ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

দেশে মোবাইল ফোনে বেতন পান পৌনে ১ কোটি কর্মী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১০ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২৩
দেশে মোবাইল ফোনে বেতন পান পৌনে ১ কোটি কর্মী

ঢাকা: শিল্প কারখানায় শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে মোবাইল ফাইন্যান্সিং (এমএফএস) গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে। চার বছরের ব্যবধানে এর মাধ্যমে বেতন দেওয়ার হার ৪ চার গুণ বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হাল নাগাদ প্রতিবেদনে এমন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল মাস শেষে মোবাইল ফাইন্যান্সিং বা এমএফএস ব্যবহার করে ৭৫ লাখ ২১ হাজার ৩৮ জনকে বেতন দেওয়া হয়েছে। এ সময় বিতরণ করা অর্থের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। যা চার বছর আগে ২০১৯ সালে ছিল ৮০০ কোটি টাকা। তখন এমএফএসের মাধ্যমে ১৫ লাখ ১১ হাজার ১৫৮ জনকে বেতন দেওয়া হয়েছিল।

বিশেষ করে শ্রমঘন শিল্পের শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে এমএফএস জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই ব্যবস্থা উৎপাদনশীলতার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখছে। হাতে হাতে বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। মাস শেষে বেতন দেওয়ার দিন কারখানাগুরোতে দিনের অর্ধেক চলে যেত বেতন দেওয়ার কাজে। এতে যেমন উৎপাদনের ক্ষতি হতো, কারখানার ফাইন্যান্স বিভাগে জনবল লাগতো দ্বিগুণ। আবার  শ্রমিক-কর্মচারীদের ভাংতি টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হতো, পুরো টাকা পেতো না। এতে একদিকে সময়ের অপচয় হতো, অন্যদিকে হাতে হাতে টাকা বহনে শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য ঝুঁকি তৈরি হতো।

এমএফএস ব্যবহার করে বেতন দেওয়ার ফলে এক মিনিটের মধ্যে টাকা চলে যাচ্ছে শ্রমিক/কর্মচারীদের মোবাইল ফোনে। তারপর যে কোন এটিএম বুধ বা পথের মোড়ের দোকান থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। প্রয়োজনে গ্রামে পরিজনের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে বা প্রয়োজনীয় খরচ করছে।

হিসাব খুলতে টাকা না লাগা, আর টাকা ওঠানোর ক্ষেত্রে কারখানা থেকে খরচের অর্ধেক দেওয়ার কারণে বাড়তি খরচ থেকে বাঁচছে শ্রমিক/কর্মচারীরা। এসব কারণে টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং শ্রমজীবী ও শিল্পরকারখানায় একটি জনপ্রিয় একটি মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।

এই বাড়তি সুবিধার কারণে প্রবাসীরা বিদেশে থেকে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন এমএফএস ব্যবহার করে। গ্যাস/বিদ্যুৎ/পানি বিলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে এমএফএস। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ এর এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন রকম ইউটিলি বিল পরিশোধ করা হয়েছে ১০১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ব্যবসা-বাণিজ্যে লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৫০৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তির টাকা বিতরণসহ বিভিন্ন রকম প্রণদনা বিতরণেও বড় মাধ্যম হিসেবে পরিণত হয়েছে এমএফএস।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল ফাইন্যান্সিংয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযাায়ী ১৪টি এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের তথ্য দেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মোবাইল ব্যাংকিং ১ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সে হিসাবে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের সঙ্গে দিনদিন বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা। বর্তমানে বিকাশ, রকেটের, ইউক্যাশ, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ নানা নামে ১৩টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ কোটি ৬ লাখ ৮৯ হাজার ২১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ গ্রাহক ১১ কোটি ৬০ লাখ ২৯ হাজার ৯২৫ জন, আর নারী গ্রাহক ৮ কোটি ৪১ লাখ ৪৬ হাজার ৩০২ জন।

এ সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৭৯১ জনে। এছাড়া ‘নগদ’-এ রয়েছে সাড়ে ৬ কোটির বেশি গ্রাহক। এ হিসাব যোগ করলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ছাড়াবে সাড়ে ২৬ কোটি। এর কারণ অনেক গ্রাহক একাধিক সিম ব্যবহার করছেন। লেনদেনের সুবিধার্থে একাধিক সিমে হিসাব খুলছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, ২০ জুন, ২০২৩
জেডএ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।