দিনাজপুর: দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাথর আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কম হয় বলে প্রতিবেশী দেশটি থেকে পাথর আমদানি করা হয়।
দেশের খনিতে পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও ডলার সংকটের মধ্যেই বাইরের দেশ থেকে ঋণপত্র (এলসি) করে পাথর আমদানির বিষয়ে নানা ধরনের আলোচনা চলছে। অনেকে এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
আমদানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাথর আমদানিতে সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম না থাকায় দেশে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও বাইরে থেকে পাথর আমদানি চলছে। বাওয়াশান, রিভারস্টোন, ব্লাকস্টোন পরশা ডেনড্রুপসহ বিভিন্ন ধরনের পাথর ভারত, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হচ্ছে। প্রতি টন পাথর ২৫ ডলারে এলসি করেন আমদানিকারকরা। বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য প্রায় ৩ হাজার টাকা।
এ দিকে মধ্যপাড়া খনি কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, প্রতি টন পাথর সর্বনিম্ন ৩ হাজার ১০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়।
পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই খুদা মিলন বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন ১৫০-২০০ ভারতীয় ট্রাক বন্দরে পণ্য নিয়ে আসে। যার ৯৮ শতাংশই পাথর। ডলার সংকটের কারণে পাথর আমদানি কমেছে। কিন্তু দেশের পাথর খনির মজুদ বেশি থাকার কারণে উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় কোনোভাবেই বাইরের দেশ থেকে পাথর আমদানির যৌক্তিকতা নেই। ভারতের সঙ্গে দেশীয় পাথরের মধ্যে গুণগত মানেরও পার্থক্য নেই। অথচ প্রতি টন ভারতীয় পাথর ২৫ ডলার দিয়ে বাংলাদেশে আমদানি হচ্ছে। আমাদের উচিত ডলার সংকট বিবেচনা করা ও দেশীয় পাথর ব্যবহারে উদ্যোগ নেওয়া।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের পাথর আমদানিকারক সবুজ ইসলাম। দেশীয় পাথর থাকা সত্ত্বেও কেন বাইরের পাথর আমদানি করা হচ্ছে জানতে চাওয়া হয় তার কাছে। তিনি বলেন, ব্লক তৈরি, রাস্তা নির্মাণ, বিল্ডিং নির্মাণে বাওয়াশান, রিভারস্টোন, ব্লাকস্টোন, পরশা, ডেনড্রুপসহ বিভিন্ন ধরনের পাথর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ভারত, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এইসব পাথর আমদানি করা হয়। ইঞ্জিনিয়াররা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এইসব পাথর ব্যবহারে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর ঠিকাদারদের চাহিদা মতো আমাদের পাথর আমদানি করতে হয়। তবে আমাদের দেশের সরকারি প্রকল্পে যদি ইঞ্জিনিয়াররা দেশীয় পাথর ব্যবহারের পরামর্শ দিতেন। তাহলে হয় তো দেশীয় পাথর ব্যবহারের পরিধি বৃদ্ধি পেতো।
মধ্যপাড়া পাথর খনিতে উত্তোলনকৃত পাথর ও আমদানিকৃত পাথরের মধ্যে দামের খুব বেশি পার্থক্য না থাকলেও দেশীয় পাথর কিনতে অনীহা ব্যবসায়ীদের।
এ বিষয়ে জানতে কথা হয় মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) রাজীউন নবী বলেন, বেশির ভাগ বড় বড় প্রকল্পের কাজ ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলে হয়ে থাকে। জাহাজে করে অনেক পাথর স্বল্প খরচে দুবাই থেকে দক্ষিণাঞ্চলে আসে। আর সড়ক পথে যমুনা ব্রিজ থেকে ঢাকায় পাঠাতেই প্রতি টনে ১ হাজার ২০০ টাকা লাগে। মূল দামের সঙ্গে পরিবহন খরচ যোগ করলে তখন টোটাল খরচ বেড়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু রেলসেতু হয়ে গেলে আর এ সমস্যা থাকবে না।
মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (পিইপিঅ্যান্ডএম) (চ. দা.) ছালাতেয়ারা বেগম বলেন, আমাদের উত্তোলনকৃত পাথরের চেয়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত পাথরের মান কিছুটা নিম্নমানের হয়। যার ফলে দাম ও একটু কম হয়ে থাকে। ব্যবসায়ীরা কম দাম যেখানে পাবেন, সেখান থেকে পাথর আমদানি করে থাকেন। আমাদের গ্রানাইট পাথরের সাইজ ফিক্সড ডিজাইন করা থাকে। এটাই পার্থক্য শুধু।
দেশের সরকারি প্রকল্পগুলোতে দেশীয় উত্তোলনকৃত পাথরের ব্যবহার বৃদ্ধি ও মজুদ বৃদ্ধিকালে আমদানি বন্ধ এমন নীতিমালা প্রণয়ন হলে এ ধরনের সমস্যার অবসান হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধির আহ্বান জানান তারা।
খনি সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার (১৮ মার্চ) পর্যন্ত খনিতে ৮ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন পাথর মজুদ রয়েছে। তবে কবে নাগাদ আবার পাথর উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হতে পারে, এমন তথ্য জানাতে পারেননি কর্তৃপক্ষ।
দেশের একমাত্র পাথর খনিতে অতিরিক্ত মজুদ থাকায় জায়গা সংকটের অভাবে উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। অথচ দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর ও পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিনই আমদানিকৃত পাথর বোঝাই ট্রাক প্রবেশ করছে।
জায়গা সংকটের অভাবে গত ০১ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে মধ্যপাড়া খনি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখে খনি কর্তৃপক্ষ। প্রতি মাসে প্রায় দেড় লাখ টন পাথর উৎপাদনের বিপরীতে বিক্রি হয় ৫০-৬০ হাজার মেট্রিক টন পাথর। এতে খনির ৯ ইয়ার্ডে বিভিন্ন সাইজের প্রায় ১০ লাখ টন পাথরের বিশাল মজুদ গড়ে ওঠে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৪
এসআরএস