ঢাকা: ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান বলেছেন, সিএমএসএফ পুঁজিবাজারের জন্য অত্যন্ত জরুরি একটি উদ্ভাবন। এর আকার এক হাজার ২৭০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
রোববার (৩০ জুলাই) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর পল্টনে সিএমজেএফ কার্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি জিয়াউর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।
নজিবুর রহমান বলেন, সিএমএসএফ পুঁজিবাজারের জন্য অত্যন্ত জরুরি একটি উদ্ভাবন। এতদিন নানা কারণে অনেক বিনিয়োগকারীর প্রাপ্য লভ্যাংশ এবং বোনাস ও রাইট শেয়ার আটকে ছিল। সিএমএসএফ গঠিত হওয়ায় তাদের এ টাকা বুঝে পাওয়ার সহজ সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সিএমএসএফ এর তহবিলের আকার বাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। যেসব কোম্পানি গত ৩০ জুনের মধ্যে অবণ্টিত লভ্যাংশ ও শেয়ার এ ফান্ডে স্থানান্তর করেনি, তাদের দুই শতাংশ হারে সার চার্জ দিতে হবে। এছাড়া আগামীতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ বিতরণের দায়িত্বও সিএমএসএফের ওপর অর্পণ করার পরিকল্পনা করছে বিএসইসি। তাতে সার্ভিস চার্জ বাবদও এ প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়বে।
নজিবুর রহমান বলেন, সিএমএসএফের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ১১৭০ জন বিনিয়োগকারীকে তাদের প্রাপ্য লভ্যাংশের টাকা ও শেয়ার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নগদ অর্থ পেয়েছেন প্রায় ৮০০ জন এবং শেয়ার পেয়েছেন ৩৭০ জন বিনিয়োগকারী।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলকরণ ও বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে এ ফান্ডটি গঠিত হয়। এ ফান্ড থেকে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার জন্য আইসিবির মাধ্যমে ২৭৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারের যে সম্ভাবনা রয়েছে তা, এখন সফল না হলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ আজ খারাপ কাল তো খারাপ নাও থাকতে পারে। আগামী দিনের সুন্দর পুঁজিবাজারের জন্যই আমরা সবাই কাজ করছি, হয়তো তার জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে। আমরা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের উন্নয়নে ইটিএফ চালু করতে কাজ করছি। ইতোমধ্যে আমাদের কাছে তিনটি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাবনা নিয়ে এসেছে। আমরা আলোচনা করে এটি চালু করতে কাজ করছি। পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সাংবাদিকতার উন্নয়নে সিএমজেএফের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সেরা রিপোর্টারদের অ্যাওয়ার্ড দেবে সিএমএসএফ।
তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের আরও ভালো সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে সিএমএসএফ একটি আধুনিক সফটওয়্যার তৈরি করছে।
ব্যাংক কোম্পানির অবণ্টিত লভ্যাংশ সিএমএসএফে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক আপত্তি তুলেছিল। বিষয়টি এখন কি পর্যায়ে আছে? সাংবাদিকদের এমন আর এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এ মুখ্য সচিব বলেন, আমি সচিব মহোদয়কে চিঠি দিয়েছিলাম, আপনার মন্ত্রণালয়ের এ প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আছে। তাদের কাছে সিএমএসএফ’র এ টাকাগুলো বা শেয়ারগুলো আছে ফেরত দেন। তার পরেই তারা কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা দেন। কোম্পানিগুলো সরাসরি এসে প্রত্যেকেই সেই শেয়ার ও টাকা ফেরত দেন।
তিনি বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তার প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলেছে- সিএমএসএফ’র রুলস ও নিয়মানুযায়ী তাদের হাতে শেয়ার এবং ক্যাশ দেন। রূপালী ব্যাংক এবং আইসিবিকে তারা নির্দেশ দেন। এটা হচ্ছে সিএমএসএফ’র কার্যকারিতা এবং বাস্তবতার প্রতি সরকারের সমর্থন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক একটা অবস্থান নিয়ে ছিল, এটা আমরা সবাই জানি। বাংলাদেশ ব্যাংক মানি মার্কেটের রেগুলেটর এবং বিএসইসি ক্যাপিটাল মার্কেটের রেগুলেটর। তারা এ বিষয়ে নিরন্তর আলাপ-আলোচনা করছে। আমার ধারণা দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভালো অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কনসার্ন (সচেতন) ছিল যেন আমানতকারীদের কোনো ফান্ড এদিকে না আসে এবং বিএসইসির কনসার্ন ছিল বিনিয়োগকারীদের কোনো ফান্ড যাতে ঝুলন্ত অবস্থায় না থাকে। বিষয়টি নিয়ে অগ্রগতি হচ্ছে।
নজিবুর রহমান বলেন, সিএমএসএফ’র বর্তমান যে আইনি কাঠামো আছে, তার আলোকে আমরা কাজ করছি। সেই কাজে কেউ বাধা দিচ্ছে না। সবাই বলছেন- এ ফান্ডটা খুবই দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএসইসির মধ্যে নিয়মিতভাবে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, পুরো পুঁজিবাজারের মঙ্গলের জন্য। নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর তার যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তার দ্বারা আমরা অনুপ্রাণিত হচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২৩
এসএমএকে/আরআইএস