ঢাকা: বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ গেট সংলগ্ন ফুটপাতের দোকানগুলোয় টুপি, আতর, তসবি, জায়নামাজ বেচাকেনা জমে উঠেছে। নতুন পোশাক কেনার পর ক্রেতা ভিড় জমাচ্ছে এসব দোকানে।
অর্ধ রমজানের পর থেকেই মূলত আতর, টুপি, তসবিহ ও জায়নামাজের দোকানে বিক্রি জমে উঠতে শুরু করে। রোববার (৩১ মার্চ) বায়তুল মোকাররম মার্কেটে সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন দোকানে ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে।
দোকান সংশ্লিষ্টরা জানান, বায়তুল মোকাররম মার্কেটে এসব পণ্যের অন্তত ২০০ দোকান রয়েছে। সারা বছরই বেচাকেনা হয়, তবে ঈদ ঘিরে যে বাড়তি বিক্রি হয় তা সবেমাত্র শুরু হচ্ছে। প্রতি বছর শাবান মাস থেকেই তাদের বিক্রি বেড়ে যায়। একটানা চলে কোরবানির ঈদ পর্যন্ত। এবার কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা গেছে। ১৫ রোজা অতিবাহিত হওয়ার পর দোকানে ক্রেতা বাড়ছে।
আতর-টুপি শখের পণ্য মন্তব্য করে একজন বিক্রেতা বলেন, ব্যয় বাড়ায় মানুষ এখন এসব পরে কিনছে। কারণ, সবার কাছেই নিত্যদিনের খচরটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এবার মানুষের আয় না বাড়লেও ব্যয় বেড়েছে। তাই এখন মানুষ আর অতিরিক্ত খচর করতে চায় না। তাই অন্যান্য বছর এমন সময়ে বিক্রির ব্যস্ততা থাকলেও এবারের চিত্র একটু ব্যতিক্রম।
ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে অনেক পণ্যের দাম এবার বেড়েছে জানিয়ে আরেক বিক্রেতা জানান, প্রতি বছর ডলারের দামের ওপরই পণ্যের দাম কমানো কিংবা বাড়ানো নির্ভর করে। এবারও তাই হয়েছে। ডলারের দাম বৃদ্ধিতে কিছু পণ্যের আমদানি খরচ অনেক বেড়েছে। ফলে বিক্রিতেও দাম বাড়াতে হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছরের চেয়ে এবার ব্যয় বেশি বেড়েছে। ফলে ক্রেতারা এসব পণ্য কিনতে আসেন দেরিতে। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিটি পণ্যে ২০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে।
আতরের ধরন ও দামের বিষয়ে এক ব্যবসায়ী জানান, বাংলাদেশে তৈরি ‘উদ’ আতরের একশ মিলিলিটার দাম ৮৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। মানুষ এখন এত দাম দিয়ে আতর কিনতে যায় না। এর বাইরে হরেক রকম সুগন্ধি রয়েছে যার দাম কিছুটা হলেও নাগালের মধ্যে। সেগুলোই বেশি কিনছে ক্রেতারা।
দামি আতরের তুলনায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকার আতরের দিকেই বেশি নজর ক্রেতাদের। দেশের বাজারে সাধারণত জেসমিন, হাসনা হেনা, রজনীগন্ধা, এক্সকাচি বেলি, সিলভার, চকোলেট মাক্সসুলতান, আমির আল কুয়াদিরাজা ওপেন, জান্নাতুল ফেরদৌস, রয়েল, তরেঞ্জ, সফট, লর্ডনিভিয়া মেন, রয়েল ম্যাবরেজজপি, রাসা, আল ফারিসবেস্ট, ফিগো, হাজরে আসওয়াদ নামের আতর বেশি বিক্রি হয়। এগুলোর দাম প্রতি এমএল ১০০ থেকে দেড়শ টাকা।
বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেট ছাড়াও গুলিস্তান, কাঁটাবন মসজিদ মার্কেট, কাকরাইল মসজিদ মার্কেটসহ ফুটপাথের বিভিন্ন দোকানে আতর পাওয়া যায়। একইসঙ্গে টুপি ও জায়নামাজও বিক্রি করছে এসব এলাকার ব্যবসায়ীরা। বায়তুল মোকাররম মার্কেটের নিচতলায় আতর-টুপির দোকানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। প্রতিটি দোকানে সাজানো বাহারি সব টুপি-জায়নামাজ। আতর, আতরদানি, সুরমা, পাঞ্জাবি, তসবিহর আলাদা দোকান রয়েছে।
দোকানিরা জানান, আতরের ক্রেতাদের মধ্যে রয়্যাল, কদম, ফেরারি এগুলো বেশি চলে। সবগুলো মিলির (ছোট) দামই ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। আতর ছাড়াও এসব দোকানে কাচ, প্লাস্টিক ছাড়াও বিভিন্ন ধাতুর মিশ্রণে তৈরি আতরদানিও পাওয়া যায়। আতর ছাড়াও দেশি, পাকিস্তানি ও চিনের তৈরি টুপি বিক্রি হচ্ছে। কম দামে বৈচিত্র্যময় নকশার কারণে এগুলোর চাহিদা বেশি।
বিক্রেতারা জানান, তুরস্ক, ভারত, সৌদি আরব, কাতার, মালয়েশিয়া থেকেও টুপি আসে। নকশা, কাপড়ভেদে ১০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা দামের টুপিও পাওয়া যায়। ১৫০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে চিনা ও পাকিস্তানি টুপি পাওয়া যায়। চিনা টুপি ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, পাকিস্তানি টুপি ১৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, ভারতীয় টুপি ৮০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এর মধ্যে চিনের ওয়ানি ৬৫০ টাকায়, ভারতের গুজরাটি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, সিডনি ৪০০ টাকা, পাঠান ৪৫০ টাকা এবং ছোট পুঁতির সাথে সোনালি কাজ করা প্রতিটি টুপি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া নেটের তৈরি চিনা টুপি ১৫০ টাকা ও তুর্কির টুপি ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন দোকানিরা।
এখানকার দোকানে বিচিত্রময় নকশা ও ম্যাটেরিয়ালের জায়নামাজও রয়েছে। সুতি, মখমল, সিলিকন, পশমিসহ বিভিন্ন রকমের এসব জায়নামাজ বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তান, কাশ্মির, বেলজিয়াম, চিন, সৌদি আরব ও কাতার থেকে আসে। দাম পড়ছে ১২০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া রয়েছে কাঠ, প্লাস্টিক, মুক্তা, পাথর, হাতির দাঁত, হরিণের শিং, ক্রিস্টালসহ বিভিন্ন উপাদানে তৈরি তসবিহ। এর মধ্যে ২৫ গুটি, ৫০ গুটি থেকে শুরু করে ১০০, ২০০, ২৫০ ও সর্বোচ্চ ৫০০ গুটির তসবিহ পাওয়া যায়। তবে ডিজিটাল তসবিরও চাহিদা বেশি। যার দাম ৫০ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৪
এইচএমএস/এমজে