নীলফামারী: গরু ও ছাগলের চামড়ার দাম নেই। নীলফামারীতে পানির দামে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির চামড়া।
অন্যদিকে, চামড়ার পানির দামের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এতিম, অসহায় ও গরিব মানুষ। জেলা শহরের বড় বাজার ট্র্যাফিক মোড়, চৌরঙ্গীর মোড়, আনন্দবাবুর পুল ও উকিলের মোড় ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
শহরের বাড়াইপাড়া মহল্লার মৌসুমি ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম জানান, গ্রাম ঘুরে প্রতিটি ৩০০-৩৫০ টাকা দরে ৩০ পিস গরুর চামড়া কিনে বাজারে পানির দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে তার মাথায় হাত পড়েছে। কপালে ভেসে উঠেছে চিন্তার ভাজ। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৫ হাজার টাকার চামড়া কিনে এখন বাজারে পাইকাররা দাম করছে অর্ধেকের একটু বেশি। চামড়া সংরক্ষণে একমাত্র উপকরণ লবণ। সেই লবণ দোকান থেকে চড়াদামে (২২ টাকা কেজি) কিনতে হচ্ছে।
জেলা শহরের ট্র্যাফিক মোড় বড় বাজারে ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে গরুর চামড়া। আর ছাগলের চামড়া প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। এতে বেশি মূল্যে চামড়া কিনে হাজার হাজার টাকা লোকসানে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার (৩০ জুন) সকালে ওই মোড়ে ছাগলের চামড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মতিলাল দাস জানান, গত বছর ছাগলের ১০০টি চামড়া কিনে পানির দামে বিক্রি করেছি। এবার সরকারি রেট ধরে চামড়া কিনে কী যে হবে, তা বলা মুশকিল। আড়তদাররা একচেটিয়া ব্যবসা করে। ফলে ফড়িয়া ও ছোট ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হয়। তারা যা বলে তাই আমাদের শুনতে হয়।
জেলায় ছোট বড় মিলে প্রায় ১৫-২০জন চামড়া (আড়তদার) ব্যবসায়ী তাদের পাওনা টাকা আদায় করতে না পারায় বর্তমানে তারা অর্থাভাবে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।
জেলা শহরের বাড়াইপাড়ার পাইকার ব্যবসায়ী তসলিম উদ্দিন জানান, গত বছরের ৭ লাখ টাকা মহাজনের ঘরে পড়ে আছে, দেওয়ার কোনো সম্ভবনা নাই। এ অবস্থায় লাভের আশায় ফের ধারদেনা করে চামড়া কিনতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোট ব্যবসায়ী ও ফড়িয়া দালালদের কাজ থেকে চামড়া কিনে বড় বড় ব্যবসায়ীরা ঢাকার বিভিন্ন ট্যানারিতে সরবরাহ করে থাকেন। কিন্তু এবারে আর্থিক সংকটের কারণে বড় বড় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ছোট ব্যবসায়ী, মৌসুমি ও পাইকার ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
নীলফামারী শিল্প ও বণিক (চেম্বার অব কমার্স) সমিতির সভাপতি প্রকৌশলী এসএম সফিকুল আলম ডাবলু বলেন, ছোট ব্যবসায়ীসহ চারবার হাতবদল হয় এই চামড়া। প্রথমে মৌসুমি ব্যবসায়ী গ্রাম ঘুরে কোরবানিদাতার কাজ থেকে চামড়া কিনেন। দ্বিতীয় ধাপে পাইকাররা নগদ টাকা দিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনেন। তৃতীয় ধাপে আড়তদাররা লবণ দিয়ে লাভের আশায় ঘরে কিছু দিন রাখেন। চতুর্থ ধাপে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর চামড়া গুলি ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। ফলে ট্যানারির মালিকদের লোকসান গুনতে হয় না। তবে শহর কিংবা গ্রামের পাড়া-মহল্লা ঘুরে চামড়া কিনে লোকসান গুনতে হয়, মৌসুমি ও পাইকার ব্যবসায়ীদের। এ কারণে ট্যানারির মালিকদের কাছে জিম্মি থাকেন মৌসুমি ও পাইকার ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২৩
এসআরএস