আমানত কম, কিন্তু ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ বেশি। গড়ে উঠেছে কারখানা ও ব্যবসা বাণিজ্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২২ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকের পরিসংখ্যানে এমন চিত্র মিলেছে।
এলাকাগুলোতে উন্নয়ন হচ্ছে। বিভিন্ন রকম অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। এর ফলে শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। ব্যবসা বাণিজ্য বাড়ছে। এ কারণে ঋণের চাহিদা বাড়ছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি সহ বিভিন্ন খাতে পুনঅর্থায়ন করছে ব্যাংক ঋণের এটাও একটি কারণ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. আতিউর রহমান।
দেশের প্রধান শহর ও রাজধানীর বিভাগ ঢাকায় মাথাপিছু আমানতের পরিমান ২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা; বিভাগের গড় মাথাপিছু এ্যাডভান্স বা ঋণের পরিমান ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ঢাকা জেলায় মাথাপিছু আমানত ৬ লাখ টাকা; আর গড় এ্যাডভান্স বা ঋণের পরিমান ৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
রংপুর বিভাগ কম মাথাপিছু আমানতের বিভাগ। এ বিভাগে মাথাপিছু ব্যাংক আমানতের পরিমান ১৭ হাজার টাকা। আর বিনিয়োগের এ্যাডভান্সের পরিমান ১৯ হাজার টাকা। রংপুর তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা বিভাগ। এ অঞ্চলে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করণসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে। বিশেষ করে দারিদ্র দূরীকরণে বিভিন্ন কর্মসূচি ও অবকাঠামো তৈরির ফলে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার হচ্ছে। কলকারখানা হচ্ছে। বাড়ছে ব্যবসা বাণিজ্য। এর ফলে ব্যাংক আমানতের পরিমান না বৃদ্ধি পেলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যাংক ঋণের, যা উৎপাদনে সহায়ক হচ্ছে।
বিভাগের আট জেলার মধ্যে পাঁচ জেলাতেই অ্যাডভান্স বা ঋণের পরিমান বেশি। যার প্রভাব পড়েছে মোট বিনিয়োগে। দেখা যায় দিনাজপুরে মাথাপ্রতি ২৪ হাজার টাকা আমানতের বিপরীতে ২৪ হাজার টাকাই ঋণ হিসাবে গেছে। গাইবান্ধায় ১১ হাজার টাকা আমানতের বিপরীতে ঋণের পরিমান ১৪ হাজার টাকা। লালমনিরহাটে ১১ হাজার টাকা আমানতের বিপরীতে অ্যাডভান্সের পরিমান ১৩ হাজার টাকা। নীলফামারীতে ১৬ হাজার ব্যাংক আমানতের বিপরীতে ঋণের পরিমান ২৩ হাজার টাকা। পঞ্চগড়ে ১২ হাজার টাকা আমানতের বিপরীতে ঋণের পরিমান ১৯ হাজার টাকা। রংপুরে ২৬ হাজার টাকা আমানতের বিপরীতে ঋণের পরিমান ২৬ হাজার এবং ঠাকুরগাঁয়ে মাথাপ্রতি ১৫ হাজার টাকার ব্যাংক আমানতের বিপরীতে মাথাপ্রতি ঋণের পরিমান ১৮ হাজার টাকা। শেরপুরে ১৪ হাজার ব্যাংক আমানতের বিপরীতে মাথাপ্রতি অ্যাডভান্সের পরিমান ১৮ হাজার টাকা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের জেলা। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের কারণে ঋণ চাহিদা বাড়ছে বলে মনে করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্চ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি আ. ওয়াহেদ।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, জেলায় বেশ কিছু বড় কলকারখানা গড়ে উঠেছে। জেলায় বড় ধরণের অটোরাইস মিল রয়েছে। যেখানে ধান থেকে চাল তৈরি হয়। জেলায় কৃষি প্রক্রিয়াজাত কারখানা গড়ে উঠেছে। যেখানে কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাত করা করা হয়। রয়েছে দুটি স্থল বন্দর। যেখানে পণ্য আমদানি রপ্তানি হয়ে থাকে। এ সব প্রতিষ্ঠানে বড় ধরণের বিনিয়োগ হয়েছে।
এ সব কারণে মানুষ বাণিজ্যিক ব্যাংককে যে পরিমান আমানত রাখে, যে পরিমান মাথাপিছু আমানত রয়েছে, তার চেয়ে বেশি ঋণ বেড়ছে। তবে ঋণ নিলেও ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যবহার হচ্ছে। ঢাকা বা চট্টগ্রামের মত খেলাপি এ সব অঞ্চলে নেই; বলে এই ব্যবসায়ী নেতা।
খুলনা বিভাগের একমাত্র জেলা কুষ্টিয়ার মাথাপিছু আমানতের চেয়ে অ্যাডভান্সের পরিমান বেশি। জেলার ৩৭ হাজার টাকা মাথাপ্রতি ব্যাংক আমানতের বিপরীতে ঋণের পরিমান ৩৮ হাজার টাকা। যেখানে খুলনা বিভাগের মাথা প্রতি গড় আমানত ৩৭ হাজার টাকা; আর ঋণের পরিমান ৩০ হাজার।
চাল প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে কুষ্টিয়া সর্ববৃহৎ জেলা। বৈদ্যুতিক তার উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত কুষ্টিয়া। এখানে উৎপাদিত দুটি পণ্যই সারা দেশে সরবারহ হয়। পোল্ট্রি ও হ্যাচারি খাদ্য উৎপাদনও এখানে সম্প্রসারিত হচ্ছে। তামাক প্রক্রিয়াজাত কারখানা এবং বিড়ি ও সিগারেটের জন্যও বিখ্যাত কুষ্টিয়া জেলা। এছাড়া ছোট্ট-বড় কারখানা রয়েছে এ জেলায়। এতে বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। সে কারণে জেলার মাথা প্রতি ব্যাংক আমানতের চেয়ে ঋণের হার বেশি বলে মনে করেন চেম্বার অব কামার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কুষ্টিয়ায় শিল্প কারখানার বৈশিষ্ট হলো- উৎপাদন স্থানীয়, চাহিদা পূরণে সারা দেশের। পাশাপাশি স্বচ্ছ ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিতি আছে এখানকার উদ্যোক্তাদের।
বাংলাদেশ সময়: ২১২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২৩
জেডএ