ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মুদ্রাস্ফীতি থাকলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না: বাণিজ্যমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২৩
মুদ্রাস্ফীতি থাকলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না: বাণিজ্যমন্ত্রী বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি

ঢাকা: দামের ওপর মূল্যস্ফীতির একটা বড় প্রভাব বিস্তার করে। ফলে মুদ্রাস্ফীতি থাকলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

 

তিনি বলেন, দেশি পণ্যের দাম বৃষ্টি, পরিবহন ও পথে পথে চাঁদাবাজির কারণে দাম বাড়ছে। তবে আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পেঁয়াজ-আলুর দাম কমে যাবে।

বুধবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি মনিটরিং ও রিভিউ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

আমাদের দেশীয় পণ্যের দাম বাড়ে কেন, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সবজির দাম বাড়ছে কখনো। এছাড়া, বৃষ্টি, পরিবহন ও পথে পথে চাঁদাবাজির কারণে দাম বাড়ছে। তবে গত দুদিন ধরে ২০-২৫ টাকা করে সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। আর পাঁচ-সাতদিনের মধ্যে শীতের সবজির দাম কমে যাবে।

তিনি বলেন, যখন মুদ্রাস্ফীতি থাকে, তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। দামের ওপর মূল্যস্ফীতির একটা বড় প্রভাব বিস্তার করে। এখন প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশের ওপরে মূল্যস্ফীতি। সেটার সমাধান করতে না পারলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিংবা অন্য কেউ খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। তবে পেঁয়াজ-আলু আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কমে পাওয়া শুরু করবেন। নিজেদের উৎপাদনটা তখন শুরু হয়ে যাবে।

সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ার পর আপনারা আমদানির সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বাজার মনিটরিং করার কারণে আগে থেকেই তো জানেন, তাহলে সিদ্ধান্তটা আগে নেন না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আপনি সাংবাদিক, যথেষ্ট বুদ্ধিমান। যেমন ধরেন, আলু আমদানি করতে হলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। আমরা যে দুই মাস আগে আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছি, তখন তাদের অনুমতি নিয়েছি। তারাও এটা চিন্তা করে। একইভাবে ডিমের জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। যদি পেছনের সমর্থন না পাই, তাহলে আমরা অনেক সময় করতে পারি না। সংকট যখন প্রকট হয়ে যায়, তখন তারা মেনে নেন, কিন্তু তখন আবার অনেক দেরি হয়ে যায়।

আলু ও ডিমে ছাড়াও সারাবছর বাজারে অস্বস্তিই থেকে যাচ্ছে, প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরবরাহ যদি ভালো থাকে, তাহলে সমস্যা হয় না। আবার আলু যদি অতিরিক্ত থেকে যায়, তখন প্রশ্ন করা হয়, কৃষকরা আলুর দাম পাচ্ছেন না, আপনি কী ব্যবস্থা করেছেন? দুইভাবেই সমস্যা। উৎপাদন যাতে বাড়ে, সেই প্রচারটা করেন।

সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে মানুষের জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে কোনো সুখবর আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটা হলো আমাদের দেশের উৎপাদন, আরেকটি আমদানি করে আনা হয়। বিভিন্ন জিনিসের বিভিন্ন রকম অবস্থা। পেঁয়াজের দাম কবে কমবে? এটা আমরা সবাই বুঝি যে যখন নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠবে, কৃষক যখন ফসল ঘরে তুলবে। হয়ত আগামী মাসে মুড়িকাটা পেঁয়াজটা বাজারে উঠবে, তখন হয়ত পেঁয়াজের দাম কমবে। আবার আলু যেমন ডিসেম্বরের শেষের দিকে বাজারে উঠতে শুরু করবে, তখন দাম কমবে। এখন এটা গেল নিজেদের উৎপাদনের বিষয়। আবার যখন আমরা তেল ও চিনির কথা বলি, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে কী দাম আছে, সেটার ওপর নির্ভর করে। প্রেক্ষাপট অনুযায়ী দাম বাড়বে বা কমবে। পেঁয়াজের কথা বলি, আমাদের যা প্রয়োজন, তার চেয়ে ২০ শতাংশ ঘাটতি আছে। এটা আমরা আমাদানি করে পূরণ করি, যার ৯০ শতাংশই আসে ভারত থেকে। সেখানেও দাম বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, এ মুহূর্তে ভারতীয় বাজারে ৮০ রুপি প্রতি কেজি পেঁয়াজ, যা আমাদের টাকায় ১০৫ বা ১১০ টাকা করে। গতকাল দেখলাম, ওরা ২৫ রুপি ভর্তুকি দরে মানুষকে দিতে শুরু করেছে। আমাদের পেঁয়াজ প্রায় শেষ। যে কারণে পেঁয়াজের দামটা অনেকখানি নির্ভর করে আমাদের নিজস্ব উৎপাদন ওঠার ওপরে। পাশাপাশি, পেঁয়াজের ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ভারত ৮০০ ডলার। যেটা আমাদের টাকায় প্রতি কেজি প্রায় ৯৫ টাকা পড়ে। সেটার নিচে ওরা রপ্তানি করতে পারবে না। ওই টাকায় আমরা আমদানি করলে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১২০ কিংবা ১২৫ টাকা পড়ে যাবে। এখন আমাদের নিজেদের উৎপাদনের ওপর নির্ভর করতে হবে।

টিপু মুনশি বলেন, একইভাবে আলু আমাদের যা আছে কোল্ড স্টোরেজগুলোতে, তা প্রয়োজন অনুসারে ভীষণ টাইট অবস্থা। আশা করি, ডিসেম্বরের শেষের দিকে আলু উঠতে শুরু করবে। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে একটা আগাম আলু আসে উত্তরাঞ্চল থেকে, সেটা এলে দাম কিছুটা কমবে। আমদানিও শুরু হয়েছে, বাজারে সেটার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

মন্ত্রী বলেন, আশা করি, আমদানিটা ভালোভাবে এলে দাম কিছুটা সাশ্রয় হবে। ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি, বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে কিছুটা সময় লেগেছে। এরই মধ্যে প্রথম একটা চালান ঢুকে গেছে। বাজারে তার প্রভাব বাজারে দেখছি, সেই ডিমটা এগারো কিংবা সাড়ে এগারো টাকায় পাওয়া যায়। আশা করি, আরও ঢুকলে ডিমের যে দামটা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, সেটায় পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮,২০২৩
জিসিজি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।