ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘পোশাকশ্রমিক না খেয়ে মরে, মজুরি বোর্ড কী করে?’

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২৩
‘পোশাকশ্রমিক না খেয়ে মরে, মজুরি বোর্ড কী করে?’

সাভার (ঢাকা): ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা মজুরি, ৬৫ শতাংশ বেসিক, ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট এবং ৫ গ্রেডে বেতনের দাবিতে সাভারের রানা প্লাজার সামনে বিক্ষোভ ও মিছিল করেছেন পোশাকশ্রমিকেরা।

শুক্রবার (১১ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩ টায় গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি রানা প্লাজা শাখার উদ্যোগে এ বিক্ষোভ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে ‘বাজারে আগুন! পোশাকশ্রমিক না খেয়ে মরে, মজুরি বোর্ড কী করে?’ - প্রশ্ন তোলা হয়।  
বিক্ষোভ শেষে একটি মিছিল সাভার রানা প্লাজা অঞ্চলে প্রদক্ষিণ করে।

রানা প্লাজার সংগঠক নিহত আঁখি মা নাছিমা আক্তারের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অঞ্জন দাস, কেন্দ্রীয়  সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াদুল ইসলাম, রানা প্লাজার সংগঠক রূপালী আক্তার, মো. খোরশেদ, কেন্দ্রীয় সদস্য শামীম আহমেদ ও প্রমুখ।

বক্তারা ক্ষোভ ও হতাশার সুরে বলেন, শ্রমিক আন্দোলনের চাপে মজুরি বোর্ড গঠিত হলেও গতকাল (১০ আগস্ট) পর্যন্ত মাত্র দুটি বৈঠক হয়েছে। প্রথম বৈঠকে কথা দিয়েও ২য় বৈঠকে কোনো মজুরি প্রস্তাব করেনি মালিকপক্ষ বা সরকার, যা নিন্দনীয়।  

নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ৫ বছর বাজারে যে লাগামছাড়া পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তাতে রপ্তানিখাতের কারিগরদের পরিবার পরিজন নিয়ে ৩ বেলা খেয়ে বেঁচে থাকাই দুষ্কর। অথচ মজুরি বোর্ড বাজারের এই আগুন দশার মাঝেও শ্রমিকদের ঘরের চুলায় আগুন জ্বালাবার ব্যবস্থা করেছে না।  

বেতন-মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের (মালিক) এই বিলম্ব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।  

পোশাকশ্রমিক নেতারা বলেন, অবিলম্বে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির ২৫ হাজার টাকার প্রস্তাবনা বিবেচনায় নিয়ে অক্টোবরের মধ্যেই নতুন মজুরি কার্যকর করতে হবে। কোনোভাবেই নির্বাচন-রাজনীতির বেড়াজালে শ্রমিকদের (মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি) আটকানো আমরা মেনে নেব না।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, শ্রমিকরা বর্তমান বাজারের বেহাল দশায়-পুষ্টিহীন অবস্থায় জীবনযাপন করছে। অথচ নতুন মজুরি প্রস্তাব না করে নতুন করে সময় নেওয়া এবং বোর্ড সদস্যদের বিদেশ ভ্রমণের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ নিছক পরিহাস ছাড়া আর কিছুই না। বিদেশ সফর না করে দেশেই শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের কাজ করা সম্ভব।

তারা আরও বলেন, মজুরি বৃদ্ধির কথা এলেই অভাব-অভিযোগ, সামর্থ্যের ঘাটতি ইত্যাদি কথা মালিকদের মুখে শোনা যায়। যা এবারও মজুরি বোর্ডেও তুলেছেন তারা। কিন্তু বাস্তবতা একবারেই ভিন্ন। বাংলাদেশ এখন ২য় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রচলিত-অপ্রচলিত উভয় বাজারে মোট পোশাক রপ্তানি ১০ শতাংশ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রপ্তানি ৩১ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানির হার পৌঁছেছে ৪৬৯৯ কোটি ডলারে। এই খাতে নতুন- নতুন বাজার, ১০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা, বিশ্বের নিরাপদতম সবুজ কারখানার স্বীকৃতি ইত্যাদি অগ্রগতির উল্লেখযোগ্য দিক। কিন্তু এইখাত বিশ্ববাজারে এতো সুনাম কুড়ালেও দেশের শ্রমিকেরা বিশ্বের সবচেয়ে কম মজুরিতে কাজ করেন।  

পোশাকশ্রমিক নেতারা বলেন, সরকারি ও মালিকদের তথ্য অনুযায়ী, শ্রমিকদের ২৫ হাজার টাকা না দিতে পারার কোনো কারণ নেই। মালিকদের সেই সামর্থ্য তৈরি হয়েছে। মালিক এবং দেশের সামর্থ্য বিচার করেই ২৫ হাজারের প্রস্তাব করা হয়েছে।  

তাই অবিলম্বে শ্রমিকদের মজুরি ২৫ হাজার টাকা প্রস্তাব বিবেচনায় আনার জন্য মজুরি বোর্ডকে আহ্বান জানান তারা।

নেতৃবৃন্দ যোগ করেন,  মজুরি বোর্ডের কাঠামোও শ্রমিকদের বঞ্চনার কারণে পরিণত হয়েছে। কৌশলে মজুরি কাঠামো এমন রাখা হয়েছে যাতে শ্রমিকের ক্ষতি হয়, লাভ হয় মালিকের। যার নজির বিগত সময়ের বেসিকের হার নির্ধারণের মধ্যে পরিষ্কার। ২০০৬ থেকে মজুরিতে বেসিকের হার কমানো হচ্ছে। ২০১৮ বেসিকের পরিমাণ কমতে কমতে ৫১ শতাংশে ঠেকেছে। এই বেসিক কখনোই গ্রহণযোগ্য না।

 

তারা বলেন,  মজুরির হার কমালে শ্রমিককে ওভার টাইম, গ্র্যাচুইটি, মাতৃত্বকালীন সুবিধাসহ অন্যান্য সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। এবার মজুরি কাঠামোতে মোট ২৫ হাজার টাকা মজুরিসহ ৬৫ শতাংশ বেসিক করার আহ্বান জানান তারা। একইসঙ্গে ৫ গ্রেড করা এবং শিক্ষানবিশ গ্রেড বাতিল করার আহ্বান জানানো হয়।

ইপিজেড এবং ইপিজেডের বাইরের কারখানাগুলোতে ইনক্রিমেন্ট বৈষম্য জারি আছে বলে দাবি করেন গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির নেতারা।

তারা বলেন, এ বৈষম্য দূর করে সব কারখানায় ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট করার আহ্বান জানাই।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।