ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আয়কর সেবাকেন্দ্রে সেবাগ্রহীতা বাড়লেও সেবাদাতা অপ্রতুল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৩
আয়কর সেবাকেন্দ্রে সেবাগ্রহীতা বাড়লেও সেবাদাতা অপ্রতুল

ঢাকা: আয়কর রিটার্ন ভীতির কারণে অনেকে রিটার্ন দেয় না। কিন্তু নির্দিষ্ট সেবা নিতে হলে আয়কর রিটার্ন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আর আয়কর সেবা মাসে রিটার্ন তৈরি সহযোগিতা সে ভীতি দূর করছে।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচার বিভিন্ন কর জোনে অনুষ্ঠিত কর সেবা অঞ্চল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

রাজধানীতে পুরান জাতীয় রাজস্ব ভবনে সেবা তাবুতে দেখা যায়, তথ্য কেন্দ্রসহ আশেপাশের একাধিক টেবিলে তরুণ-তরুণী নির্বিশেষে লাইন ধরে বসে আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ করছে। পাশে নির্দিষ্ট আয়কর রিটার্ন জমা নেওয়ার বুথে লাইন ধরে জমা নেওয়া হচ্ছে। আয়কর মাসের শেষ হয়ে আসার প্রেক্ষাপটে মাসের আগের দিনগুলোতে মেলাতে মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে। সেই সঙ্গে দ্রুত জমা না দিতে পারার কারণে আয়কর রিটার্ন দাতাদের অসন্তোষও বেড়েছে।

তরুণ আয়কর রিটার্ন দাতা বিণয় কৃষ্ণ সমাদ্দার আয়কর সেবা তথ্য সেবা কেন্দ্রে বসে আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ করছেন। তার সঙ্গে আরও চারজন ফরম ফিলাপ পূরণ করছে। ফরম পূরণ করার সময় কোনো সমস্যায় পড়লে যাতে সহজে সহযোগিতা নিতে পারেন এ জন্য তথ্য কেন্দ্রে বসেই তারা আয়কর রিটার্ন পূরণ করছে।

বিনয় কৃষ্ণ সমাদ্দার জানান, আগের বছরও ফরম পূরণ করেছি। তারপরও সেবাদাতাদের কাছে বসে ফরম পূরণ করছি যাতে কাজটি নির্ভুল হয়। পাশে কর অঞ্চল-৪ এর একজন কর্মচারী কেরামত আলী জানান, সব নিজেরাই পূরণ করছে। যেখানে হিসাবের ব্যাপারে আছে সেখানে আমরা বলে দিচ্ছি। নভেম্বর মাসের শুরুর দিকে কম লোক থাকে, শেষের দিকে এসে এ রকম ভিড় তৈরি হয়। সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়।

পাশে বসা দুইজন পুলিশ সদস্য নিজেরাই ফরম পূরণ করছে। কেরামত আলী জানান, বেতন নেওয়ার ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্নের প্রয়োজন। তাই তারা নিজেরাই পূরণ করছে। আমরা সামনে বসে সহযোগিতা করছি।

সেগুন বাগিচার অন্য একটি সেবা কেন্দ্রে টেবিলে বসে সেবা নিচ্ছে কয়েকজন নারী আয়কর রিটার্ন দাতা। নিজেরাই আয় কর ফরম পূরণ করছে। ফরম পূরণে মাঝে মাঝে সমস্যা দেখা দিলে উঠে গিয়ে অন্য টেবিল থেকে ফরম পূরণে সহযোগিতা নিয়ে আসছে।

ইসমত আরা একজন চাকরিজীবী। তিনি টেবিলে বসে আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ করছেন। তিনি জানান, এই টেবিলে আটজন নারী বসে ফরম পূরণ করছি, এখানে  কর অফিসের একজন সাহায্যকারী থাকলে ভালো হতো, যে ফরম পূরণে সহযোগিতা করবে। কিন্তু কেউ নেই। শেষের দিকে মানুষ বাড়ে- বিষয়টি মাথায় রাখার দরকার ছিল কর অফিসের।

কর অঞ্চলগুলোতে অনুষ্ঠিত একাধিক সেবা কেন্দ্রের করদাতা সেবা মাসের সেবার মান নিয়ে কথা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখালেও আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে ভীতি দূর হয়েছে বলে জানান।

আয়কর সেবার মাসের শেষের দিকে বরাবরের মতো এবারও সেবা কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে যে হারে আয়কর রিটার্ন দাতার সংখ্যা বেড়েছে, সে হারে সহায়তাকারী বাড়েনি। ফলে লম্বা লাইন হচ্ছে সেবা প্রার্থীদের। এতে ভোগান্তির তৈরি হচ্ছে। রিটার্ন ফরম জমা দেওয়ার সময় অনেক ফাইল এক সঙ্গে জমা হওয়ায় আয়কর সেবা দাতারা ক্ষেত্রে বিশেষে বিরক্ত হচ্ছে, তৈরি হচ্ছে রাজস্ব কর্মচারীদের পূরণে ভীতিকর মনোভঙ্গি। এ সময় করদাতাদের নানা রকম নেতিবাচক মন্তব্য করতে শোনা গেছে।

বিষয়টি নিয়ে কর অঞ্চলের কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।

করোনা মহামারির আগে বড় পরিসরে মেলার অবয়বে নভেম্বর মাসে আয়কর রিটার্ন জমা নেওয়া হতো। করোনা মহামারির পর আয়কর অঞ্চলগুলোতে স্ব স্ব আয়কর দাতারা কর সেবা মাসে আয়কর রিটার্ন জমা দিচ্ছে। তবে মেলার মতোই আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ, টিআইএন বিতরণ ও এ সম্পর্কিত যাবতীয় সেবা দেওয়া শুরু হয়েছে। গতবারের মতো এ বছর ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের ৩১টি কর অঞ্চলের ৬৪৯টি সার্কেলে করসেবা দিচ্ছে কর্মকর্তারা।

এ বছরও ১ নভেম্বর মেলা শুরু হয়ে আগামী ৩০ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা। তবে এরই মধ্য এফবিসিসিআই এর পক্ষ থেকে সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সময় বাড়তেও পারে।

হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান দেশে টিআইএন ধারীর সংখ্যা প্রায় ৯০ লাখ। এর মধ্যে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ছিল ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৬২৫টি। তার আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ছিল ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৬২৫টি। এ বছর ৩০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৩
জেডএ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।