ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় সাহসী খলিল ৬৩০ টাকা কেজি গরুর মাংস বিক্রি করছেন, সেই শহরেই গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি। তাকে দেখে অন্য ব্যবসায়ীরাও মাংসের দাম নামিয়েছিলেন ৬৫০ টাকায়।
বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর ঘুরে এমন তথ্যই পাওয়া যায়।
রাজধানীতে আপনারাও গত দুই মাস আগে ৬৫০ টাকায় নামিয়েছিলেন, এমন কি হলো যে আবার মাংসের দাম ৭৫০ টাকায় তুললেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মিরপুরের ১৩ নম্বরের মাংস বিক্রেতা আজিজুল ইসলাম বলেন, ৭৫০ টাকার নিচে বিক্রি করলে তো লাভ থাকে না। লাভ ছাড়া কীভাবে ব্যবসা করব?
উজ্জ্বল বা খলিল এখনো ৬৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে আপনারা পারবেন না কেন, এ ঢাকাতেই তো তারা বিক্রি করছেন? জবাবে মিরপুরের আজিজুল ইসলাম বা ফার্মগেটের আনসার আলীর যুক্তি হলো, তারা তো মাথার কম দামের মাংস বা চর্বি মাংসের মধ্যে মিশিয়ে বিক্রি করে। এজন্য তারা কম দামে বিক্রি করতে পারে। আমরা তাদের মতো মাংস বিক্রি করি না। তাছাড়া তারা তো অনেক মাংস বিক্রি করে। এতে কম লাভ করলে বেশি বিক্রি করে পুষিয়ে নেয়।
উজ্জ্বল, খলিলের দাপটে অন্যরাও মাংসের দাম ৬৫০ টাকায় নামিয়েছিলেন। পরে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের লোকজনের সঙ্গে বৈঠক করে ৭০০ টাকা কেজি দাম নির্ধারণ করা হয়। প্রথম কয়েকদিন সরকারের বেঁধে দেওয়া ৭০০ টাকায় বিক্রি করলেও পরে ব্যবসায়ীরা বাড়াতে থাকেন মাংসের দাম।
মিরপুরের আজিজুল জানান, এখন প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৭৫০ টাকা দেখছেন তো, সবুর করেন (অপেক্ষা) রোজার মধ্যেই আগের দাম দেখতে পাবেন। উজ্জ্বল ও খলিল এখনো ৬৩০ টাকায় বিক্রি করছেন, আপনারা বাড়াবেন-এর পেছনে যুক্তি কি? জবাবে এ মাংস বিক্রেতা বলেন, গরুর দাম বেড়েছে। এজন্য মাংসের দাম বাড়বে। কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
মিরপুরের বিভিন্ন মাংসের দোকানের বিক্রি হওয়া বর্তমান দাম ও তিন মাস আগের দাম পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এসব দোকানদার কম মাংস বিক্রি করে বেশি লাভ করেছেন। একটি গরু জবাই করে দুই দোকানদার মিলে বিক্রি করেছেন, এতে যে লাভই হয়েছে, সপ্তাহের বাকি কদিনে নতুন করে গরু জবাই না করেও এক গরুর মাংস থেকে পাওয়া মুনাফা দিয়ে পুরো সপ্তাহ চলেছেন। ভোক্তাকে ঠকিয়ে ঠকিয়ে নিজেরা লাভ করেছেন। রাজধানীর উজ্জ্বল বা খলিল কম দামে বেশি মাংস বিক্রি করার ফলে তাদের মনোপলি ব্যবসা ভেঙে পড়েছিল।
কিছু অতি মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীদের কারণে মাংসের দাম আবার বেড়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম। তিনি ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, সরকার মাংসের দাম বেঁধে দিয়েছিল ৭০০ টাকা কেজি। এখন অসাধু ব্যবসায়ীদের ঠেকাতে প্রশাসনের মাঠে নামা উচিত।
মাংসের দাম বাড়ার পেছনে খামারের মালিকদের কিছু হাত আছে বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, সরকার যখন গরুর মাংসের দাম ৭০০ টাকা বেঁধে দিয়েছে, তখন বড় খামারের মালিকরা গরু বাজারে ছাড়া কমিয়ে দিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সফল হননি তারা; বাজারে গরু এখন আসছে। তারপরও কিছু কিছু অসাধু মাংস বিক্রেতা গরুর কম সরবরাহের কথা বলে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছেন বা আগামীতে আরও বাড়াতে চাইবেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উচিত এসব বিক্রেতাকে এখনি জবাবদিহির আওতায় আনা। তা না হলে আবার মাংসের দাম বাড়িয়ে দেবেন তারা।
রাজধানীর সুপারশপগুলোও সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম মানছে না। সেসব শপে ৭২০ টাকা থেকে শুরু ৭৩০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি হচ্ছে।
মাংসের বাজারের দরের বিষয়টি সরকার তদারকি করেছিল, আবারও তা করতে পারে। এ জন্য দাম বাড়ানোর কারণগুলোকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম হোসেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গরুর মাংসের মূল্য বৃদ্ধি পেছনে মূল্যস্ফীতির একটি কারণ রয়েছে। এটাকে ব্যবহার করে কোনো কোনো ব্যবসায়ী মাংসের জন্য যে গরু কিনতে হয়, সেই গরুর দাম বাড়ার খরচ বা নিজের জীবন নির্বাহের খরচ মাংসের দাম বাড়িয়ে তুলে থাকেন। দেখতে হবে, তাদের অতি মুনাফা যেন সাধারণ ভোক্তাদের জন্য বোঝা না হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৪
জেডএ/এসআই