ঢাকা: রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল আজহা। সকালে ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি দেবেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
রোববার (১৬ জুন) রাজধানীর কমলাপুর-গোলাপবাগ ও উত্তর শাহজাহানপুর পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, ছোট-বড়-মাঝারি আকারে বিভিন্ন জাতের গরু নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষা করছেন বিক্রেতারা। সকালে হাটে তেমন ক্রেতা না থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতার সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এমনকি দুপুর গড়াতেই এ তিন হাটের অধিকাংশ গরু বিক্রি হয়ে যায়।
তবে বিক্রি হওয়া গরুর মধ্যে ছোট ও মাঝারি গরুই বেশি। বড় গরুর দাম বেশি থাকায় সেগুলো তুলনামূলক কম বিক্রি হচ্ছে। ফলে বড় গরু নিয়ে হাটে আসা বিক্রেতারা অনেকটা বিপাকেই পড়েছেন। অন্যদিকে ছোট গরু যেসব বেপারি নিয়ে এসেছেন, তাদের বেশ ভালো দামেই সেগুলো বিক্রি করতে দেখা যায়।
হাট ঘুরে দেখা যায়, ছোট আকারের গরু ৭০ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা, মাঝারি আকারের গরু এক লাখ ২০ হাজার থেকে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা এবং বড় গরু আড়াই লাখ থেকে ৫-৬ লাখ টাকা দাম চাচ্ছেন বিক্রেতারা।
ময়মনসিংহ থেকে কমলাপুর পশুর হাটে ৮টি মাঝারি আকারের গরু নিয়ে এসেছেন বেপারি কামাল উদ্দিন। আজ সকালে হাটে এসেই দুপুরের মধ্যে বিক্রি করে ফেলেছেন চারটি গরু। তিনি বলেন, আমার ছোট ভাই এ হাটে ১২টি গরু নিয়ে এসেছিলেন। সবগুলোই ভালো দামে বিক্রি হয়েছে। তাই আজ আবার আটটি গরু নিয়ে এসেছি। হাটে ভালো ক্রেতা আছে। দুপুরের আগে আগেই চারটি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। এখন চারটি গরু বিক্রি করতে পারলেই বাড়ি চলে যাবো।
গাজীপুর থেকে এ একই হাটে ছয়টি মাঝারি আকারের গরু নিয়ে এসেছেন আশরাফুল বেপারি। শনিবার রাতে হাটে এলেও সেদিন আর গরু বিক্রি করতে পারেননি। কিন্তু রোববার সকালে চারটি গরু বিক্রি করেছেন তিনি। আর দুটি গরু বিক্রি করতে পারলেই বাড়ি চলে যাবেন।
আশরাফুল বলেন, এক লাখ ৭০ থেকে দুই লাখ টাকার মধ্যে প্রতিটি গরু বিক্রি করেছেন। হাটে ক্রেতা ভালোই আছে। তবে গরু কম। বেশিরভাগ গরু বিক্রি হয়ে গেছে। ছোট ও মাঝারি আকারের গরুই বেশি বিক্রি হচ্ছে।
তার কথার সত্যতা পাওয়া যায় কুষ্টিয়া থেকে দুটি বড় আকারের গরু নিয়ে আসা দীন মোহাম্মদের সঙ্গে কথা বলে। তিনি বলেন, একেকটা গরু ১৮ থেকে ২০ মন হবে। গত ১৩ জুন হাটে আসছি। শুরুতে একেকটি গরু ৮ লাখ টাকা করে দাম চেয়েছি। তখন চার লাখ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছিল। কিন্তু এ দামে বিক্রি করলে খরচই উঠবে না। এখন কিছু হাতে না রেখে মাত্র পাঁচ লাখ দাম চাচ্ছি। তাও কেউ কিনছে না। উল্টো এখন ক্রেতারা একেকটি গরুর দাম বলছে আড়াই লাখ টাকা। এ গরু একবার ট্রাক ভাড়া করে এনেছি। এ কয়দিন হাটে থেকেছি। এখন এ গরু আবার যদি নিয়ে যেতে হয় তাহলে সর্বস্বান্ত হতে হবে। এমনিতেই এ গরু পালতে গিয়ে ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। সেগুলোই বা দেবো কীভাবে?
দীন মোহাম্মদের মতো আরও অনেক বেপারিকেই বড় গরু নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে।
সাধারণত ঢাকার ক্রেতারা রাখার জায়গার অভাবে ঈদের আগের দিনই কোরবানির পশু কেনেন। তাই প্রতি বছরই ঈদের আগের দিন হাটগুলোতে ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড় থাকে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
ওয়াসিক নামের এক ক্রেতা বলেন, বাসায় গরু রাখার জায়গা নেই। তাই আজ হাটে এসেছি। আজ কিনে রাতটা রেখেই আগামীকাল কোরবানি দিতে পারবো। গরুর দাম গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ কিছুটা কম মনে হচ্ছে। আশা করি কিছুক্ষণের মধ্যেই গরু কিনে বাসায় ফিরতে পারবো।
কমলাপুর পশুর হাট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বদিউজ্জামান বিশ্বাস বলেন, সকালে হাটে ৭০০-৮০০ গরু ছিল। এখন ২০০ গরুও নেই। আজ হাটে ভালোই ক্রেতা আছে। তবে সেই তুলনায় গরু নেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা যতটা প্রত্যাশা করেছি, তেমন বেচাকেনা হয়নি। হাট শুরুর পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার পশু এ হাটে বিক্রি হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫১ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৪
এসসি/আরআইএস