ঢাকা: কন্ট্রাক্ট ফার্মিং (বর্গা বা চুক্তিভিত্তিক চাষ) হলে কৃষকের স্বাধীন সত্ত্বা থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেছেন, কন্ট্রাক্ট ফার্ম কৃষকের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, কৃষি ধ্বংস করে বড় বড় কোম্পানি কাজ করে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের কৃষি শ্রমিক: সংকট ও সমাধান’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
ফরিদা আখতার বলেন, শ্রমিকদের বেঁচে থাকা শুধু মজুরির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। কৃষক ফসলের ন্যায্যমূল্যে পাচ্ছে না, আবার চালের দাম বাড়লে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে অনেক সময় খাদ্যদ্রব্য আমাদানি করতে হয়। কৃষকদের ভর্তুকি দিয়ে ভালো দামে খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ করলে আর আমদানি করতে হবে না। কিন্তু তা আমরা করছি না।
তিনি বলেন, তামাকচাষ দেশে নীল চাষের মতো গড়ে উঠছে। বাধ্য হয়ে বহু কৃষক খাদ্য ফসল বাদ দিয়ে তামাক চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন- যা অত্যন্ত ভয়ানক। তামাকচাষে নারী শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি বেশি, অনেকক্ষেত্রে এ পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত গর্ভবতী নারী শ্রমিকের সন্তান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, পরিকল্পিতভাবে কৃষি যে জিডিপি গুরুত্ব হারাচ্ছে তা আমাদের ভেবে দেখা দরকার। উন্নত হওয়া মানে কৃষির গুরুত্ব জিডিপিতে কমে গিয়ে অন্য সেক্টরে বাড়বে এমনটি নয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও গুরুত্বারোপের আহ্বান জানান।
কৃষিতে সবুজ বিপ্লব ধূসর বিপ্লবে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এ সেক্টরে সার-কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ক্যানসারসহ বিভিন্ন নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ বাড়ছে। এ বিষয়ে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে।
বক্তারা দেশের কৃষিশ্রমিকদের উন্নয়নে বিশেষ করে নারীদের জন্য, যারা নীতিগত কাঠামোতে প্রায়শই অদৃশ্য তাদের ন্যায্য মজুরি, সামাজিক সুরক্ষা এবং সমান সুযোগ প্রদানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান। তারা দেশের কৃষি শ্রমিকদের সমস্যা, মজুরির অসামঞ্জস্যতা, এবং ন্যায্য অধিকার আদায়ের ওপর আলোকপাত করেন। কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম এবং পরিবহন সংকটের কারণে শস্য উৎপাদন ঝুঁকির কথা তারা বলেন।
রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস্ বাংলাদেশের (রিইব) আয়োজনে রিইব পরিচালনা পর্ষদ সদস্য অধ্যাপক এম এম আকাশের সভাপতিত্বে রোসা লাক্সেমবার্গ স্টিফটুং (আরএলএস)-এর সহায়তায় আলোচনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ। এছাড়া আরও বক্তৃতা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, কর্মজীবী নারী সংগঠনের অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক সানজিদা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম খান, রিইবের পরিচালক সুরাইয়া বেগম, আরএলএসের প্রজেক্ট ম্যানেজার ভিনোদ কষ্টি, এএলআরডির ডেপুটি নির্বাহী পরিচালক রওশন জাহান মনি, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রেজা, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মোস্তফা নুরুল আশীন, কৃষি শ্রমিক মিঠু সাকিদার ও রিনা মুন্ডা প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২৪
জিসিজি/এইচএ/