সিলেট: অপেক্ষার অবসান হলো সিলেটের সীমান্ত জনপদের লোকজনের। প্রায় ৫ বছর আগে নেওয়া বর্ডার হাটের উদ্যোগ অবশেষে বাস্তবায়ন হলো।
সিলেটের জেলার ভোলাগঞ্জে প্রথম ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃদেশীয় বর্ডার হাট আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করলো।
শনিবার (৬ মে) সকালে বর্ডার হাটের উদ্বোধন করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ও সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ এবং সিলেটে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার নিরাজ কুমার জয়শওয়াল। উদ্বোধন শেষে বর্ডার হাটের বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে দেখেন মন্ত্রী ইমরান আহমদসহ অতিথিরা।
এ সময় সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং ছাড়াও দুই দেশের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সোহরা কাস্টমস অফিসের ইন্সপেক্টর আনান্দ ঝাঁ, ভোলাগঞ্জ বিএসএফ কোম্পানি কমান্ডার নিতিন উপাধ্যায়, ভারত-বাংলাদেশ বর্ডার হাট ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যরাসহ কোম্পানীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিল্লোল রায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আপ্তাব আলী কালা মিয়া প্রমুখ।
সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে ভারতের অভ্যন্তরে বসা বর্ডার হাটের উদ্বোধনী দিনেই শুরু হয়েছে ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম। এই হাটের মাধ্যমে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে এবং দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং বলেন, হাটে ব্যবসার জন্য আবেদনকারী বিক্রেতাদের মধ্যে ২৪ জনকে লটারির মাধ্যমে বাছাই করা হয়েছে। ধারাবাহিক লটারিতে অন্যান্য আবেদনকারী ব্যবসায়ীরাও সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
তিনি বলেন, আবেদনকারী ক্রেতাদের মধ্যে বর্ডার হাট ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সইয়ে কার্ড বিতরণ করা হয়। সরকারি কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, ও সংবাদিকদের জন্যে ভিজিটর কার্ড প্রদান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আবেদনকারীদের কার্ড যাচাই-বাছাই শেষে বিতরণ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একজন ক্রেতা একদিনে সর্বোচ্চ ২শ ডলারের সমমান টাকার পণ্য কিনতে পারবেন। প্রবেশ ফি বাবদ কার্ডধারী একজন ক্রেতাকে দৈনিক ৩০ টাকা ও বিক্রেতাকে দৈনিক ৭০ টাকা দিতে হবে। এ টাকা বর্ডার হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদনক্রমে হাটের সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা হবে।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, প্রতি সপ্তাহে দুইদিন (শনিবার ও বুধবার) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হাট চলবে। হাটে ভারতের ২৬টি ও বাংলাদেশের ২৪টি স্টল থাকবে। হাটে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হবে এবং হাটের ৫ কিলোমিটার এলাকার বাসিন্দারা পণ্য ক্রয়বিক্রয়ের সুযোগ পাবেন। ভারতের মেঘালয় পূর্ব খাসিয়া হিলস ও কোম্পানিগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সীমান্তে অবস্থিত এই বর্ডারহাট।
বাংলাদেশ-ভারতের বিভিন্ন সীমান্তে বর্তমান ১৩টি বর্ডার হাটের কার্যক্রম চালু রয়েছে। আরও ৩টি বর্ডার হাট চালুর অপেক্ষায় রয়েছে।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ-মেঘালয় সীমান্তের সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ও মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড়ের ভোলাগঞ্জ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১২৪৮/১২ এস এবং ১১ এস পিলারের কাছে দুই দেশের সমপরিমাণ ১ একর ৫০ শতক জায়গায় সীমান্ত হাট নির্মাণ করা হয়।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্মাণকাজ শুরু হয়। ওই বছরেই শেষ করা হয়েছিল নির্মাণ কাজ। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এই বর্ডার হাট উদ্বোধনের কথা ছিল। কিন্তু করোনাকালে বর্ডার হাট চালু করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৩ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২৩
এনইউ/এএটি