ঢাকা: উন্নত প্রযুক্তি ও দক্ষ কারিগরদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে দেশের জুয়েলারি শিল্প। কিন্তু অলঙ্কার তৈরিতে নতুনত্ব না থাকায় এই শিল্প কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ‘বাজুস ফেয়ার-২০২৪’-এ ‘অলংকার ডিজাইনে শিল্পীর ভূমকিা, প্রযুক্তির ব্যবহার ও কারিগরি দক্ষতা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরাত্রি হলে এই ফেয়ার ও সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।
বাজুসের সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সদস্য সচিব তাসনিম নাজ মোনা।
বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায়ের স্বাগত বক্তব্যে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) মুসরাত মেহ্জাবীন, শান্ত মারিয়ম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির ডিজাইন ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন এন কে কায়কোবাদ রানা, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের আর্টস ফ্যাকাল্টির ডিন প্রফেসর শাহজাহান আহমেদ বিকাশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের কারুশিল্প বিভাগের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মলয় বালা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রিন্টমেকিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. বজলুর রশিদ খান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মদ এমদাদুর রাশেদ, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউএফটি) উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম মাহফুজুর রহমান, বাজুসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কার্যনির্বাহী কিমিটির সদস্য ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম, বিজিএমইএয়ের ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রধান মো. আরিফুল ইসলাম, বিশ্বরঙ-এর স্বত্বাধিকারী ডিজাইনার বিপ্লব সাহা, বাজুসের কোষাধ্যক্ষ উত্তম বণিক প্রমুখ।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, প্রতিটি ঘরের, প্রতিটি বাসায়, প্রতিটি নারী, প্রতিটি পুরুষ আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে জুয়ালারির সঙ্গে জড়িত। আজকে এই সেমিনারটি যে বিষয়ের ওপর আয়োজন করা হয়েছে, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমাদের ছোট্ট একটি দেশে জনসংখ্যা অনেক বেশি। এই বিপুল জনসংখ্যাকে ভালো রাখাতে আমরা চাইলেই কৃষি জমিকে বাড়াতে পারবো না। কিন্তু আমরা চাইলে জুয়েলারি শিল্পকে আরও বেশি শক্তিশালী ও কার্যকর করতে পারবো।
জুয়েলারি শিল্প দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখতে পারে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা পোশাকশিল্পে অনেক এগিয়ে গিয়েছি। পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই যেখানে গহনার দোকান নেই। দেশের কারিগরদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে তাদের যদি গড়ে তোলা যায় তাহলে আমরা পোশাকের মতোই জুয়েলারি শিল্প অনেক এগিয়ে দূর যেতে পারবো। আমাদের সোনার খনি নেই। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় সোনার মানুষ আছে। তাদের আমরা তৈরি করে নিতে পারি।
সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি আরও বলেন, এখন আমাদের দেশে বাইর থেকে দক্ষ কারিগর নিয়ে এসে গহনা তৈরি করা হয়৷ আমাদের দেশেও যোগ্য মানুষ আছে। তাদের যদি ডিজাইন শিখিয়ে দেওয়া হয়, কারিগরি প্রশিক্ষণ ভালো করে দেওয়া হয়, তাহলে এই শিল্প দাঁড়িয়ে যাবে। এজন্য একটি কারিগরি ইনস্টিটিউশন গড়ে তুললে সেখানে কারিগররা প্রশিক্ষণ নিতে পারবে। তাহলে আমাদের তৈরি স্বর্ণ পৃথিবীর সব দেশে যাবে। দেশ এগিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, স্বর্ণ এমন একটি জিনিস যেটি আগে বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। প্রতিটি দেশের অর্থনীতির সঙ্গে স্বর্ণের একটি বিশেষ সম্পর্ক আছে। আবার স্বর্ণ নারীদের সম্বলও। যেকোনো কিছুতে বিনিয়োগে ঝুঁকি থাকলেও স্বর্ণে বিনিয়োগের ঝুঁকি অনেক কম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টাকার মান ওঠানামা করে। কিন্তু স্বর্ণের দাম সব সময় বেড়েই চলেছে।
স্বাগত বক্তব্যে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায় বলেন, আমরা জুয়েলারি শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কারিগররা অনেক দক্ষ। কিন্তু তাদের মধ্যে যেটা নেই, সেটা হলো নতুনত্ব। এর জন্য আমরা বাজুসের চেয়ারম্যান সায়েম সোবহান আনভীরের নেতৃত্বে একটি ইনস্টিটিউট তৈরি করার চিন্তা করছি। সেখানে আমরা কারিগরদের ট্রেনিং দেব। তা না হলে আমরা এগুতে পারবো না। গত কয়েক বছরে আমরা অনেকটা এগিয়েছি। উন্নত মেশিনসহ অনেক প্রযুক্তি আমাদের আছে। তারপরও আমাদের কমতি আছে। সেটি যেন আমরা কমিয়ে আনতে পারি সেটাই এখন লক্ষ্য। তাহলে বিদেশের ওপর আমাদের নির্ভরতা কমবে এবং দেশে তৈরি জুয়েলারি আমরা বিদেশে রপ্তানি করে জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখতে পারবো।
সভাপতির বক্তব্যে বাজুসের সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, অটোমেশনের সঙ্গে যদি কারিগরির একটা সমন্বয় করা যায় তাহলে দেশে স্বর্ণশিল্পের বড় ধরনের বিপ্লব হবে৷ এক্ষেত্রে বাজুস যে কোনো উদ্যোগ নিতে এগিয়ে থাকবে। পাশাপাশি আমাদের দেশের শিল্পীরা যদি নকশা নিয়ে আরও মনোযোগ দেন তাহলে আমার দেশের বানানো গয়না বিশ্বব্যাপী পরিচিত হবে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কথা৷ সেই স্লোগানে বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরের নেতৃত্বে আমরা স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা এগিয়ে যাবো।
সেমিনার শেষে আগত অতিথিদে হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়।
এর আগে সকালে আইসিসিবিতে ‘সোনায় বিনিয়োগ, ভবিষ্যতের সঞ্চয়’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হয় তিন দিনের বাজুস ফেয়ার-২০২৪। মেলার উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর। বিশ্ববাজারে দেশের স্বর্ণশিল্পীদের হাতে গড়া অলংকারের পরিচিতি বাড়াতে এই মেলার আয়োজন করা হয়।
দেশের অর্থনীতিতে অনবদ্য ভূমিকা রাখা বাংলাদেশের জুয়েলারি শিল্পের সবচেয়ে বড় আয়োজন বাজুস ফেয়ার চলবে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আইসিসিবির নবরাত্রি হলে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের জন্য উম্মুক্ত থাকবে মেলা।
বাজুস ফেয়ারে প্রবেশ টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ১০০ টাকা। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের টিকিট লাগবে না। এছাড়াও জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণে বিশেষ অফার দিচ্ছে।
এবার বাজুস ফেয়ারে নয়টি প্যাভিলিয়ন, ১৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন ও ১৫টি স্টলে দেশের স্বনামধন্য ৪১টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২৪
এসসি/এইচএ/