ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাণিজ্য হুমকিতে পড়ে এমন ব্যবস্থা না নেওয়ার অনুরোধ বিজিএমইএর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৩
বাণিজ্য হুমকিতে পড়ে এমন ব্যবস্থা না নেওয়ার অনুরোধ বিজিএমইএর

ঢাকা: যেসব দেশ শ্রমিকের অধিকার ক্ষুণ্ন করবে, সেসব দেশে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

রোববার ‘সাসটেইনেবিলিটি এবং শ্রমিকদের কল্যাণ’ শীর্ষক এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

বিবৃতিতে সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ফারুক হাসান বলেছেন, আমরা বিশ্ব সম্প্রদায়কে এই সত্যটি বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করব যে, কেবল গতানুগতিক পপুলিস্ট দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে শিল্পকে বিচার করা উচিত হবে না এবং বাণিজ্যকে হুমকির মধ্যে ফেলে দেয়, এমন ব্যবস্থা নেওয়াও উচিত হবে না। কারণ এটি শেষ পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষের জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়।

ফারুক হাসান বলেন, আমরা অবশ্যই যেকোনো বৈশ্বিক উদ্যোগের প্রশংসা করি, যা আমাদের ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে এবং আমরা সেই দিকের যেকোনো পরিবর্তন মেনে নিতে প্রস্তুত।  

বিজিএমইএ সভাপতি সংগঠনের সব সদস্য গার্মেন্টস মালিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের সবার কাছে শ্রমিক, কমিউনিটি এবং পরিবেশের প্রতি আরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের বলা হয়েছে বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে, তা নয়, বরং আমাদের নিজেদের সমৃদ্ধির জন্য আমাদের আরও বেশি করে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।  

ফারুক হাসান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের শিল্পে ন্যূনতম মজুরি ইস্যুতে সংঘটিত শ্রম অসন্তোষ আবারও বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দুঃখজনক হলো-শ্রমিকদের প্রতি আমাদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা গ্রহণ ও অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের কল্যাণে আইন বহির্ভূত ইতিবাচক বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ  এবং ২০১০ সাল থেকে ন্যূনতম মজুরি ছয় গুণেরও বেশি বৃদ্ধি করার পরও অবৈধ ধর্মঘট ও বিক্ষোভ এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যার পেছনে কোনো যুক্তি নেই। ঘটনাগুলো কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। যদিও আমরা সবসময় দায়িত্বশীল ব্যবসার জন্য এবং ভ্যালু চেইনে ন্যায্য ও ন্যায়সংগত অংশের জন্য অনুরোধ করে আসছি, তারপরও শিল্পে এই ধরনের হিংসাত্মক কার্যকলাপের প্রভাব হোক সেটি ব্যবসা কিংবা সম্পত্তির ক্ষতি, হোক সেটি শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন বা অন্যায্য শ্রম অনুশীলনের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক চাপ-এসব কিছুই কিন্তু শিল্পে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।  

গার্মেন্টস শিল্প মালিকদের উদ্দেশে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আপনারা অবশ্যই জানেন যে ইউরোপীয় কমিশন বাংলাদেশের শ্রমের মান নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ১২-১৬ নভেম্বর ২০২৩ সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ দলটি বাংলাদেশ সফর করেছে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ সরকার একটি শ্রম পথনকশা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং বাস্তবায়নের জন্য সব প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে আইএলওসহ বহুপক্ষীয় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বয় ও পরামর্শে শ্রম আইন ও বিধিমালার সংশোধন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে; আমাদের প্রধান বাণিজ্য অংশীদাররা এই বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করছে।  

বিবৃতিতে ফারুক হাসান আরও বলেন, ২০১৩  সালের জুলাইয়ে গ্লোবাল সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট ঘোষণা করা হয়েছিল, যা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা উন্নত করার পাশাপাশি ভ্যালু চেইনে দায়িত্বশীল ব্যবসার অনুশীলনের জন্য ইউরোপীয় কমিশন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং বাংলাদেশকে একত্রিত করেছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই যৌথ কমপ্যাক্ট ঘোষণার একটি পক্ষ ছিল, তবে দেশটি ২০১৩ সালে বাংলাদেশের জন্য জিএসপি স্থগিত করে এবং জিএসপি পুনর্বহালের জন্য একটি ১৬-দফা কর্মপরিকল্পনা উত্থাপন করে। যদিও এখন পর্যন্ত সে কর্মপরিকল্পনার বেশিরভাগ শর্তই পূরণ করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক উন্নয়নের পর্যায়ে রয়েছে। তারপরও বাস্তবতা হলো-এখনও পর্যন্ত জিএসপি সুবিধা স্থগিত রয়েছে। অধিকন্তু, গত ১৬ নভেম্বর ইউএস প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডাম ‘কর্মীর ক্ষমতায়ন, অধিকার এবং বিশ্বব্যাপী চলমান লেবার ক্যাম্পেইনের সঙ্গে উচ্চ শ্রমমান জুড়ে দিয়ে স্বাক্ষর করেছে, যা এনগেজমেন্ট এবং প্রয়োগের দিক থেকে বেশ স্বতন্ত্র বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে।

বিজিএমইএ সভাপতি গার্মেন্টস মালিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা জানেন যে আমরা কতখানি দ্রুততার সঙ্গে আমাদের শিল্পকে পরিচ্ছন্ন এবং সবুজ শিল্প হিসেবে রূপান্তরিত করেছি। বাংলাদেশে ২০৩টি লিড প্রত্যয়িত পোশাক কারখানা রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে ৭৩টি  প্লাটিনাম রেটেড। বিশ্বের শীর্ষ ১৫টি লিড প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩টি বাংলাদেশে রয়েছে। আমরা টেকসই কৌশলগত রূপকল্প ২০৩০ গ্রহণ করেছি। রূপকল্পটির লক্ষ্য হলো-৩০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমানো, টেকসই কাঁচামালের ৫০ শতাংশ ব্যবহার নিশ্চিত করা, ৫০ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার হ্রাস, জেডডিএইচসি রাসায়নিকের ১০০ শতাংশ ব্যবহার, জ্বালানি ব্যবহার ৩০ শতাংশ হ্রাস, ২০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার এবং বন উজাড় করণের ৩০ শতাংশ হ্রাস, ১০০ শতাংশ অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং শোভন কাজ, জেন্ডার সমতা, কর্মীদের সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ এবং সুশাসন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৩
এমকে/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।