ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মূল্যস্ফীতি গরিবের পকেট কাটে, এটিকে সামলাতে হবে: আতিউর রহমান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৩ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৩
মূল্যস্ফীতি গরিবের পকেট কাটে, এটিকে সামলাতে হবে: আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান

ঢাকা: মূল্যস্ফীতিকে গরিবের শত্রু মন্তব্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেছেন, মূল্যস্ফীতি গরিবের পকেট কাটে। এটিকে যে করেই হোক সামলাতে হবে।

শুক্রবার (১৬ জুন) ‌'সমৃদ্ধ ও সুষম বাংলাদেশ নির্মাণ: বাজেট ২০২৩-২৪' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  

জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি)।

আলোচনা সভায় অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান আরও বলেন, এ সময়ে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা মূল্যস্ফীতি। এ মূল্যস্ফীতিকে ৬ শতাংশে ধরে রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতার সময় যখন দেশের মানুষ মূল্যস্ফীতির কারণে হিমশিম খাচ্ছে, তখন মূল্যস্ফীতি এ মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে, তা নিশ্চই একটি বড় অর্জন হবে। তবে বিষয়টি খুব সহজ হবে না। এজন্য নীতিমালা নিতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি শুধু বাজেট দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতিরও বিরাট ভূমিকা পালন করতে হয়। আশা করি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটি করবে।

তিনি বলেন, নাগরিকদের মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করা হয়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে কিছুটা স্বস্তি পাবেন নাগরিকরা। এছাড়া আসন্ন বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটের থেকে ৯ শতাংশ বাড়িয়ে ৮৪ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। ভর্তুকিতে কাটছাটের চাপ থাকার পরও জনজীবনে স্বস্তি আনতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ বৃদ্ধি জনস্বার্থের প্রতি সংবেদনশীলতার প্রতিফলন হিসেবে দেখা উচিত। বিশেষ করে কম দামে কোটি মানুষকে কার্ডের মাধ্যমে যে খাদ্য সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে, এটি মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার জন্য একটি বড় উদ্যোগ। এটি আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য কতটা অর্জন করা যাবে সেটি নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনার সুযোগ থাকলেও, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যে, মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। আর সমকালীন মূল্যস্ফীতি যাতে দীর্ঘমেয়াদে চেপে না বসে সেজন্য মুদ্রানীতিকে যথার্থ ইঙ্গিত দিতে হবে। বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য অর্জন বহু অংশে নির্ভর করছে মুদ্রানীতির সঙ্গে বাজেটের সমন্বয়ের উপর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর বলেন, একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। এমন চ্যালেঞ্জিং সময় এর আগে ১৯৭১ সালে একবার এসেছিল। এখন আবার এমন একটি সময়ের মধ্য আমরা আছি। এই চ্যালেঞ্জে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ভূ-তাত্ত্বিক বাস্তবতা। এর কারণে সারা পৃথিবী এখন টালমাটাল অবস্থার মধ্যে আছে। এর মধ্যে আমাদের নিজস্ব যে অবস্থান, নিজের যে শক্তি, আমরা যে ধীরে ধীরে একটি শক্ত পাটাতনের উপর আমাদের অর্থনীতিকে দাঁড় করিয়েছি, এ সত্যি কথাটি জনগণকে বলতে হবে। শুধু ভালো কাজ করাই যথেষ্ট নয়, জনগণ যাতে মনে করে আমরা ভালো কাজ করছি।

তিনি আরও বলেন, এবারের বাজেটটি একটি আপদকালীন বাস্তবতার নিরীখে তৈরি করা হয়েছে। এটি একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বাজেট। শুধু ভূ-তাত্ত্বিক চ্যালেঞ্জ নয়, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে, অনেক সংকট তৈরি হয়েছে। সে সংকটগুলো মোকাবিলা করার জন্য কি বাজেট করা হয়েছে, সেটি আমাদের জানা উচিত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে সাফল্য অর্জন করেছে, তার পেছনে তিনটি খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। একটি হলো কৃষি, দুই, রপ্তানি, তিন, রেমিট্যান্স। এ তিনটি খাত আমাদের শক্তির উৎস। আমাদের অর্থনীতিকে শক্ত পাটাতনের উপর দাঁড় করাতে এ তিনটি খাত কাজ করেছে। গত দেড় দশকে আমরা যে অর্জন করেছি, তার পেছনে এ তিনটি খাতের ভূমিকা অনন্য। ২০০৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমাদের অর্থনীতির ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। এ সময়ে আমাদের কৃষি উৎপাদন চারগুণ বেড়েছে। বার্ষিক রপ্তানি বেড়েছে পাঁচগুণ এবং রেমিট্যান্স বেড়েছে ছয়গুণ।

আতিউর আরও বলেন, অর্থনৈতিক ও মানবিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের যে সাফল্য অর্জন হয়েছে, সে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা গেলে চলমান সংকটও অতিক্রম করা সম্ভব হবে। তবে তা করার জন্য আসন্ন বাজেটটি যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। বাজেট দেওয়াই যথেষ্ট নয়, এটিকে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বছরটি বাজেট বাস্তবায়নের জন্য কঠিনও। কারণ এটি নির্বাচনের বছর। এ বছরের শেষ তিন মাস নির্বাচনের ডামাডোলে উন্নয়ন বেশ খানিকটা ব্যাহত হবে। সেজন্য উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের জন্য এটি খুবই কঠিন বছর।

তিনি বলেন, অনেকে মনে করছেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটটি উচ্চাভিলাসী। এ বাজেট বাস্তবায়ন যোগ্য নয়। কিন্তু গত ১৫-১৬ বছরে আমরা যে শক্তি অর্জন করেছি, তাতে আমরা মনে করি না এ বাজেটটি উচ্চাভিলাসী। বরং আমি বলবো, বাজেটটি ভবিষ্যতমুখী। নির্বাচনের বছরেও কেউ সংস্কারমুখী, ভবিষ্যতমুখী বাজেট করতে পারে, সেটিও প্রশংসার দাবি করে।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, রপ্তানি ও কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হলে প্রযুক্তির প্রয়োজন। সে প্রযুক্তি আসবে শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে আসবে। এর জন্য দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন। যা আমাদের নেই। স্মার্ট বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দক্ষ জনশক্তি। এজন্য ডিজিটাল ক্লাসরুম করতে হবে। ডিজিটাল ক্লাসরুম না করলে ডিজিটাল বাংলাদেশ কীভাবে হবে? অনেক সময় দেখা যায় এসব খাতে বাজেটে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় সেটি ব্যবহার করা হয় না। এগুলোকে ব্যবহার করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান। এছাড়া উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান।

বাংলাদেশ: ২০০৩ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৩ 
এসসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।