ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

হাকালুকি হাওরের মৎস্যসম্পদ রক্ষায় নানান উদ্যোগ

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪
হাকালুকি হাওরের মৎস্যসম্পদ রক্ষায় নানান উদ্যোগ সূর্য ডোবার আগে অনিন্দ্যসুন্দর রূপে হাকালুকি হাওর। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: দেশের সর্ববৃহৎ মিঠাপানির জলাভূমি, মৎস্য ও প্রাকৃতিক জলজ উদ্ভিদের ভাণ্ডার খ্যাত হাকালুকি হাওর। এই হাওরের আট অভয়াশ্রম বিলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েই জীববৈচিত্র্য রক্ষা, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও বিলুপ্তি ঠেকাতে মৎস্য অধিদপ্তর নানা উদ্যোগ নিয়েছে।

ইতোমধ্যে মাছের আবাসস্থল নিরাপদ ও প্রাকৃতিক খাদ্য নিশ্চিত, মাছলুটেরার কবল থেকে মৎস্যসম্পদ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে রাজস্ব বাজেটে হাতে নেওয়া একটি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে বদলে যাচ্ছে অভয়াশ্রম বিলের চিত্র। আবাসস্থল নিরাপদ করার প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রজনন মৌসুমে অভয়াশ্রমের মা মাছ আশপাশের বিলে ছড়িয়ে আশাতীত উৎপাদন বৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে।

হাকালুকি হাওরের আয়তন ১৮ হাজার ১১৫ হেক্টর। মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়া এবং সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলাজুড়ে রয়েছে হাওরের বিস্তৃতি। সম্প্রতি মৎস্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহনেওয়াজ সিরাজী হাকালুকি হাওরের অভয়াশ্রম বিলগুলো পরিদর্শন করেন।  

জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের ১৫০ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ, ১২০ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখানে প্রতি বছর শীতকালে প্রায় ২০০ বিরল প্রজাতির পরিযায়ী পাখির সমাগম ঘটে। হাকালুকি হাওর টেকসই উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, ইকোট্যুরিজম শিল্প বিকাশের এক অসাধারণ আধার। এর মৎস্য অভয়াশ্রম স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের মাধ্যমে হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাব আর দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণের কারণে হাওরের মৎস্যসম্পদ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়ছিল।

হাকালুকি হাওরে চার হাজার হেক্টর আয়তনজুড়ে প্রায় ৩শ’ জলমহাল (বিল) রয়েছে। যা ভূমি মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন তিন বছর মেয়াদের জন্য বিভিন্ন মৎস্যজীবী সমিতির নিকট ইজারা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে ১৮টি বিলকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হলেও বর্তমানে এর সংখ্যা আটটিতে ঠেকেছে। এই আটটি অভয়াশ্রম বিলের আয়তন মাত্র ১৬০ হেক্টর। স্থায়ী মৎস্য অভয়াশ্রমগুলো হচ্ছে কৈয়ারকোণা, মইয়াজুড়ী, নিমু, তেকুনি, টোলার, আগদার, মাইছলার ডাক ও কাংলী গোবর কুড়ি বিল।

পর্যবেক্ষণ টাওরে পর্যটকদের ভিড়।  ছবি: বাংলানিউজহাওরের চার হাজার হেক্টর বিলের মধ্যে মাত্র ১৬০ হেক্টর অভয়াশ্রম অত্যন্ত অপ্রতুল। প্রত্যেকটি ফসলের জন্য যেমন বীজ সংরক্ষণ জরুরি, ঠিক তেমনি হাওরে মাছের ব্রিড (প্রজনন) যদি একবার হারিয়ে যায়, তাহলে তা ফিরিয়ে আনা খুবই দুঃসাধ্য। তখন হাওরে দেশীয় প্রজাতির মাছের বিপরীতে বাড়বে তেলাপিয়া, পাঙ্গাশ বা সাকার মাউথ ক্যাটফিশের মতো মাছ। এতে হয়তো উৎপাদন বাড়বে, কিন্তু হারিয়ে যাবে হাওরের দেশীয় শত শত প্রজাতির সুস্বাদু মাছ।

এই পরিস্থিতিতে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয় হাকালুকি হাওরের এই আটটি অভয়াশ্রম বিল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয় মৎস্য অধিদপ্তরকে। এরপরই মৎস্য অধিদপ্তর রাজস্ব খাতের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে অভয়াশ্রমের মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণের কার্যক্রম সম্পন্ন করে। এতে পাল্টে যাচ্ছে অভয়াশ্রম বিলগুলোর দীর্ঘদিনের রুগ্ন চিত্র।

পর্যাপ্ত পরিমাণ বাঁশ, গাছের ডালপালা, কনক্রিটের পিলার ও লাল ফ্ল্যাগ দিয়ে অভয়াশ্রমগুলোতে মাছের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে মৎস্য অভয়াশ্রমগুলোর গভীরতা কম থাকায় পানির পরিমাণ কম পরিলক্ষিত হয়।  

হাওর পাড়ের জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই মৎস্য অভয়াশ্রমগুলো খননের উদ্যোগ, অভয়াশ্রমের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং রক্ষার সঠিক পরিকল্পনা নেওয়া হলে এবং মাছের প্রজনন মৌসুমে যদি জেলেদের প্রণোদনার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত হাওরে মাছ আহরণ সম্পূর্ণ বন্ধ করা যায়, তবেই হাকালুকিতে বাড়বে মৎস্য উৎপাদন ও জলজ জীববৈচিত্র্য। স্থানী বাসিন্দারা বলছেন, ইলিশ রক্ষায় যেমন সরকারের বিভিন্ন অধিদপ্তর একসঙ্গে কাজ করছে, ঠিক তেমনি হাওর রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন অধিদপ্তর একসঙ্গে কাজ করলেই হাকালুকি হাওর রক্ষা হবে এবং এখানকার হাজার হাজার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে।

সার্বিক বিষয়ে বড়লেখা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে অভয়াশ্রমগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পাওয়ার পর আটটি অভয়াশ্রমের উন্নয়নে কিছু কাজ করা হয়েছে। তবে হাওরে মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পে ওই অভয়াশ্রমগুলো সংযুক্ত করা হয়েছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি প্রকল্পটি পাওয়া যাবে। উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তরের রাজস্ব বাজেটে অভয়াশ্রমগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বাঁশ, গাছের ডালপালা, কনক্রিটের পিলার ও লাল ফ্ল্যাগ দিয়ে সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে।

এছাড়া স্থানীয় জনসাধারণের সচেতনতার জন্য বিলের পাড়ের দর্শনীয় স্থানে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান এ মৎস্য কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪
বিবিবি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।