নারায়ণগঞ্জ: পণ্যের কাঁচামাল ও প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল সংরক্ষণে বাংলাদেশে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ তৈরি করতে বিকেএমইএ’র সহযোগিতা চায় চীন। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা বিনিময়ে চীনের সহযোগিতা চান বিকেএমইএ নেতৃবৃন্দ।
সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেএমইএ’র প্রধান কার্যালয়ে এক বৈঠকে এ সহযোগিতা চাওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান।
চীনের ৩৬টি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিকেএমইএ’র এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বিষয়গুলো উঠে আসে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেয় চায়না এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিআব)।
এছাড়া এ দলে রয়েছে চায়না টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটি, চায়না ন্যাশনাল গার্মেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, ডংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চায়না ন্যাশনাল টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল কাউন্সিস ও আরও ৩১টি প্রতিষ্ঠানের মোট ৪২ জন প্রতিনিধি।
বৈঠকে ফজলে শামীম এহসান বলেন, বাংলাদেশের নিটওয়্যার খাত প্রযুক্তির মানোন্নয়নে বিনিয়োগ করছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কারখানা বাংলাদেশে স্থাপনের জন্য চীনা প্রতিনিধি দলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে চীনের আধুনিক প্রযুক্তি ও জ্ঞান বিনিময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। পাশাপাশি চীন-বাংলাদেশের সহযোগতিপূর্ণ সম্পর্ক এ খাতকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশের নিটওয়্যার শিল্পের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি আখতার হোসেন অপূর্ব। হাই-অ্যান্ড পোশাকের বাজার চ্যালেঞ্জ, নিটওয়্যার খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, চীন-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্ভাবনা, বাজারের প্রবণতা, আন্তর্জাতিক প্রকিউরমেন্ট প্র্যাকটিস এবং টেকসই সাপ্লাই চেইনের মতো বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি। একই সঙ্গে চীনা উদ্যোক্তাদের প্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া বিকেএমইএ সভাপতি একেএম সেলিম ওসমানের পক্ষে আখতার হোসেন অপূর্ব বাংলাদেশে চীন কর্তৃক বন্ডেড ওয়্যারহাউজ তৈরি, বাংলাদেশ-চীন যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে কারখানা পরিচালনা ও নারায়ণগঞ্জের শান্তির চরে নিট পল্লী প্রতিষ্ঠায় অবকাঠামো নির্মাণে চীনের সহযোগিতা চান।
বিকেএমই’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, বন্ডেড ওয়্যারহাউজ, প্রযুক্তির উন্নয়নে দুই দেশের সহযোগিতার মতো বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তৈরি পোশাক খাতে বিশ্বে নেতৃত্ব দানকারী দেশ দুটির এ সম্মিলন এ খাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
বৈঠকে উভয়পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ এবং সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার তৈরি পোশাক খাতে ব্যবসার সুযোগ সম্প্রসারণের মতো বিষয়গুলোও উঠে আসে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি অমল পোদ্দার, মোরশেদ সারোয়ার সোহেল, মোহাম্মদ রাশেদ, পরিচালক আশিকুর রহমান, মোস্তফা মনোয়ার ভূঁইয়া, খন্দকার সাইফুল ইসলাম, রতন কুমার সাহা, আব্দুল হান্নান, খুরশিদ আহমেদ তুনিমসহ অনেকে।
চায়না টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটির পরিচালক ওয়াং ঝেং বলেন, উন্নয়নের জন্য পারস্পরিক সহযোগিতার দরকার হয়। বাংলাদেশ ও চীনের জনসংখ্যা বেশি। এ দুই দেশের জনশক্তিকে কাজে লাগাতে পারলে উন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী। আমরা বিকেএমইএ’র সঙ্গে কাজ করে আনন্দিত। চীন থেকে আপনারা যারা এসেছেন, আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাব, আপনারা এখানকার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবেন।
চায়না ন্যাশনাল গার্মেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াং জিয়াওডং বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। এ ধারায় আমরা আজ এখানে। এদেশের তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্প অত্যন্ত সম্ভবনাময়। এক্ষেত্রে দেশ দুটি একসঙ্গে সহযোগিতামূলক চর্চার মাধ্যমে এ খাতকে আরও অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। এ লক্ষ্যে আমাদের আজকের এ সাক্ষাৎ ফলপ্রসূ হবে বলে প্রত্যাশা করি।
সিয়াবের টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট ব্রাঞ্চের প্রেসিডেন্ট মাইক জি বলেন, চীন সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক এবং বাংলাদেশ দ্বিতীয়। কিন্তু এদের মধ্যে ব্যবধান অনেক। বাংলাদেশ তা কমানোর চেষ্টা করছে। তবে আমাদের সম্পর্ক প্রতিযোগীর নয় বরং সহযোগীর। বাংলাদেশে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আমরা সমর্থন করি এবং এ বিষয়ে চীন সরকারের সঙ্গে আমরা আলোচনা করব। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা দরকার হলে আমরা বিকেএমইএ’র সঙ্গে যোগাযোগ করব।
ডংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব টেক্সটাইল অনুষদের ভাইস ডিন ওয়াং জিয়াফেং বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের উন্নয়নে গবেষণা অব্যাহত রেখেছে। বিকেএমইএতে এ সফর আমাদের জন্য সহায়ক হবে। একই বিষয় নিয়ে গবেষণার জন্য এদেশে আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সুতরাং জ্ঞান বিনিময়ে দেশ দুটি পরস্পরের সহায়ক হতে পারে।
চায়না ন্যাশনাল টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল কাউন্সিলের পরিচালক ইয়ং ইয়াং বলেন, চায়না টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটি অধীনে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আছে। টেকনোলজির বিকাশে পারস্পারিক জ্ঞান বিনিময় খুবই দরকার। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি।
সিআবের নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- চায়না টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটি, সিএনট্যাক ইউনাইটেড টেস্টিং সার্ভিস, চায়না ন্যাশনাল গার্মেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, জিনজিয়াং কেমিক্যাল ফাইবার, জিয়াংসু জেম রিসার্চ ইনস্টিটিউট, চ্যাংঝু মিশেং বায়োমেট্রিক, সুঝউ জিনমিং টেকনোলজি, ইয়ানচেং পলিটেকনিক কলেজ, আমেরিকান অ্যান্ড ইফার্ড, ঝেঝিয়াং ফেংলিং গ্রুপ, চংকিং প্রিন্টিং ডাইং, চেংডু টেক্সটাইল কলেজ, ফুজিয়ান ডংলং নিটিং, ফুজিয়ান হুয়ান নিউ মেটেরিয়াল টেকনোলজি, ইমপ্যাক টেস্টিং টেকনোলজি, শাওজিং ঝেনইয়ং টেক্সটাইল, রেফং ইকুইপমেন্ট, জামেন এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি, নাপা কেমিক্যাল, শাওজিং ইয়াংশি টেক্সটাইল, ঝ্যাংঝউ হেরুই অ্যাডিটিভ, কোয়ানঝু হিলুন ওয়েভিং, শিশি শাংলি টেক্সটাইল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, হিকারি প্রিসাইজ মেশিনারি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, গুয়াংডং কোয়াটারনিয়ান টেকনোলজি লিমিটেড, গুয়াংডং দাইশি জিপার, গুয়াংজু জাইক্সিয়ান ক্লথিং টেকনোলজি, সিটিইএস রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ইলিয়নট্যাক, ইউনাইটেড টেস্টিং সার্ভিসেস, উইজি ইউয়ানচেং মেশিনারি ও চায়না টেক্সটাইল ম্যাগাজিন।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৪
এমআরপি/এসআই