ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ব্যাগেজ রুলে আসা স্বর্ণ বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪
ব্যাগেজ রুলে আসা স্বর্ণ বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বাজুস আয়োজিত ‘অর্থনীতিতে জুয়েলারি শিল্পের অবদান ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার | ছবি: রাজীন চৌধুরী

ঢাকা: জুয়েলারি খাত অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। ব্যাগেজ রুল ব্যবহার করে বা অবৈধ পথে স্বর্ণ এনে যে অলঙ্কার ৯০ হাজার টাকার নিচে বিক্রি করা হচ্ছে, সেই অলঙ্কার বৈধ পথে আমদানি করা স্বর্ণ দিয়ে তৈরি করলে দাম পড়ে যায় লাখ টাকার উপরে।

এমন বাজারে স্বর্ণ আমদানি করে ব্যবসা করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন জুয়েলারি খাতের উদ্যোক্তার। এ জন্য সময় উপযোগী স্বর্ণ নীতিমালার দাবি করেছেন তারা।

শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরাত্রি হলে বাজুস আয়োজিত ‘অর্থনীতিতে জুয়েলারি শিল্পের অবদান ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সেমিনারে প্রধান অথিতির বক্তৃতায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এম এ মান্নান বলেন, ডলার বাজার স্থিতিশীল রাখতে স্বর্ণ শিল্প ভূমিকা রাখতে পারে। এ জন্য বৈধ পথে স্বর্ণ যেমন আমদানি নিশ্চিত করতে হবে। আবার রপ্তানিও নিশ্চিত করতে হবে।

স্কুল অব ইকোনমিকসের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, কোনো একক নীতিমালাতেই পুরো বিষয় আসে না; পূর্ণাঙ্গ হয় না। জুয়েলারি খাতেও তাই হয়েছে। একটি সময়ের প্রেক্ষিতে স্বর্ণ নীতিমালা তৈরি হয়েছিল। এখন আরও অনেক বিষয় যুক্ত হওয়ার প্রেক্ষিত তৈরি হয়েছে, সেগুলো করতে হবে।

তিনি বলেন, স্বর্ণের অলংকার অনেক দামি। যাদের কম আয় তারা স্বর্ণের অলঙ্কার কিনতে না পেরে ইমিটেশনের গহনা ব্যবহার করে; এগুলোও বিদেশ থেকে আসে। নীতিমালাতে ইমিটেশনের বিষয়টিও যুক্ত করার প্রয়োজন।

স্বর্ণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ব্যাগেজ রুল ভূমিকা রাখছে। ব্যাগেজ রুল ব্যবহার করে দেশের চাহিদা মেটানোর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ব্যাগেজ রুল সময়োপযোগী করতে মনোনিবেশের তাহিদ দেন এই অর্থনীতিবিদ।

অংশীজন ও নীতি নির্ধারকদের একসঙ্গে কাজ করার তাগিদ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর  রহমান। তিনি বলেন, উদ্যোক্তারা যা করেন আর নীতি নির্ধারকরা যা ভাবেন তার সমন্বয় করতে হবে। স্বর্ণ খাতকে আধুনিক শিল্পে রূপান্তর করে স্বর্ণালঙ্কার রপ্তানি করতে পারলে এই মূহূর্তে যে ডলার সংকট তৈরি হচ্ছে, তার সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারত।

বেজা স্বর্ণ শিল্পের জন্য যে জায়গা দিতে চায়, সেগুলো এখনই নেওয়ার তাগিদ দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, স্বর্ণ শিল্পের ট্যাক্স নিয়ে কথা বলছেন। ভ্যাট-ট্যাক্সই যদি প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়, বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভ্যাট ট্যাক্স কেমন হারে নেওয়া হয়, বাংলাদেশও বিষয়টি সেভাবে নিতে হবে।

তিনি বলেন, স্বর্ণালঙ্কার লাইফ স্টাইল পণ্য। অলঙ্কারের ডিজাইন ভালো না হলে চলবে না। এ জন্য ডিজাইন বড় বিষয়। এ জন্য ট্রেনিং ইনস্টিটিউট তৈরি করেতে হবে। প্রয়োজনে বিদেশি প্রশিক্ষক দেশে এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেতে হবে।

ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইনান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, স্বর্ণ শিল্পের জন্য একটি কমপ্রেহেনসিভ পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক করতে হবে। যার ভিত্তিতে লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগোতে হবে।

অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, এত বড় শিল্পের তথ্য উপাত্ত নেই। সোর্স পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও এ শিল্পের বয়স ৫২ বছর। আর এর নীতিমালার বয়স দুই বছর। এতেই প্রমাণ করে, এ শিল্পের এমন অবস্থার কারণ। এ কারণে মানুষ এ শিল্পের কথা শুনলে ‘ওরে বাবা’ বলে!

বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, রপ্তানির বাজার ও পণ্য বহুমুখী করতে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। সেই জায়গা থেকে স্বর্ণ শিল্পে বিনিয়োগ গতিশীল করতে যা যা করণীয় আমরা করব। বাজুসের চাওয়া অনুযায়ী আমরা প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে কাজ করব।

শুধু স্বর্ণ খাতের জন্য নতুন বিশেষ অর্থনৈতিক জোন করা লাভজনক হবে না। সড়ক-জ্বালানির মতো অবকাঠামো করতে হবে; এটা অনেক ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ। এ জন্য নারায়ণগঞ্জে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন আছে, সেখানে স্বর্ণ খাতের উদ্যোক্তারা কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে পারেন বলে প্রস্তাব দেন বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের (বেজা) নির্বাহী পরিচালক সালেহ আহমদ।

ট্যারিফ কমিশনের উপপ্রধান মো. মাহামুদুল হাসান বলেন, তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বর্ণকাররা সমস্যা। জরিপে গেলে স্বর্ণের দোকানদাররা তথ্য দিতে চান না।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সদস্য মো. আব্দুস সালাম বলেন, ডলার নেই বলে স্বর্ণ আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমতি দিচ্ছে না। অথচ প্রতি বছর ডিলারশিপ অনুমোদেন জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা গুনতে হবে।

বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেলের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সহ-সভাপতি গুলজার আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায়, অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন প্রমুখ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৪
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।