ঢাকা: সারা দেশেই শীতের হিম হাওয়া বইছে। শীতের আগমনী বার্তায় রাজধানীর ফুটপাতগুলোতে শুরু করে নামিদামি শপিংমলেও এখন শীতের পোশাকের চাহিদা বেড়েছে।
সরেজমিনে রাজধানীর গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম মসজিদের পাশের রাস্তা, জিপিও মোড় ও বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স সংলগ্ন এনেক্সকো টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্স এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শীতের প্রকোপ বাড়াতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ব্যবসা অনেকটাই জমজমাট। দেশীয় পণ্যের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন দামের শীতের পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও শৌখিন কম্বলের পুরোটা আমদানিনির্ভর। অন্যদিকে ত্রাণের কম্বল তৈরি হয় দেশেই। কম্বলের পাশাপাশি কমফোর্টার বিক্রিও বেড়েছে। তবে পাইকারি দোকানে ঢাকার বাইরের ক্রেতাই বেশি। দেশের বাজারে কম্বলের মধ্যে রয়েছে হেমার, ক্যাঙারু, ডায়মন্ড কিং, চায়না, কোরিয়ান ও দেশি ডাবল এবং সিঙ্গেল কম্বল।
এছাড়া কম্বলের চেয়ে দাম একটু কম হওয়ায় অনেকে কমফোর্টার ব্যবহার করেন। শীতের মাত্রা এবং ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের কমফোর্টার রয়েছে বাজারে। আর কমফোর্টারের মধ্যে রয়েছে চায়না ও দেশি কোম্পানির।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর কম্বলের দাম একটু বেশি। একদিকে মূল্যস্ফীতি আবার ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানি খরচ বেড়েছে। ফলে খুচরার পাশাপাশি পাইকারিতেও দাম খানিকটা বাড়তি। আবার ক্রেতার সংখ্যাও এখন পর্যন্ত তুলনামূলক কম। ফলে ব্যবসায়ীরা শঙ্কায় রয়েছেন বেচাবিক্রি নিয়ে। কেননা মৌসুমি ব্যবসা হওয়ায় বিনিয়োগ বেশি। কারণ, স্বল্প সময়ে ব্যবসা করতে হয়, তাই বেশি অর্থ লগ্নি করতে হয়। আবার ব্যবসা ভালো না হলে, পণ্য বিক্রি না হলে টাকা আটকে যায়। তখন পরের বছরের জন্য অপেক্ষা করতে হয় তাদের।
এ বিষয়ে এনেক্সকো টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্সের ভিক্টরি ফ্যাশনের ম্যানেজার মো. সফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গতবছলের তুলনায় এবছর বেচাবিক্রি কম। আসলে মানুষের হাতে টাকা থাকলেতো মানুষ কেনাকাটা করে। বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। একেবারে প্রয়োজন ছাড়া কেউ এখন বাড়তি জিনিস কিনে না।
তিনি বলেন, আমরা যেহেতু কম্বল ও কমফোর্টারের পাইকারি ব্যবসা করি তাই আমাদের বেচা বিক্রি ডিসেম্বর মাসেই শেষ হয়ে যাবে। আর আমাদের পণ্য আমদানি করতে হয়। যখনই আমদানির সময় ছিল তখন দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা ছিল। ফলে আমরা এলসি খুলতে পারি না। শুধু আমি না এ ব্যবসার সাথে যারা জড়িত তারা মোটামুটি অনেকেই এলসি খুলতে পারে নাই। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় পণ্য কম এসেছে। এছাড়া ডলারের দাম ১১৫ টাকা থেকে ১২৫ টাকা হয়েছে। এসব কারণে তুলনামূলক এবছর দাম একটু বেশি।
তিনি আরও বলেন, এবছর কম্বলের পাশাপাশি কমফোর্টারও সমান তালে বিক্রি হচ্ছে। কারণ মানুষ এখন একটু রুচিশীল হয়েছে। আমাদের দেশে মূলত সিঙ্গাপুর, দুবাই, হংকং, জাপান, স্পেন, কোরিয়ান ও চায়নার কম্বলের চাহিদা বেশি। আমাদের দেশে যেসব কম্বল বিক্রি হয় তার ৯৫ শতাংশই চায়না পণ্য। সেটা মানুষের চাহিদার কারণে আমরা আনি। এসব কম্বল পাইকারিতে দুই হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। আর ত্রাণ হিসেবে যেসব কম্বল দেওয়া হয় সেগুলো ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৭ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি।
