ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চামড়া কিনতে প্রস্তুত পোস্তা, ব্যবসা ভালো হবে আশা ব্যবসায়ীদের

গৌতম ঘোষ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫১ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২৩
চামড়া কিনতে প্রস্তুত পোস্তা, ব্যবসা ভালো হবে আশা ব্যবসায়ীদের

ঢাকা: উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। এ বছর কোরবানিযোগ্য মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি যা গতবছরের চেয়ে ৪ লাখ ১১ হাজার ৯৪৪টি বেশি।

তাই কোরবানির চামড়া সংরক্ষণে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে চামড়া কিনতে ও সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত ঢাকার লালবাগের পোস্তার আড়তগুলো।

সরকারও চামড়ার দাম বাড়িয়েছে। এবার লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দর প্রতি বর্গফুটে ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের পুঁজিরও সংকট নেই। তাই আগেভাগে অনেকেই লবণ কিনে মজুদ করেছেন। যাতে কোনো অবস্থায় যেন চামড়া নষ্ট না হয়, সেই প্রস্তুতিও নিচ্ছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। ঈদের দিন সকাল থেকেই চামড়া সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করবেন আড়তদারেরা। আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম বেড়েছে। ফলে গত দুই বছরের তুলনায় এবার ব্যবসা ভালো হবে বলে আশাবাদী তারা।

পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে প্রস্তুত এই এলাকার প্রায় ১১০টি আড়ত। তাদের পাশাপাশি পাইকারি ব্যবসায়ী ও ছোটোখাটো আড়তদাররা চামড়া সংরক্ষণের প্রস্তুতি নিয়েছেন। সে জন্য আগেভাগে অনেকেই লবণ কিনে রেখেছেন। সবাই নিজ নিজ আড়তের ঘরগুলো পরিষ্কার করে প্রস্তুত রেখেছেন। সারা বছরের চামড়ার প্রায় অর্ধেকই আসে কোরবানির ঈদের মৌসুমে। মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনেন তারা। ঈদের তৃতীয় দিন পর্যন্ত চলে চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কার্যক্রম। তাই এ সময়ের জন্য বাড়তি প্রস্তুতি রাখতে হয় তাদের।  

সাধারণত কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানোর ৪ থেকে ৯ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিয়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হয়। তা না হলে ওই চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। তাই এ বছর চামড়া সংরক্ষণের দিকেই বেশি নজর দিচ্ছেন আড়তদারেরা। তারা বলেন, চামড়া নষ্ট না হলে ভালো দাম পাওয়া সম্ভব। ফলে সব মিলিয়ে এ বছর চামড়ার বাজার গত কয়েক বছরের চেয়ে ভালো যাবে বলেই ধারণা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

পোস্তার ব্যবসায়ীরা জানান, এবারের চামড়ার বাজার ভালো যাবে। এ বছর অনেক পশুর কোরবানি হচ্ছে। তাই আগেই পর্যাপ্ত লবণও মজুত রাখা হয়েছে। এবার বৃষ্টির পাশাপাশি বেশ গরম পড়েছে। গরমের কারণে দ্রুত চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে, বৃষ্টি হলো চামড়ার ‘বিষ’। তারপরও আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে এবার চামড়ার ভালো ব্যবসা হবে।

এ বিষয়ে পোস্তার কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো.আফতাব খান বাংলানিউজকে বলেন, সবার প্রস্তুতি সম্পন্ন। এখন শুধু কেনার অপেক্ষা। ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত লবণ কিনেছেন। লবণের কারিগরও ঠিক করা হয়েছে। কোরবানির পর পোস্তায় চামড়া আসার পর সবাই চামড়া সংরক্ষণ করতে পারবে। তবে গরমের জন্য একটু সমস্যা হতে পারে। তাই কোরবানির ৫ থেকে ৭ ঘণ্টার মধ্যে যদি চামড়ায় লবণ দিতে না পারে তাহলে চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে।  

তিনি বলেন, এখন কোরবানির ৮০ ভাগ চামড়া ট্যানারি মালিকরা সরাসরি কিনে নেন। পোস্তায় আসে মাত্র ২০ ভাগ চামড়া। আমাদের কাছে লবণযুক্ত চামড়া আসে ২৭ থেকে ২৮ লাখ এবং ঈদের তিন দিন কাঁচা চামড়া আসে সাড়ে তিন লাখ। সব মিলিয়ে পোস্তায় ৩০ থেকে ৩১ লাখ চামড়া সংরক্ষণ করা হয়।

এ বছর লবণের দাম বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবছর আমাদের কাছে পর্যাপ্ত লবণ আছে। লবণের জন্য চামড়া নষ্ট হবে না। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর লবণের দাম বস্তাপ্রতি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা বেড়ে ১৩৫০ থেকে ১৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর কোরবানির সময় ৭৪ কেজির একটি লবণের বস্তার দাম ছিল ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকা। এতে করে আমাদের খরচ বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেবার খরচও।  

এবছরও ট্যানারি মালিকরা রানিং টাকা পরিশোধ করলেও পূর্বের বকেয়া পরিশোধ করেনি জানিয়ে আবতাব খান বলেন, কিছু কিছু ট্যানারি মালিক চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য খারাপ করেছেন। তারা পূর্বের সব টাকা পরিশোধ করেন নাই। ফলে কোন অঞ্চলে চামড়া কেনার টাকার সংকট হতে পারে। এছাড়া তেমন কোনো সমস্যা নেই।  

এ বিষয়ে চামড়া সংগ্রহে ট্যানারিগুলোর প্রস্তুতি সম্পর্কে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, যেসব ট্যানারি ব্যবসা করছে, তারা সবাই প্রস্তুতি নিয়েছে। চামড়ায় সঠিক সময়ে লবণ দিয়ে সংরক্ষণের জন্য সব মোকাম ও আড়তে লবণ সংগ্রহ করা আছে। পাশাপাশি চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আড়তদাররাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ইতোমধ্যে চামড়া কেনার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা আমরা তাদের দিয়েছি। সব মিলিয়ে আমরা মনে করি, গত দুই বছরের তুলনায় চলতি বছর চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয় ভালো হবে।

এদিকে ২০১৩ সালে ঢাকায় প্রতি বর্গফুটের দাম নির্ধারণ করে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, ঢাকার বাইরে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। সারাদেশে খাসির চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছিল। অন্যদিকে গতবছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৪৭ থেকে ৫২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা ছিল। আর খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এ বছর কোরবানির পশুর লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম গত বছরের চেয়ে ৩ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। ঢাকার বাইরের চামড়ার দাম ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আর খাসির চামড়ার দাম গতবারের মতোই রাখা হয়েছে। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫১ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২৩
জিসিজি/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।