ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অভিযান চালিয়ে বাজার ব্যবস্থা ভালো করা সম্ভব না: প্রতিমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪
অভিযান চালিয়ে বাজার ব্যবস্থা ভালো করা সম্ভব না: প্রতিমন্ত্রী

ঢাকা: পুলিশ দিয়ে অভিযান চালিয়ে বাজার ব্যবস্থা ভালো করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।

পবিত্র মাহে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনী দ্রব্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রাজধানীর পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাকক্ষে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, একদিকে যেমন ন্যায্য ব্যবসা করার অধিকার আদায়ের কাজটা আপনাদের করতে হবে, তেমনি সততার সঙ্গে ব্যবসা করার জন্য আপনাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। আপনারা নিজেরা যতটা সচেষ্ট থাকবেন, প্রশাসন ততটা আপনাদের সহায়তা করবে। আমি গত এক মাস সব জায়গায় বলেছি, পুলিশ দিয়ে অভিযান চালিয়ে বাজার ব্যবস্থা ভালো করা সম্ভব না। বাজার ব্যবস্থা ভালো করতে হলে, সাপ্লাই চেইনের প্রতিনিধিসহ আমদানিকারক বা উৎপাদক থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত প্রতিটি জায়গা শক্তিশালী হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আপনাদের (ব্যবসায়ী) প্রতিনিধি ছাড়া আমার মন্ত্রণালয়ের (বাণিজ্য মন্ত্রণায়) ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে কোনো অভিযান পরিচালনা করা হবে না। তাহলে কোনো ব্যবসায়ীকে দোকানের দরজা বন্ধ করতে হবে না। কিন্তু সাধারণ মানুষ যাতে প্রতারিত না হয়, ন্যায্যমূল্যে পণ্য পায়, কষ্ট না পায়, সেটা আপনাদের সততার সঙ্গে করতে হবে। এটা প্রধানমন্ত্রীও আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

সভায় পণ্যের দাম বৃদ্ধির একটি কারণ হিসেবে আমদানি করা পণ্য জাহাজে আটকে থাকার কথা জানান ব্যবসায়ীরা। এ প্রেক্ষিতে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাহাজে যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আটকে আছে, আমাকে তালিকা দেবেন। ইনশাল্লাহ, এই মাসের মধ্যে রমজানের কোনো জিনিস জাহাজে আটকে থাকবে না। আপনারা আমাকে জানাবেন, আমি এই সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করব। কিন্তু কোনো উৎপাদনকারী বা আমদানিকারক যাতে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ব্যবসা না করে, এটা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের ব্যবসা শত বছরের পুরনো। সততার সঙ্গে ব্যবসা না করলে শত বছর কোনো ব্যবসা টিকে থাকে না। তাই আজকে আপনাদের কাছে আসার উদ্দেশ্য পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ নয়, পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা। পণ্যের সরবরাহ যদি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে পণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে থাকবে। অনেকে মনে করেন পণ্যের দাম কমানো বা বাড়ানো আমাদের কাজ। আমি মনে করি, আমাদের কাজ পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা। আমরা যেন সব পণ্য সময়মতো হাতের কাছে পাই।

মতবিনিময় সভায় ৪৪টি ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তাদের উদ্দেশে আহসানুল হক টিটু বলেন, আপনারা আপনাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা বলেছেন। আমি আপনাদের আগামী বাজেটের আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আমন্ত্রণ জানাই। আপনাদের সবাইকে নিয়ে আমরা বসব। আগামী বাজেটে কী করলে আপনারা সহজভাবে করতে পারবেন, আমরা সেই ভূমিকা রাখব।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিম বলেন, আওয়ামী লীগ নির্যাতিত বঞ্চিত মানুষের আর্থিক সমাজিক অবস্থান উন্নয়ন করার লক্ষ্যেই সব সময় কাজ করে আসছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্রব্যমূল্যকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি এক ধরনের অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র করেছিল। আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় আপনাদের (ব্যবসায়ী) ওপর আস্থা রেখেছেন। আপনারা সব সময় সুসংগঠিত হয়ে মানুষের পাশে থেকেছেন। করোনা মহামারির সময় নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মানুষের পাশে ছিলেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সৈয়দ মো. বশির উদ্দিন বলেন, আমরা আপনাদের (ভোক্তা অধিদপ্তর) অভিযানের বিরোধী না। কিন্তু আপনারা যখন একটি দোকানে অভিযান পরিচালনা করেন, তখন পাশের দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তাই আপনারা মৌলভীবাজারে অভিযান চালানোর আগে আমাদের জানাবেন। দোকানের নাম-পরিচয় কিছুই বলার দরকার নেই। আমরা আপনাদের নিয়ে সেই দোকানে যাব। সেই দোকানে যদি আপনারা কোনো অনিয়ম পান, তাহলে তাকে শাস্তি দেবেন। ওই ব্যবসায়ীর কোনো দায়-দায়িত্ব আমাদের না। কিন্তু অভিযানের নামে ভালো সৎ ব্যবসায়ীদের হয়রানি করবেন না।

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য যাতে যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। রমজানকে ঘিরে বর্তমানে আমাদের বাজার স্থিতিশীল আছে। পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। এখন বিপণন ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে। এখানে ব্যবসায়ীদের ভূমিকা আছে। আমরা এবার রমজানে ব্যবসায়ীদের পেছনে পেছনে দৌড়াতে চাই না। ব্যবসায়ীরা যদি নিত্যপণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখে তাহলে রমজানে ভোক্তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে। এটাই তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা।

সভায় বাংলাদেশ পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. আবুল হাশেম বলেন, অতীতের তুলনায় চিনি আমরা অনেক বেশি দামে খাচ্ছি। রমজানে এই দাম আর বাড়বে কি না জানি না। রমজানে চিনির চাহিদা বাড়ে। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজার অস্থিতিশীল হবে কি না তাও জানি না। তবে উৎপাদক থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত একেকজন একেক দামে চিনি বিক্রি করে। এই দাম নির্ধারণ করে দেওয়া দরকার। যদি সরবরাহ ঠিক থাকে তাহলে রমজানে চিনির দাম বাড়বে না।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমদানি শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এই শুল্কের কারণেই খেজুরের বাজারে এখন অস্থিরতা চলছে। আমরা শুল্ক কমানোর জন্য এনবিআরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বহুবার বলেছি। কিন্তু তারা সেটি শোনে না। যদি শুনতো তাহলে রমজানে খেজুরের বাজার এমন অস্থির হতো না। খেজুর সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকতো। এক কেজি খেজুরে আমাদের ২০৮ টাকা শুল্ক দিতে হয়। খেজুরের শুল্ক কমালে সরবরাহ বেড়ে দাম কমে যেতো।

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মাহবুব-উজ-জামান, বাংলাদেশ গরম মশলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ, এফবিসিসিআই-এর পরিচালক আবু মোতালেব, মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. গোলাম মাওলা প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪
এসসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।