বগুড়া: ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বগুড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পোষা হয় গবাদি পশু। বাড়তি লাভের আশায় কেউ কেউ তিন মাস, কেউ আবার ছয় মাস আগে থেকে গবাদি পশু পালন করতে থাকেন।
জেলার ১২টি উপজেলায় এবার প্রায় সাড়ে ৪৮ হাজার খামার ও বাড়িতে কোরবানির জন্য পশু পালন করা হয়েছে। খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে কোরবানিযোগ্য করে তোলা হয়েছে সাত লাখ ৩৫ হাজার গবাদি পশু।
এবার ঈদুল আজহায় বগুড়ার চাহিদা পূরণের পরও জেলার বাইরে বিক্রি হবে প্রায় ৩০ হাজার পশু।
সোমবার (১০ জুন) জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
বগুড়ায় এরই মধ্যে এসব পশু বিক্রির জন্য জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে তোলা হচ্ছে। দাম-দরে মিলে গেলে বিক্রি করা হচ্ছে। জেলার বাইরের ব্যবসায়ীরাও কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার বাইরের জেলার পশুও এ জেলার ব্যবসায়ীরা কিনে আনছেন। সব মিলিয়ে এ জেলায় কোরবানির পশুর কোনো সংকট নেই, বরং উদ্বৃত্ত রয়েছে অনেক পশু।
তবে গো-খাদ্যের অতিরিক্ত দামের কারণে পশু পালনে খরচ বর্তমানে বেশি হচ্ছে। সে অনুযায়ী প্রত্যাশিত দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন খামারিরা।
এদিকে কোরবানির পশুর দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেলে সংকটে পড়বেন মধ্যবিত্ত কোরবানির দাতারা। সব মিলে চলতি বছরের কোরবানির পশু প্রস্তুতকারী ও কোরবানি দিতে আগ্রহীরা কেউ নেই স্বস্তিতে।
এদিকে গবাদি পশু মোটাতাজা করতে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার রোধে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। খামারি ও পশু পালনকারী ব্যক্তিদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হয় সচেতনতামূলক প্রচারপত্র। পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১২টি উপজেলায় ৪৮ হাজার ৪৫৩ জন খামারি ও ব্যক্তি মোট সাত লাখ ৩৪ হাজার ৪১৫টি গবাদি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে গরু দুই লাখ ৭০ হাজার ৪১টি, ছাগল চার লাখ ২২ হাজার ৬৫৭টি, ভেড়া ও গারল ৩৯ হাজার ৮৫১টি এবং মহিষ দুই হাজার ২৬৬টি। গত বছর পশুর চাহিদা ছিল সাত লাখ চার হাজার ৪৬০টি। এবার সেই চাহিদা বেড়ে হয়েছে সাত লাখ পাঁচ হাজার ২৬০টি। সে ক্ষেত্রে বগুড়ায় পশু উদ্বৃত্ত থাকছে ২৯ হাজার ১৫৫টি। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এসব পশু অন্য জেলায় বিক্রি করা হবে।
খামারিরা বলছেন, চলতি বছর পশুখাদ্যের দাম ও শ্রমিকের মজুরিসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় পশুপালনের খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। এতে বাজারে কোরবানির পশুর দাম গত বছরের চেয়ে বেশি।
বগুড়া সদর উপজেলার দোবাড়িয়া গ্রামের খামারি ফারুক আহম্মেদ জানান, চলতি বছর পশুর খাবার থেকে শুরু করে ওষুধ ও অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়েছে। এবার কোরবানিতে পশুর ভালো দাম না পেলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
বগুড়ার বড় পশুর হাট বনানীতে গিয়ে দেখা যায়, গরু-ছাগলের প্রচুর সরবরাহ রয়েছে। সেই তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা কম। তবে ক্রেতা কম হলেও দাম কমেনি কোরবানির পশুর।
বনানী হাটে কোরবানির গরু কিনতে এসে ফুলতলা এলাকার শাজাহান আলী বলেন, গত বছর যে আকৃতির গরুর দাম ছিল ৯০ থেকে এক লাখ টাকা, এবার সেই রকম গরুর দাম এক লাখ ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার ওপরে চাওয়া হচ্ছে। এতো বেশি দাম হলে কোরবানির পশু কেনা কঠিন হবে।
বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাছরীন পারভীন জানান, গত বছরের চেয়ে এবার বগুড়ায় বেশি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়েও প্রায় ৩০ হাজার পশু জেলার বাইরে বিক্রি করা হবে।
তিনি বলেন, ক্ষতিকর দ্রব্য ব্যবহার করে গবাদিপশু মোটাতাজা না করে প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বাজারে দেশি গরুর চাহিদা বেশি থাকায় এবার খামারি ও কৃষকরা লাভবান হবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৯ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৪
কেইউএ/এসআই