ঢাকা: খেলাপি ঋণ যার যত বড় হয়ে যায়, সে তত বেশি শক্তিমান হয়ে যায়। একজন কৃষককে ১০ হাজার টাকা খেলাপি ঋণের জন্যে জেলে যেতে হয়, আর ১০ হাজার কোটি টাকার শিল্প ঋণের খেলাপিকে সালাম দেওয়া হয়।
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘কনভার্সেশন উইথ ইআরএফ মেম্বার‘ সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (২ মে) পুরানা পল্টনে ইআরএফ অডিটোরিয়ামে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, ২০০৩ সালেও আমার ওপর সুদ মওকুফের চাপ ছিল। আমি সেটা কীভাবে করব! আমার আপনার মতো গ্রাহক ব্যাংকে টাকা রাখি, কিছু সুদ পাই। কিন্তু যত বেশি খেলাপি তত বেশি শক্তিমান। তত বেশি সুদ মওকুফ পায়। এটা একটি নৈতিক অবক্ষয়, এটা করতে হয় না। এটা আমাদের ভাবতে হবে, গণমাধ্যমকর্মীদেরও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল অনেক পরামর্শ দেয়, কথা বলে। কিন্তু মানি লন্ডারিং নিয়ে কোনো কথা বলে না। বছরে ৭০০ কোটি ডলার পাচার হয়। যাদের গায়ে ঘামের গন্ধ থাকে, শরীর ঢাকতে ভালো কাপড় থাকে না। তারা বিদেশে কষ্ট করে দেশে অর্থ পাঠায়। সেই অর্থ পাচার হয়ে যায়। ঋণ খেলাপ, কর খেলাপ এবং মানি লন্ডারিং একই সূত্রে গাঁথা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর আরও বলেন, যারা নিয়মিত গ্রাহক তারা ঋণের ১০ শতাংশ ক্যাশ দিয়ে পুনরায় নিয়মিত (পুনঃতফসিলি) করেন। আর যারা বড় খেলাপি তারা ঋণের দুই শতাংশ ক্যাশ ফেরত দিলেই ঋণ পুননিয়মিত হয়ে যায়। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ঋণ পুননিয়মিত করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়।
পুননিয়মিত করার কারণে ব্যাংকি খাতে এখন অর্থের টান পড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য টাকা ছাপিয়ে বা ট্রেজারি বন্ডে টাকা তোলা হয়েছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে। এগুলো কমানোর একমাত্র পথ হলো খেলাপি ঋণ আদায় করা; মত দেন ড. ফরাসউদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘প্রবলেম’ ব্যাংককে সমস্যা থেকে উত্তরণে একীভূতকরণ একটি ভালো পন্থা। তবে তা আলাপ-আলোচনা করে করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংকের সাথে আলোচনা করছেও। কিন্তু যে ব্যাংককে একীভূত করার কথা হচ্ছে এখন অনেকে অস্বীকার করছে। একীভূত হওয়ার পর চাপ সহ্য করতে হওয়ার ভয়ে এখন অস্বীকার করছে।
উত্তরাঞ্চলের কৃষি উন্নয়নে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) সৃষ্টি হয়েছে। রাকাব ব্যাংক হিসেবে হয়তো ভালো করতে পারেনি। কিন্তু উত্তরাঞ্চলের কৃষির উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। উত্তরাঞ্চলের কৃষির কথা বিবেচনা করে রাকাবকে একীভূত হওয়া থেকে সরে আসতে পরামর্শ দেন ড. ফরাসউদ্দিন।
ইআরএফ-এর সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপ সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, মে ০২, ২০২৪
জেডএ/এমজেএফ