ঢাকা: ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির পর রাজধানীর বাজারগুলোতে কমতে শুরু করেছে দেশি পেঁয়াজের দাম। দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে প্রায় ২০-৩৫ টাকা কমেছে দেশি পেঁয়াজের দাম।
বুধবার (৭ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন জাতের দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে বাজারে প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ৩৭৫ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। কেজিতে যা পড়ছে ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা। ফরিদপুরের পেঁয়াজের পাল্লা বিক্রি করা হচ্ছে ৩১০ টাকা থেকে ৩৪০ টাকা। কেজিতে যা পড়ছে ৬২ থেকে ৬৮ টাকা। রাজশাহীর পেঁয়াজের পাল্লা বিক্রি করা হচ্ছে ৩৭৫ টাকা, যা কেজিতে পড়ছে ৭৫ টাকা। এছাড়া আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ৩২৫ টাকা, যা কেজিতে পড়েছে ৬৫ টাকা।
অথচ ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরুর আগে এ বাজারেই প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকার বেশি বিক্রি হয়েছিল।
বিক্রেতাদের দাবি, হঠাৎ করে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি ও বাজারে আসতে শুরু করায় লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। মানভেদে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজে প্রায় ১৫ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত লোকসানে বিক্রি করছেন তারা।
নূরুল ইসলাম নামের এক বিক্রেতা বাংলানিউজকে বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরুর পর দেশি পেঁয়াজের দাম পড়ে যায়। ফলে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরুর আগে বাড়তি দামে কেনা দেশি পেঁয়াজ এখন ১৫ থেকে ২৫ টাকা লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে।
তবে তিনি এও বলেন, ভারত থেকে পেঁযাজ আমদানি না করলে দেশি পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে যেতো। এখন দেশি পেঁয়াজের দাম পড়তির দিকে থাকলেও কোরবানির ঈদের আগে আবার বাড়তে পারে। এছাড়া সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত না রাখলে দেশি পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকার নিচে নামবে না।
সোহেল রানা নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ফরিদপুরের হাট থেকে মঙ্গলবার (৬ জুন) ৫৭ টাকা করে পেঁয়াজ কিনেছি। পরিবহন ও লেবার খরচ মিলিয়ে ঢাকায় আসতে সেই পেঁয়াজের দাম পড়েছে ৬০ টাকা। এখন ৬২ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি করছি। তবে এর আগের চালানে কেজিতে ১৫ টাকা করে লোকসান দিতে হয়েছে। কারণ তখন ৯০ টাকার বেশি দিয়ে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। যা বিক্রি করতে হয়েছে ৭৫ টাকায়।
তবে এক চালানে লাভের কথাও স্বীকার করেন তিনি। সোহেল রানা বলেন, ৭৫ টাকায় একটি চালান কিনেছিলাম। হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা হয়ে গেলে তখন কেজিতে প্রায় ২০ টাকা লাভ হয়েছে।
সহিদুল ইসলাম নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, হঠাৎ করে আমদানির অনুমতি দেওয়ায় আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। যদি সরকার আমদানির অনুমতির অন্তত তিনদিন আগে ঘোষণা দিতো তাহলে আমাদের লোকসান গুনতে হতো না।
মজনু মিয়া নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, গতকাল ও গত পরশু প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজে ১৫ টাকা করে লোকসান দিতে হয়েছে। ৩ হাজার ৬০০ টাকা করে মণ (৪০ কেজি) কেনা পেঁয়াজ বিক্রি করছি তিন হাজার টাকা।
দেশি পেঁয়াজের দাম আর কমবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাঁচামালের কথা বলা যায় না। তবে কোরবানির ঈদের আগে ৬০ টাকার নিচে দেশি পেঁয়াজের দাম নামার সম্ভাবনা নেই। আমদানি অব্যাহত থাকলে ঈদের পর হয়তো কমতে পারে। নইলে আবার বাড়বে।
এদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির পর দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০-৩৫ টাকা কমলেও সন্তুষ্ট হতে পারছে না ক্রেতারা। তাদের দাবি, দাম বাড়ানোর তুলনায় দাম কমেনি। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পেঁয়াজের দাম এখনো নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। এছাড়া অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেওঙ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের জোর ভূমিকা নেই বলেও জানিয়েছেন তারা।
কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসেন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী এস এম শান্ত। কিন্তু এই দোকান সেই দোকান ঘুরাঘুরি করে পেঁয়াজ না কিনেই চলে যান তিনি। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছিলাম পেঁয়াজের দাম কমেছে, তাই এসেছিলাম। কিন্তু যতটুকু কমেছে সেটাও অনেক বেশি। তাই না কিনেই চলে যেতে হচ্ছে। দাম আরেকটু কিনলে তখন কিনবো।
তিনি আরও বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরুর পর দেশি পেঁয়াজের দাম কমেছে ঠিকই। কিন্তু সেটাও কতখানি সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে এসেছে? মানুষের কাছে টাকা নেই। কিন্তু বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। ধনীদের এতে সমস্যা না হলেও আমাদের মতো সাধারণ মানুষের বাজার করতে গিয়ে প্রতিদিনই হিমশিম খেতে হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম ৩০-৪০ টাকার মধ্যে থাকলে সাধারণ ক্রেতাদের জন্য ভালো হয়।
হাইকোর্টের আইনজীবীর সহকারী কামাল মিয়া বলেন, পেঁয়াজের এত দাম হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। কিন্তু এ দেশে সবই সম্ভব। এতদিন ব্যবসায়ীরা বলেছে, পেঁয়াজের উৎপাদন কম হয়েছে, সরবরাহ নেই, তাই দাম বেশি। তাহলে এখন ভারতীয় পেঁয়াজ আসার পর দেশি পেঁয়াজের দাম কমছে কেন? এগুলো ব্যবসায়ীদের অজুহাত। আসলে সরকারের ঠিকমতো তদরকি নেই বলেই এগুলো হয়। আর আমাদের সাধারণ ক্রেতাদের তো খেয়ে বাঁচতে হবে। তাই বেশি দাম হলেও কিনতে হয়। তবে পেঁয়াজের এখন যে দাম কমেছে সেটাও সন্তোষজনক বলা যায় না।
পেঁয়াজ কিনতে আসা ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম বলেন, এখন পেঁয়াজ ৩১০ থেকে ৪০০ টাকা পাল্লা বিক্রি হচ্ছে। তবে এটা হওয়া উচিত ছিল ২০০ থেকে ২৩০ টাকা। রোজার ঈদের পরও আমরা এই দামেই পেঁয়াজ কিনেছিলাম। এখন হঠাৎ করে দাম বেড়ে গেছে। সরকারের তদারকি থাকলে এটা হতো না।
প্রসঙ্গত, দেশের বাজারে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বেড়ে গেলে ভারত থেকে আমদানির অনুমতি দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। এতে সোমবার (৫ জুন) থেকে দেশে ঢুকতে শুরু করে আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, মঙ্গলবার (৬ জুন) বিকেল পর্যন্ত ১ হাজার ২৮৮ টন ভারতীয় পেঁয়াজ দেশে এসেছে। আর আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার টন।
এর আগে কৃষকদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে গত ১৫ মার্চ পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দেয় সরকার। যা এখন আবার খোলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৮ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০২৩
এসসি/জেএইচ