ঢাকা: দেশের সাধারণ মানুষ মনে করে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে সরকারের ব্যর্থতা মূল কারণ। সরকারের ব্যর্থতার কারণে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও করণীয়- শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে এমনটি বলেন ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান।
তিনি বলেন, সরকারের ধারণা, করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে বিশ্বজুড়ে সরবরাহ সংকট, বর্ধিত চাহিদা, জাহাজভাড়া বৃদ্ধি- ইত্যাদি কারণে পণ্যমূল্য বেড়েছে। আর সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, অর্থনীতিবিদদের অনেকে মনে করেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক, বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ নেওয়ার ফলে মুদ্রা সরবরাহ বেড়েছে, যা মুদ্রাস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যাহত হচ্ছে, সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হচ্ছে এবং মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে।
তবে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার পেছনে সাধারণ মানুষ এসব বক্তব্যে আস্থা রাখতে পারেনি উল্লেখ করে গোলাম রহমান বলেন, চাহিদা-সরবরাহের ফারাক, আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য অথবা মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি, কোনো ব্যাখ্যাই সাধারণ মানুষের কাছে প্রাসঙ্গিক নয়। তারা মূল্যবৃদ্ধিতে কষ্টে আছে। তাদের জীবনমানের অবক্ষয় হচ্ছে। তারা মনে করে, সরকারের ব্যর্থতার কারণে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে।
ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ভোক্তা সম্পর্কিত একটি বিভাগ রাখার পরামর্শ দিয়ে নানা করণীয় তুলে ধরে তিনি বলেন, জনজীবনে মুক্তবাজার অর্থনীতি অনুসরণের ফলাফল মূল্যায়ন করে এর উপযোগিতা পুনঃনির্ধারণ ও সংস্কারের সময় এসেছে। বাজারে প্রতিযোগিতা থাকলে কারসাজি করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, গুটিকতক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও কার্টেলের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সরকারকে খাদ্য বিভাগ, টিসিবির ন্যায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিত্যপণ্য সরবরাহ ও বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ, মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
গোলাম রহমান বলেন, সরকারের ব্যবসা থেকে দূরে থাকার নীতিতে জনস্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে না। ন্যায্য ও সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ, ভোক্তা-স্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়াদি তদারকি, সরকারের নীতি নির্ধারণে ভোক্তা-স্বার্থের প্রতিফল, ভোক্তা-স্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কার্যক্রমে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ভোক্তা সম্পর্কিত একটি বিভাগ সৃষ্টি সময়োপযোগী হবে বলে মনে করি।
ভোক্তার সাবেক ডিজি মো. আবুল হোসেন মিয়া বলেন, বাংলাদেশের জিনিসপত্রের দাম একবার বাড়লে আর কমতে চায় না। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ ভোক্তারা। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে। ভোক্তারা সচেতন হলে কখনো প্রতারিত হবেন না।
ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, সুদের হার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা তেমন একটা নেই। সুদের হারের এই নয়-ছয়ের কারণে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা করার সুযোগ করে দিয়েছে। দেশে এই সুদের হারের সুবিধা ১০ ভাগ লোক পায় আর বাকি ৯০ ভাগ মানুষ এর সুবিধা পায় না।
এ সময় ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া, ক্যাব ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম শামস এ খান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২৩
ইএসএস/আরএইচ