ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

গোখাদ্যের চড়া দামে উৎকণ্ঠায় খামারিরা

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৪ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০২৩
গোখাদ্যের চড়া দামে উৎকণ্ঠায় খামারিরা মৌলভীবাজারের একটি গবাদিপশুর খামার। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: দুই সপ্তাহ পরেই দেশব্যাপী হতে যাচ্ছে পবিত্র ঈদুল আযহা। এবারের ঈদুল আযহার কোরবানির পশুর হাটে নিজেদের সেরা গরু প্রদর্শনে এখন মৌলভীবাজারের খামারিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

উদ্দেশ্য প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে মান অনুযায়ী ভালো দাম পাওয়া। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী মৌলভীবাজার জেলা সদরে ১৯৯টি গরুর খামার থাকলে বাস্তবে এর সংখ্যা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি।

বাড়ছে এই খাতে উদ্যোক্তার সংখ্যাও। লাভজনক হওয়ায় বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে অনেকে গড়ে তুলেছেন গবাদিপশুর খামার। তবে ফিডসহ খাবারের দাম হু-হু করে বাড়তে থাকায় উদ্যোক্তাদের মধ্যে চিন্তার ভাঁজও লক্ষ্য করা গেছে।

জেলা সদরের মোস্তফাপুর ইউনিয়নের মোস্তফাপুর গ্রামে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ রুমেল আহমদের ভাই ব্যবসায়ী শেখ বদরুল ইসলাম সুজন চলতি বছরের মার্চে নিজেদের বাড়ির পাশেই শেখ অ্যাগ্রো ফার্ম নামে দেশীয় প্রজাতির গবাদিপশুর বিশাল খামার গড়ে তুলেছেন।

ওই এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে আরো বেশ কয়েকটি অ্যাগ্রো ফার্ম রয়েছে। তবে ব্যবসায়ী বদরুল ইসলাম সুজনের দাবি শখের বসে গরুর খামার করা হলেও উদ্দেশ্য মানুষের কর্মসংস্থান। খামার শুরুর পর এলাকার বেকার ১০ থেকে ১২জন যুবক এখানে কাজের মাধ্যমে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ পেয়েছেন।

বুধবার (৭ জুন) সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ওই খামারে আড়াই মণ থেকে শুরু করে সাড়ে তিন মণ ওজনের ষাঁড় রয়েছে। এগুলো সবই দেশিও প্রজাতির ষাঁড়। যার একটির দাম পড়বে একলাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। সব মিলিয়ে খামারটিতে ষাঁড় রয়েছে ৭০টি আর গাভী রয়েছে ১২টি। সর্বমোট ৮২টি গরু রয়েছে পুরো খামারে। দেশীয় প্রজাতির ষাঁড় এর বাহিরে নেপালিয়ান প্রজাতির দুটি ষাঁড়ও রয়েছে। এগুলো বড় হলে একেকটি ষাঁড়ে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ১৬ মণ মাংস পাওয়া যাবে বলে ধারণা উদ্যেক্তাদের।

খামারটিতে থাকা ১২টি গাভী প্রতিদিন দুই বেলা ১৩২ লিটার দুধ দিয়ে থাকে। যা থেকে প্রতিদিন আয় হয় প্রায় ৮ হাজার টাকা। খামারে ৩৫০টি গরুর ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি সেডে বর্তমানে এক কোটি টাকারও বেশি গরু রয়েছে।

সেড ঘুরে দেখা যায়, সেখানে বিশাল আকৃতির দেশীয় প্রজাতির ষাঁড়ের উপস্থিতি। সেডের পাশেই বিশাল ডেকচিতে খাবার তৈরির কাজে ব্যস্ত শ্রমিক রমিজ মিয়া।  

আলাপকালে ওই শ্রমিক জানান, গরুর যত্নে ভালো মানের খাবারের বিকল্প নেই। গো-খাদ্যের দাম অতিরিক্ত হলেও প্রতিদিন রান্না করা খাবার দিতে হয়।

খামার মালিক বদরুল ইসলাম সুজন জানান, গরুর খাবারের মূল উপাদান সবুজ ঘাস নিজের জমিতেই চাষ করি। সেগুলো দিয়েই খাবারের একটি বড় অংশের চাহিদা জোগান দেওয়া হয়। এর বাহিরে প্রতিদিনই খইল, গোরা, ফিড, ভুসি ও চিটাসহ অন্যান্য খাবার নিয়মিত দিতে হয়। তবে খাবারের দাম অনেক গুণ বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে গরুর দামও।

তরুণ এই এই উদ্যোক্তা জানান, ঈদুল আযহায় গরুর হাটে ছোট-বড় মিলিয়ে ৬০টি ষাঁড় বিক্রির প্রস্তুতির কথা। ভালো দাম পাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, ভারত ও মিয়ানমারসহ আশপাশের দেশ থেকে চোরাই পথে গরু ঢোকানোর পথ বন্ধ ও বিদেশি গরু আমদানি বন্ধ করতে পারলে দেশীয় খামারিরা লাভ হবে। আর যদি এটি রোধ করা সম্ভব না হয় তাহলে খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, এমনিতেই খাবারের দাম অনেক গুণ বেড়ে গেছে। বেড়েছে শ্রমিকদের মজুরিও। প্রতি মাসে শ্রমিক মজুরির পেছনে ব্যয় হয় লক্ষাধিক টাকা। এর বাইরে খাবারসহ অন্যান্য ব্যয় তো রয়েছেই।

তার দাবি মৌলভীবাজারে গরুর দুগ্ধ খামারের নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে খুব একটা সহায়তা পাওয়া যায় না এবং তাদের এখানে কোন ওষুধও পাওয়া যায় না।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শাহিনুল হক বলেন, গরুর খামার দিয়ে লাভবান হতে হলে প্রথমে প্রয়োজন পরিচর্যা। সেসঙ্গে গরুর খাবার হিসেবে ৫০ শতাংশ ঘাস নিজেই চাষ করতে হবে। শুধু মোটাতাজা করণের লক্ষ্যে বাইরে খাবারের ওপর নির্ভর করলে লাভবান হওয়া যাবে না। এখানে যত্রতত্রভাবে গড়ে উঠছে গরুর খামার।

কীভাবে খামার করলে লাভজনক হওয়া যাবে তার জন্য অনেকেই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কোন নির্দেশনা কিংবা পরামর্শ নিচ্ছেন না বলে দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০২৩
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।