এছাড়া আর কমফোর্টার চায়না থেকে আসে ও দেশ কিছু দেশে তৈরি হয়। আমাদের এখানে কমফোর্টারের দাম ১৫০০ টাকা থেকে শুরু সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা তামের কমফোর্টার আছে। এখন মানুষ কম্বলের সাথে কমফোর্টও নিচ্ছে।
জিপিও মোড়ের কম্বলের খুচরা ব্যবসায়ী মো. সজীব তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় ব্যবসা মন্দা। গত দুই-তিন দিন ধরে বেচাবিক্রি বেড়েছে। তবে এবছর দাম একটু বেড়েছে। বিদেশি কম্বলে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আমাদের কাছে লোকাল কোনো কম্বল নেই। কম দামে ভালো মাল বিক্রি করি, ক্রেতাদের প্রতারিত হওয়ারও সুযোগ নেই।
এখন তেমনভাবে শীত শুরু হয়নি, তাই ক্রেতাদের চাপও নেই। সামনের দিনগুলোতে শীত বাড়লে বেচা বিক্রিও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বায়তুল মোকাররম জুয়েলারি মার্কেটের সামনে কম্বল বিক্রি করেন আবু সায়েম।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তিন চার দিন ধরে বেচা বিক্রি বেড়েছে, শীত যত বাড়বে বেচা বিক্রি তত বাড়বে। আমাদের এখনে চায়না কম্বল বেশি। প্রতিপিস কম্বল ২৫০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত কম্বল আছে। চায়না কম্বলে গত বছরের তুলনায় এ বছর ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। আমাদের পাইকারিতেই বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
বায়তুল মোকাররমের নিউ সুপার মার্কেটের কম্বল ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এবছর ক্রেতা কম। আমাদের এখানে সব ধরনের মানুষ কম্বল কিনতে আসে। ভালো কম্বর বলতে লাগেজ পার্টির কম্বল। সেটা কোনো কপি হয় না। ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত কম্বল ছিল। সিঙ্গাপুর, কোরিয়ান, দুবাই ও চায়না কম্বল বেশি চলে। এখন কম্বলের পাশাপাশি কমফোর্টারও বিক্রি বেড়েছে। সেগুলোর দাম ১৮শ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। চায়না কমফোর্টার চলে বেশি।
শরীয়তপুর থেকে পাইকারি কম্বল কিনতে গুলিস্তানের এনেক্সকো টাওয়ারে আসেন হারুন তালুকদার। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শরীয়তপুরে তার একটি দোকান আছে। দোকানের জন্য কিছু কম্বল ও কমফোর্টার কিনতে এসেছি। এখানে একটু কম দামে ভালো কম্বল পাওয়া যায়। তাই এখান থেকে পাইকারি দামে কিনলে বেশ লাভ হয়। তবে এবছর কম্বলের দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি।
বায়তুল মোকাররম মার্কেটের নিউ সুপার মার্কেটের প্রেসিডেন্ট শোরুমের ম্যানেজার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানে পাইকারি ও খুচরা সব ধরনের পণ্য বিক্রি করি। আমরা সব ধরনের এসি কুইল্ট, নকশীকাঁথা, কম্বল, কমফোর্টার বিক্রি করি। কম্বলের চেয়ে কমফোর্টার ব্যবহার করা সহজ। ওজন কম, সহজে ওয়াশও করা যায়। আর ঢাকায় শীতের যেটুকু তীব্রতা তাতে পাতলা কমফোর্টারই যথেষ্ট। কমফোর্টার সারা বছর ব্যবহার করা যায়। কমফোর্টার সাধারণত চায়না ও দেশি কোম্পানির হয়। এসব কমফোর্টারের দাম ১৫শ থেকে ৬ হাজার টাকা।
সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে কমফোর্টার কিনেছেন পুরান ঢাকার কবির মোল্লা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে কমফোর্টার চলছে বেশি। তাই পরিবারের জন্য একটা কমফোর্টার নিয়েছি। কমফোর্টার আসলে রুচিসম্মত, পরিষ্কার ও ব্যবহারে কোনো ঝামেলা নেই। কম্বল পরিষ্কার করা এবং শুকানো অনেক ঝামেলার। তাই কমফোর্টার আমাদের জীবনটাকে একটু হলো সহজ করে দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪
জিসিজি/এএটি