেন। অনেকে আগেভাগে গ্রামের বাড়ি চলে যাবেন। এ কারণে প্রিয়জনদের জন্য পছন্দের পোশাক কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরাও ক্রেতাদের পছন্দ ও ক্রয়ক্ষমতার কথা চিন্তা করে শাড়ি তুলেছি। পুরো মার্কেটে বেচাবিক্রিও বেশ।

পয়লা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যবসায়ী রুবেল হুসেন বলেন, আমাদের মার্কেটে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নিচ ও উপরতলার অধিকাংশই শাড়ি, থ্রি পিস ও লুঙ্গির দোকান। পয়লা বৈশাখ ও ঈদ উপলক্ষে সবাই বাহারি কাপড় তুলেছেন। আশা করছি, এবার অন্যান্য বারের তুলনায় ভালো ব্যবসা হবে।

ব্যবসায়ী মো. ইমরান হোসেন বলেন, আমাদের দোকানে পুরুষের জন্য ঈদ কালেকশন রোজার ১০ দিন আগে থেকে শুরু হয়েছে, আগামী ২০ রোজা পর্যন্ত চলবে। এবার আকর্ষণীয় পাঞ্জাবি, ক্যাজুয়াল শার্ট, টি-শার্ট, নরমাল শার্টসহ ছোট-বড়দের নানা ধরনের পোশাকের কালেকশন রয়েছে। এখন ছুটির দিনে ঈদ কেনাকাটা কিছুটা ভিড় রয়েছে। বিক্রি বাড়াতে ২০ রমজানের পর বিভিন্ন পোশাকে বিশেষ ছাড় দেওয়া হবে।

মার্কেটটিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা মিরপুরে বাসিন্দা হায়দার আলী জানান, কাপড়ের দাম অনেক বেড়ে গেছে। প্রতিটি পোশাকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। জুতার দামও বেড়েছে। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে। মানুষের ভিড় এড়াতে একটু আগেভাগেই কেনাকাটা সারতে আসা।

এদিকে, দুই বড় উৎসবকে কেন্দ্র করে নিউ মার্কেটসহ আশপাশ এলাকার ফুটপাতগুলোতে দেখা গেছে অন্যরকম আমেজ। পায়জামা, পাঞ্জাবি, টুপিসহ ছোট বাচ্চাদের কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ফুটপাতের বিক্রেতারা। তারাও আগেভাগে প্রস্তুতি নিয়ে বেচাকেনার জায়গা পাকাপোক্ত করছেন বলে জানান একাধিক খুদে ব্যবসায়ী।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত নিউ মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেট, গ্লোব শপিং সেন্টারসহ আশেপাশে কয়েক হাজার বিপণিবিতান রয়েছে, যার অধিকাংশই শাড়ি-কাপড়, থ্রি পিস, পায়জামা-পাঞ্জাবি, ছোটদের পোশাক, প্রসাধনীর পাইকারি ও খুচরা দোকান।

মূলত, শবে বরাতের পর থেকে রাজধানীতে ধীরে ধীরে জমে উঠছে ঈদের কেনাকাটা। পরে বাড়তি ভিড় হতে পারে, এ কথা মাথায় রেখে অনেকে আগেভাগেই জামা-কাপড় কেনা সেরে রাখছেন। তবে কেউ কেউ এখন মার্কেটে আসছেন শুধুই পছন্দের পোশাক বাছাই করতে। এ পর্যায়ের ক্রেতারা বেশ কয়েকদিন বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে সবচেয়ে অভিনব পোশাকটিই কিনতে চাইবেন। তবে যাদের সামর্থ্য আছে তারা ঠিকই আগেভাগে কেনাকাটা করছেন। আর এই সময়টাতে বড়দের পোশাকের দোকানগুলোতে তেমন ভিড় না থাকলেও ঈদের কেনাকাটায় ভিড় এখন ছোটদের পোশাক ও জুতার দোকানে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২৩
এইচএমএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।