ঢাকা: সরবরাহের ঘাটতি ও অসময়ে বৃষ্টির অজুহাতে রাজধানীর বাজারগুলোতে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের আলু ও পেঁয়াজ।
সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করে দিলেও তার থেকে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এই সবজি।
ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে এই দুই পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন সাধারণ ক্রেতারা।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর কারওয়ার বাজারের পাইকারি ও খুচরা আলু-পেঁয়াজের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি বিক্রমপুরের আলু ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৪-৪৫ টাকা। গত সপ্তাহে ৪৮ টাকা করে বিক্রি করা রাজশাহীর আলু (ডায়মন্ড) আজকে বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা করে। এছাড়া গত সপ্তাহে ৪৬ টাকা করে বিক্রি করা কাটিলাল আলু এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৪ টাকা দরে।
পাইকারি বাজারে পুরান আলু এ দামে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে এর দাম আরো বেশি।
এদিকে শীতকালে এসব পুরান আলুর তুলনায় নতুন আলু চাহিদা থাকে বেশি। তবে এবার এখনো নতুন আলু সেভাবে না উঠায় দাম অনেক বেশি। গত সপ্তাহের তুলনায় খুচরা বাজারে নতুন আলুর দাম কেজিতে ৩০-৩৬ টাকা কমলেও এখনো ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা দরে। যা সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম বৃদ্ধির জন্য সরবরাহের ঘাটতিকে দুষছেন বিক্রিতারা। তাদের কথা সত্যতাও পাওয়া যায় বাজারে। বর্তমানে বাজারে অন্যন্য সময়ের তুলনায় খুবই কম আলু দেখতে পাওয়া যায়।
আলুর সরবরাহ কম কেন জানতে চাইলে আলুর পাইকারি বিক্রেতা বাদল বাংলানিউজকে বলেন, এখন পুরান আলুর মৌসুম শেষের দিকে। কোল্ড স্টোর থেকে বীজের জন্য আলু নেওয়া হচ্ছে। তাই বাজারে সরবরাহ কম, দামও বেশি। সামনে দাম আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
একই কথা বলেন বাপ্পী নামের আরেক বিক্রেতা। তিনি বলেন, কোল্ড স্টোর থেকে আলু নিয়ে মাঠে লাগানো হয়েছে। কিন্তু গত দুই দিনের বৃষ্টি সেটি নষ্ট হয়ে গেছে৷ এখন আবার কোল্ড স্টোর থেকে আলু নেওয়া হবে। যার কারণে আলুর সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারেও সরবরাহ কমে গেছে।
মো. জাকির নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, যেকোনো সবজির সিজনের শুরুতে ও শেষে দাম বেশি থাকে। এখন নতুন আলুর সিজন শুরু হচ্ছে আর পুরান আলুর সিজন শেষ হচ্ছে। যার কারণে দুটোরই দাম বেশি। নতুন আলু বাসা-বাড়িতে নেওয়া হয়। আর পুরান আলু নেওয়া হয় হোটেল-রেস্টুরেন্টে।
তবে আলুর দাম বৃদ্ধির জন্য বিক্রেতাদের কারসাজিকেই দায়ী মনে করছেন ক্রেতারা। আরিফ নামের এক ক্রেতা বলেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আলুর দাম বাড়াচ্ছে। সরবরাহ নেই, বৃষ্টি এগুলো শুধু তাদের অজুহাত৷ অবশ্য তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই৷ ব্যবসা করতে গেলে যে পরিমাণ চাঁদা দিতে হয়, পণ্যের দাম না বাড়িয়ে তাদের উপায় নেই। সরকার সঠিক জায়গায় হাত দেয় না। সঠিক জায়গায় হাত না দিয়ে ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানা করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
এদিকে আবারও আকাশ ছুঁয়েছে পেঁয়াজের দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি পাবনার দেশি পেঁয়াজ ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১৩০ টাকা করে। গত সপ্তাহে ১১০ টাকা করে বিক্রি হওয়া ফরিদপুরের পেঁয়াজ এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে৷
এছাড়া আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহে ছিল ৯০-১০০ টাকা। নতুন করে বাজারে এসেছে চীন থেকে আমদানি করা সাদা পেঁয়াজ। যা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে।
পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে মো. মানিক নামের এক বিক্রেতা বলেন, দেশি পেঁয়াজের সিজন শেষ। তাই দাম বেশি। ১৫ দিন পর নতুন পেঁয়াজ আসবে, তখন দাম কমবে।
তবে নতুন পেঁয়াজ এলেও দাম কমবে না বলে জানান রুবেল নামের আরেক বিক্রেতা। তিন বলেন, গত দুই দিনের বৃষ্টিতে কৃষকের পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে৷ যার কারণে নতুন পেঁয়াজ এলেও দাম কমবে তেমন একটা কমবে না। এছাড়া বাজারে সব জিনিসেরই তো দাম বেশি। পেঁয়াজের দাম কমবে কি করে?
আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেশি কেন জানতে চাইলে হেলাল নামের এক বিক্রেতা বলেন, ভারত থেকে বেশি দামেই পেঁয়াজ আনতে হচ্ছে। যার কারণে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২৩
এসসি/এসএএইচ