ঢাকা: বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং ডলারের বাজারে অস্থিরতার কারণে বছরের শুরুতে পুঁজিবাজারে আস্থা সংকট দেখা দেয়। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি নানামুখী পদক্ষেপে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে।
গত সপ্তাহজুড়ে সূচকের সঙ্গে লেনদেনেরও ছিল চাঙ্গাভাব। বিদায়ী সপ্তাহে (১৬-২০ জুলাই) পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪৭০ কোটি টাকা। এরমধ্যে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ৪৭৬ কোটি টাকা লেনদেন বাড়লেও এবং
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ৬ কোটি টাকা কমেছে।
গত সপ্তাহে প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৯৪৭ কোটি ৮ লাখ টাকা।
ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে ঈদ পরবর্তী লেনদেনের গতি বাড়ছে পুঁজিবাজারে। বৈশ্বিক মন্দার কারণে যে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছিল সেটা কাটতে শুরু করেছে।
বিনিয়োগকারীদের কিছুটা হলেও আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। তবে বিএসইসি শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস (দর পতনের সর্বনিম্ন সীমা) বেঁধে দেওয়ায় অনেক কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হচ্ছে না। ধীরে ধীরে এ সীমা তুলে নেওয়া হলেও বাজারের গতি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আতঙ্ক দেখা দেয়। এর কারণে অনেকেই বাজার থেকে বের হতে চেয়েছিলেন এতে করে বাজারে কিছুটা নেতিবাচক হয়। তবে সরকার সংকট কাটিয়ে উঠার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরতে শুরু করেছে।
ফ্লোর প্রাইসের কারণে অনেকের বিনিয়োগ আটকে গেছে, তারা আর কেনা-বেচা করতে পারছেন না। অনেক ভালো কোম্পানি ফ্লোরে আটকে আছে, তাই আমরা আশা করি বিএসইসি যদি ধীরে ধীরে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় বাজারে গতি আরো বাড়বে এবং বাজার স্থিতিশীল হবে বলে তিনি মনে করেন।
বাজারে বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তা ও আস্থা ফেরাতে কাজ করছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসি। বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরলে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হবে বলেও বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবায়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, আমরা সব দিক থেকেই দেওয়াল দিয়ে একটি স্থিতিশীল শেয়ারবাজার তৈরি করার চেষ্টা করছি। শেয়ারবাজারে সরকারি বন্ডগুলোর লেনদেন শুরু হলে লেনদেন হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে আরও অনেক বেশি হবে বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, আমাদের মার্কেটে যে আস্থা সংকট কাজ করছে। সেখান থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে পাবে সেটা নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি আমাদের চেষ্টার সফলতা পাব।
অন্যদিকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৪ হাজার ৭৩৫ কোটি ৪১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৪ হাজার ২৫৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৪৭৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা বা ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৪ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৬৫.৬১ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩.৭৬ পয়েন্ট বা ০.২৭ শতাংশ বেড়ে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ০ দশমিক ২৪ পয়েন্ট বা ০.০১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৮৩.১৮ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ১৯৬.৭৯ পয়েন্টে।
বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকায়। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন দুই হাজার ৬০২ কোটি টাকা বেড়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৪০৩টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১১৮টির, কমেছে ২৩টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯৭টির শেয়ার ও ইউনিট দর এবং ৯ কোম্পানির শেয়ারের কোনো লেনদেন হয়নি।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৮০ কোটি ১৩ লাখ টাকার। আগের সপ্তাহের চেয়ে ৬ কোটি টাকার লেনদেন কমেছে। আগের সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৭ পয়েন্ট বা ০.২৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৭৭৮ পয়েন্টে।
সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩১৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯৯টির দর বেড়েছে, ৭৮টির কমেছে এবং ১৩৮টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৪ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২৩
এসএমএকে/এএটি