ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বোরোতে বিঘায় ১২ হাজার টাকা লাভে খুশি কৃষক

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০২ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২৩
বোরোতে বিঘায় ১২ হাজার টাকা লাভে খুশি কৃষক

বগুড়া: বগুড়ায় বোরো মৌসুমের উৎপাদিত ফসলের বাম্পার ফলনে বেশ খুশি এ জেলার কৃষক। ধান কাটা-মাড়াই শেষে উৎসবমুখর পরিবেশে গোলায় ধান ভরছেন কৃষকরা।

 উৎপাদিত ফসলের বাম্পার ফলন ও দাম আশানুরুপ হওয়াতেও বেশ সন্তুষ্ট জেলার কৃষক। কৃষকদের অনেকেই হাট-বাজারে বিক্রির পাশাপাশি বাড়ি থেকেও বিক্রি করছেন তাদের উৎপাদিত ফসল।

শুক্রবার (১৯ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলার কয়েকটি উপজেলা ও হাট ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। বোরোর বাম্পার ফলনে ও ভালো দামে সন্তুষ্ট এ জেলার কৃষক।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বগুড়ার ১২টি উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৮৭ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান লাগানো হয়। কৃষক তাদের সিংহভাগ জমিতে আবাদ করেছে কাজল লতা, কাটারি ভোগ, ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-৮১, ব্রি ধান-৯০, ব্রি ধান-৯১, ব্রি ধান-১০০ ধান, জীরাশাইল জাতের ধান। যার প্রতিবিঘা ফলন হয়েছে প্রায় ২৩ থেকে ২৪ মণ। বর্তমানে বাজারে এ জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ১ হাজার ৩শ থেকে ১ হাজার ৪শ টাকা পর্যন্ত। জেলার কৃষকরা বলছেন, ধানের এ বাড়তি দামে খুশি তারা।  

সরেজমিনে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কেবলই সোনারঙা ধানের সমারোহ দৃশ্যমান। ধান গাছের ডগায় থোকায় থোকায় পুষ্ট ধান ঝুলছে। ধানের শীষে সোনারঙা ধারণ করেছে। অনেক ধান পুষ্ট হলেও এখনো কাঁচা রয়েছে। অনেকে জমির ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ সম্পন্ন করেছেন। কৃষাণ ও কৃষাণীরা তাদের সে ধান শুকানোর কাজে সময় ব্যয় করছেন। অনেকই তাদের উৎপাদিত ফসল রোদে শুকিয়ে ঘরে ও হাটে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সবমিলিয়ে প্রখর রোদ আর বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ধান ঘরে তোলা ও বাজারজাত করার কাজ।

অন্যদিকে হাটগুলোতে চলছে ধান নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর কষাকষি ও বেচাকেনা। কৃষক তাদের ধান ভটভটি, মিনি ট্রাক ও ভ্যান গাড়িতে করে হাটগুলোতে নিয়ে যাচ্ছে। আশানরূপ দাম হাঁকলেই বিক্রি করছেন খুচরা ও পাইকারি ক্রেতার কাছে। হাটে ধানের দাম ঠিক হওয়ার আগেই কৃষকের হাতে টাকা গুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করছেন অনেক পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী।

নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলার জসিমুর রহমান, সাদিক হোসেন, সোনা মিয়া নামে একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, অনেক পরিশ্রম আর পরিচর্যায় মধ্য দিয়ে ফসল ফলান এ জেলার কৃষক। তারা চোখের সামনেই তরতর করে বেড়ে উঠতে দেখেছেন জমির ধানগুলোকে। এখন সোনারঙা সেই ধান ঘরে তুলছেন। অনেকেই ফসল ঘরে তোলার অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন। এখন বাজারে কাঁচা ধানই প্রতিমণ ৯শ ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। শুকনো ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩শ থেকে ১ জাহার ৪শ টাকা পর্যন্ত। ধানের এমন দাম তাদের মতো কৃষকদের ব্যাপক আশাবাদী করে তুলেছে। তাদের কিছু জমিতে কাটা-মাড়াই কাজ শেষের দিকে। সোনারঙা সেই ধান ঘরে তোলার অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন অনেক তারা।

শাজাহানপুর উপজেলার কৃষক তাজনুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এ বছর প্রায় ৩৫ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘায় তার ফসল এসছে গড়ে প্রায় ২৩-২৫ মণ করে। তার প্রতি বিঘাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা এবং ধান বিক্রি করছেন প্রায় ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এ হিসাবে প্রতি বিঘায় খরচ বাদ দিয়ে তার লাভ হচ্ছে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহকারী উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এ বছর বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৮৭ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭ লাখ ৫০ হাজার ৫৫ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হলেও তা ছাপিয়ে যাবে। চলতি মৌসুমে এ জেলায় বোরোতে বেশ ভালো ফলন হয়েছে। বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে দামও ভালো পেয়ে লাভবান হচ্ছেন ধানচাষিরা। জেলায় এ পর্যন্ত মোট চাষাবাদের ৩০ থেকে ৩৫ শকতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। ফলন হচ্ছে ২৩-২৪ মণ হারে।

এবার বৈশাখের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনেকটাই ভালো রয়েছে। চলতি মৌসুমের উঠতি বোরোর সম্পূর্ণ ফসল ঘরে তুলতে পারলেই স্বস্তি কৃষকের। বেশ দ্রুত গতিতেই ধানকাটা-মাড়াইয়ের কাজ চলছে। কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন বলেও জানান কৃষির এ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২৩
কেইউএ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।