ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন অবাস্তব: পিআরআই

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৪ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২৩
প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন অবাস্তব: পিআরআই

ঢাকা: সাড়ে ৭ শতাংশের নিচে প্রবৃদ্ধি হবে—প্রবৃদ্ধি নিয়ে এই প্রাক্কলন বাস্তবতা নির্ভর নয়। বাস্তবতা হলো, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির পেক্ষিতে ৫ বা ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধিই অনেক বেশি।

সেখানে বলে দেওয়া হলো সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে, এটা ব্যাস্টিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা সমর্থন করে না। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে কোনো দেশই এই নিশ্চয়তা দিতে পারে না। বাংলাদেশ সেখানেই অবস্থান করছে।

রোববার (১৪ মে) পলিসি রিচার্চ ইন্টিস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত প্রি-বাজেট প্রেস ব্রিফিং অ্যান্ড ডিসকাশন শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এ কথা বলেন। পিআরআই-এর চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তারের সভাপতিত্বে কি-নোট উপস্থাপন করেন পিআরআই স্টাডি সেন্টার অন ডমেস্টিক রিসোর্স মোবিলাইজেশন প্রকল্পের পরিচালক ড. এম এ রাজ্জাক।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে বিশেষ সুযোগ ঘোষণা করা হয়েছিল। কোনো টাকাই ফেরত আসেনি। স্বার্থান্বেষী মহল কেউ কেউ এ সুবিধা নেবে। কিন্তু নৈতিকভাবে এটা সঠিক নয়। বদনামের ভাগিদার হবে, কিন্তু উপকার আসবে না। সরকারের এটা একটি আন-ওয়াইজ ও ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এবার আবার প্রত্যাহার হবে। আমারা সাধুবাদ দেবো, এটা আর দরকার নেই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গত ১৫ মাস ধরে একটি সমস্যা আছে এবং তা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এটা যত দীর্ঘায়িত হয়, সমস্যা বড় হবে। ক্ষত ততটা বাড়তে থাকবে। সাধারণ মানুষের ওপরে দীর্ঘস্থায় বোঝা চাপতে থাকবে এবং তা বড় হতে থাকবে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে সরকার একটা শক্তিশালী অর্থনৈতিক টিম গঠন করবে, যেটার মাধ্যমে নীতিগুলো সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে।

সুপারিশ দিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকার যেটা এখন পর্যন্ত করেছে, তা খুবই ক্ষুদ্র, বড় কিছু করেনি। বড়র মধ্যে করেছিল এক্সচেঞ্জ রেট নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত। সরকার এখনো সুদ হার পরিবর্তন করেনি। মূল্যস্ফীতিকে অ্যাড্রেস করার জন্য এখনো পর্যন্ত একটি পলিসি করেনি; মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। রিজার্ভ নিয়ে এখন পর্যন্ত যে পলিসি নিয়েছে, তাতে হ্রাস বন্ধ হয়নি। এটা চলছেই। গত ৯ মাসে ১২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। আগামী ৮-৯ মাস যদি আরও ৮-৯ বিলিয়ন হারায়, তাহলে আমরা কোথায় থাকবো?

তিনি বলেন, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় সরকারের নীতি কাজ করছে না। যদি কাজ না করে তাহলে নীতির পরিবর্তন করতে হবে। সরকারের নীতি হওয়া উচিত, আমরা আরও রিজার্ভ বিক্রি করবো না, প্রত্যেকে মার্কেটে যাও। তাহলে মার্কেটে মুদ্রার বিনিময় হারের ওপর চাপ তৈরি হবে। আস্তে আস্তে স্থিতিশীলতা আসবে। আর সরকার যে ধার করে নিয়ে আসবে, সেটা জমা হবে। রিজার্ভ বাড়বে। আমাদের যেটা হচ্ছে, আস্থার ঘাটতি।

রিজার্ভ সাশ্রয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে। আর এর ফলে কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছে। এর ফলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। ঝুঁকিতে পড়বে প্রবৃদ্ধি, উল্লেখ করেন পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক।

অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট বাস্তবায়নে দক্ষ না কিন্তু নিয়ন্ত্রণে সার্থক বলে মনে করেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, তারা বাজেট কমিয়ে দেবে। বাজেটের খরচ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে খুবই শক্তিশালী। অন্তত ২০টি দেশে কাজ করেছি। এ সব দেশকে এত কার্যকর ম্যানেজ করতে দেখিনি।

বাংলাদেশে কর্মরত বহুজাতিক কোম্পানি অডিট করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের অডিট প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর অ্যাকাউন্টিং ও অডিটের ধরন আন্তর্জাতিক মানের হয়। মানহীন অডিট ফার্ম দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান অডিট করানো হলে এবং সেখানে নেতিবাচক কিছু বের হলে তাতে দেশের সুনাম ক্ষুন্ন হবে।

ড. জায়েদি সাত্তার বলেন, দেশের ব্যাস্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে চাপের আভাস থাকলেও বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের ৫০ বছরের পরিক্রমায় আজকে যে অবস্থানে, তা একটি ইতিবাচক চিত্র। বাংলাদেশ এখন আর তলাহীন ঝুড়ির প্রসঙ্গে নেই; এটি অগ্রগতি ও উৎসাহব্যঞ্জক কতকগুলো সাফল্যের গল্প বলে মনে করেন তিনি।

পিআরই চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার আরও বলেন, এখন আমরা শুধুই সামনে যাচ্ছি। বাজেট ব্যবস্থাপনায় এক অসাধারণ কাজ করছে বাংলাদেশ। ব্যাস্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় অসাধারণ করছে। এটা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্ব ব্যাংক পর্যন্ত স্বীকার করেছে। গত ২০ থেকে ২৫ বছরে আমরা ব্যাস্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ভালো করেছি। বৈদেশিক বাণিজ্যে যদিও ঘাটতি রয়েছে।

বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে নেতিবাচক সূচক সামনে এসেছে, বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি হচ্ছে। এগুলো হয়েছে সময় উপযোগী ব্যবস্থা না দেওয়ার কারণে, এমন নয়। বরং সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে; বলেন জায়েদি সাত্তার।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে ৩৩ বিলিয়ন ডলার ট্রেড ঘাটতি হলো। আমদানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হলো। যদিও পদ্ধতিটা ঠিক ছিল না, তারপরও এ উদ্যোগ ফল দিয়েছে।

আইএমএফ ঋণ গ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে শুরু সময় থেকে বলা হচ্ছে শর্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ ঋণ পাচ্ছে। কিন্তু এখানে শর্তের কোনো বিষয় নেই বলে জানান জায়েদি সাত্তার। তিনি বলেন, শর্তের বিষয়টি গণমাধ্যমের সৃষ্টি। প্রকৃত বিষয় হলো সরকারের সাথে বোঝাপড়া; সরকার কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর প্রতিশ্রুতি পূরণ না হলে ঋণ দেওয়া হবে না, এটাও ঠিক না।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ব্যাস্টিক অর্থনীতির লক্ষপূরণ হবে না বলে জানান ড. এম এ রাজ্জাক। তিনি বলেন, রাজস্ব আদায়, প্রবাসী আয়, রপ্তানি আয় বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চায়ন চাপে আছে। এই ঘাটতির ওপর আগামী ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেট প্রাক্কলন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২৩
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।