ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে যে টেক্সটাইল বর্জ্য রপ্তানি করো হয় তা পুনর্ব্যবহার করে মোট তুলা আমদানির প্রায় ১৫ শতাংশ কমানো যেতে পারে বলে এক গবেষণা
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ’বাংলাদেশে পোশাক শিল্পে সার্কুলারিটি, ডিকার্বোনাইজেশন ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার’ শীর্ষক সংলাপে এক উপস্থাপনায় এই
তথ্য তুলে ধরা হয়।
ডেনমার্ক ভিত্তিক সার্কুলার ফ্যাশন পার্টনারশিপ সংস্থার ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৬০ শতাংশ টেক্সটাইল বর্জ্য রপ্তানি করে। সমস্ত
রপ্তানিকৃত তুলা বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করে, বাংলাদেশ তার মোট তুলা আমদানির প্রায় ১৫ শতাংশ কমাতে পারে। একই সঙ্গে ২০৩০ সাল নাগাদ টেক্সটাইল শিল্পের
পানির চাহিদা অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় তিনগুণ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। এ অবস্থায় পোশাক শিল্পের টেকসই উন্নয়নে সার্কুলার ইকোনমি বা বৃত্তাকার অর্থনীতির
বিকাশ জরুরি। এ বৃত্তাকার অর্থনৈতিক মডেলে শুধু পরিবেশবান্ধব কলকারখানা স্থাপন নয়, বরং শিল্পের বর্জ্যকে শিল্পের উপকরণ হিসেবে পুনরায় ব্যবহার, সংরক্ষণ
ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বা আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পোশাক শিল্পে যেসব পদ্ধতিগত পরিবর্তন আসছে তা নিয়ে পলিসি একচেইঞ্জ বাংলাদেশ এর
সহযোগিতায় লাইটক্যাসল পার্টনার্স ’বুনন ২০৩০’ নামে একটি বিস্তৃত কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সেই কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে, আগামী দিনে এই খাতের
সার্কুলারিটি বা বৃত্তাকার অর্থনৈতিক মডেল কি হতে পারে তা তুলে ধরতে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়।
এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থার বাংলাদেশস্থ কান্ট্রি প্রতিনিধি ড. জাকি উজ জামান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন
কতৃপক্ষ (বিডা) মহাপরিচালক মো. আরিফুল হক, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর পরিচালক ভিদিয়া অমৃত খান,
বাংলাদেশ নীটওয়্যার ম্যানুফেকচেরার অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক
আব্দুল্লাহ হিল রাকিব, এইচ অ্যান্ড এম এর স্টেকহোল্ডার এনগেজমেন্ট এবং পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজার ফয়সাল রাব্বি ও অন্যান্য নেতারা।
লাইটক্যাসল পার্টনার্স এর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্টানটির সহ প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক জাহেদুল আমিন, বিজনেস কনসালট্যান্ট সামিহা আনোয়ার, মৃন্ময় সোবহান
ও অন্যান্য কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. এম. মাসরুর রিয়াজ। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি প্রতিনিধি কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ।
‘নীতি কর্মশালা: বুনন ২০৩০: সার্কুলারিটি এবং প্রতিযোগিতামূলক কৌশল সংলাপ’ শীর্ষক উপস্থাপনায় বলা হয়, বিস্ময়কর হলেও সত্য যে ২০৩০ সালের মধ্যে
বিশ্বব্যাপী পোশাকের ব্যবহার ১০২ বিলিয়ন আইটেমে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে গ্রিনহাইজ গ্যাস নি:সরণ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। দেশে পোশাক
খাত বছরে প্রায় ৫ লাখ ৭৭ হাজার টন টেক্সটাইল বর্জ্য উৎপাদন করে। বাংলাদেশ বছরে ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের কাঁচামাল আমদানি করে, একই সঙ্গে
উচ্চমানের ঝুট রপ্তানি করে। তাই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে শুধু পরিবেশগত নয় বরং অর্থনৈতিক বিবেচনায় সবুজ কারখানার গুরুত্ব অনেক বাড়ছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিজিএমইএর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০০টির অধিক শিল্পবান্ধব কারখানা রয়েছে। এটা আশাব্যঞ্জক খবর বটে। তাই দেশে আনুমানিক
সাড়ে ৩ হাজার কারখানার মধ্যে অধিক সংখ্যক সবুজ কারখানা স্থাপনের পাশাপাশি ‘কার্বন ফুটপ্রিন্ট’ কমানো এবং পরিবেশ সুরক্ষায় টেক্সটাইল বর্জ্যের
পুনর্ব্যবহারযোগ্য পদ্ধতির দিকে মনোনিবেশ করা জরুরি।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থার বাংলাদেশস্থ কান্ট্রি প্রতিনিধি ড. জাকি উজ জামান বলেন, বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং এ ভালো করছে। যদিও বাংলদেশ সবুজ
কারখানা স্থাপনে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে, আর মূল দূষণকারী দেশের মধ্যেও বিবেচিত নয়। তারপরও আন্তর্জাতিক নিয়ম কানুনগুলো ভালোভাবে অণুসরণ করলে
কারখানাগুলো আরও পরিবেশ বান্ধব হবে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কতৃপক্ষ (বিডা) এর মহাপরিচালক মো. আরিফুল হক বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যগুলোরও গুণগত মান যথেষ্ঠ
ভালো হতে হবে। অন্যথায় ভোক্তারা এসব পণ্য কেনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
বিজিএমইএ এর পরিচালক ভিদিয়া অমৃত খান সবুজ কারখানার প্রসার ঘটাতে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবদিক বিচার বিশ্লেষণ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
নীতি গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
লাইটক্যাসল পার্টনার্স এর পরিচালক জাহেদুল আমিন বলেন, আমাদের দেশে রেডিমেট গার্মেন্ট (আরএমজি) বা পোশাক খাতের স্থায়িত্ব নির্ভর করে ইউরোপীয়
ইউনিয়নের (ইউ) দেশগুলোর নির্ধারণ করা পরিবেশগত মান বজায় রাখার ওপর।
সংলাপ থেকে এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথা উঠে আসে। এরমধ্যে অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে: ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে মোট
ঋণের ৫ শতাংশ ’গ্রিন লোন’ হিসেবে বিতরণ করার কথা, তার পরিবর্তে এপ্রিল-জুন ২০২২ এর হিসাব অনুযায়ী গড়ে মাত্র ৪.১ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়া সৌর কারখানা স্থাপনে অর্থায়নে সমস্যা, অধিকাংশ সংস্থার ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা না থাকা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সহজে
প্রবেশগম্যতা না থাকাও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পোশাক শিল্পে প্রত্যক্ষভাবে চার মিলিয়ন বা ৪০ লাখ লোক জড়িত। ২০২২-২৩ অর্থবছরে শুধু এ খাত থেকে রপ্তানি আয় ৪৬.৯৯
বিলিয়ন ইউএস ডলার। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশই আসে এ খাত থেকে। তাই সার্কুলার অর্থনীতি গ্রহণ করলে ২০৩০ সালের মধ্যে এ খাতে বড়
ধরণের ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিমত ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২৩
এমআইএইচ/জেএইচ