ঢাকা, শনিবার, ১৯ পৌষ ১৪৩১, ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩ রজব ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাণিজ্য মেলার পর্দা উঠছে বুধবার, এবার যা থাকছে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪
বাণিজ্য মেলার পর্দা উঠছে বুধবার, এবার যা থাকছে মেলার মূল ভবন

ঢাকা: পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ) ২০২৫ শুরু হচ্ছে ১ জানুয়ারি (বুধবার)। মেলার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা।

তবে কিছু স্টলের কাজ বাকি আছে। সেসব স্টলে কাজ চলছে।

এবারের মেলায় অনলাইনে স্টল বরাদ্দ, ই-টিকিটিং, বিআরটিসি ও উবার সার্ভিস, জুলাই চত্বর ও ছত্রিশ চত্বর, ইয়ুথ প্যাভিলিয়ন, বিভিন্ন থিমভিত্তিক সেমিনার, সোর্সিং কর্নার, ইলেকট্রনিকস ও ফার্নিচার জোন, প্রযুক্তি কর্নার, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য সিটিং কর্নার, শিশু পার্ক, উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত স্টলসহ নানা আকর্ষণ রয়েছে।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর)  বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথ উদ্যোগে চতুর্থবারের মতো ওই সেন্টারে মেলা হতে যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. আবদুর রহিম খান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেনসহ আরও অনেকে।

উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দেশের বাণিজ্য মেলা একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা। এটিকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা বলা হলেও দুটি কারণে আন্তর্জাতিক মানের হতে পারেনি। একটি হলো সময়ের কারণে। যেহেতু মাসব্যাপী হয়, তাই আন্তর্জাতিকভাবে যারা অংশ নেন তারা মাসব্যাপী থাকতে চান না, থাকার অসুবিধার কারণে।  

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানের না হওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ হলো স্থানীয় কিছু প্রতিষ্ঠান এবং তাদের অব্যবস্থাপনা। সময়ের ব্যবধানে এসব ঠিক হয়ে যাবে। মোট কথা, মেলায় নাগরিক সুবিধা বাড়াতে আমরা এ বছর থেকেই অনেক নতুন উদ্যোগ নিয়েছি।

বাণিজ্য মেলাকে আন্তর্জাতিক মানের করার বিষয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে বাণিজ্য মেলাকে নিয়ে পর্যটনকেন্দ্র বা বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে ভাবার এক প্রকার ক্রেজ কাজ করে। প্রথম দিকে এটি আমরা বন্ধ করতে চাইনি। তবে এ বছর এ বিষয়ে আমরা একটি মেসেজ দেব। আগামী বছরও (২০২৬ সাল)  মেলায় এমনটি থাকবে, হয়তো ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমানো হবে। ২০২৭ সাল থেকে মেলাটিকে আন্তর্জাতিক মানের করা যাবে।  

সংবাদ সম্মেলনে মেলা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবারের বাণিজ্য মেলায় প্রথমবারের মতো অনলাইনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্টল/প্যাভিলিয়ন স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মেলায় প্রথমবারের মতো ই-টিকিটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইসঙ্গে নারী, প্রতিবন্ধী, সুবিধাবঞ্চিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, কুটির/তাঁত/বস্ত্র/হস্ত শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংরক্ষিত স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।  

মেলা কর্তৃপক্ষ জানায়, মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিআরটিসির ডেডিকেটেড বাস সার্ভিসের পাশাপাশি যুক্ত হচ্ছে বিশেষ ছাড়ে উবার সার্ভিস। এবারের মেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের সম্মানার্থে তৈরি করা হয়েছে জুলাই চত্বর ও ছত্রিশ চত্বর। পাশাপাশি দেশের তরুণ সমাজকে রপ্তানি বাণিজ্যে উদ্বুদ্ধ করতে তৈরি করা হয়েছে ইয়ুথ প্যাভিলিয়ন। একইসঙ্গে মেলায় সম্ভাবনাময় সেক্টর বা পণ্যভিত্তিক সেমিনার আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  

মেলা কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, বিদেশি উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানের সুবিধার্থে থাকছে স্বতন্ত্র সোর্সিং কর্নার, ইলেকট্রনিক্স ও ফার্নিচার জোন। বয়সভিত্তিক দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে প্রযুক্তি কর্নার, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য সিটিং কর্নার। শিশুদের নির্মল চিত্তবিনোদনের জন্য মেলায় থাকছে শিশু পার্ক। পণ্যের প্রসার ও বিপণনের জন্য মেলায় থাকছে উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এ ছাড়া তারুণ্যের শক্তি ও উদ্ভাবনী উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে মাসব্যাপী মেলায় থাকছে বিভিন্ন আয়োজন।

মেলার লে-আউট প্ল্যান অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩৬১টি প্যাভিলিয়ন/স্টল/রেস্টুরেন্ট দেশীয় উৎপাদক-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে শতভাগ স্বচ্ছতায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিকস অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহ সামগ্রী, চামড়া/আর্টিফিসিয়াল চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল, টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর ইত্যাদি পণ্য মেলায় প্রদর্শন ও বিক্রয় করা হবে।

মেলা কর্তৃপক্ষ জানায়, এক্সিবিশন সেন্টারের দক্ষিণ-পূর্ব পার্শ্বে জুলাই চত্বর, দক্ষিণ-পশ্চিম পার্শ্বে কালচারাল সেন্টার, টেকনোলজি কর্নার, রিক্রিয়েশন কর্নার এবং সেন্টারের উত্তর-পূর্ব (৬ একর) পার্শ্বে শিশু পার্ক ও উত্তর- পশ্চিম পার্শ্বে ছত্রিশ চত্বর ও নামাজ ঘর স্থাপন করা হয়েছে।

মেলার সার্বিক নিরাপত্তা এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে মেলা প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র‍্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন। প্রাঙ্গণের বাইরে ও নিয়মিত টহলদল থাকবে। নিরাপত্তা অগ্রাধিকার বিবেচনায় মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, প্রবেশ গেট, পার্কিং এরিয়া এবং সংশ্লিষ্ট সব এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে।

এবারের মেলায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি অধিক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে জানিয়ে মেলা কর্তৃপক্ষ জানায়, এক্সিবিশন হলে পুরুষ ও নারীদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক আলাদা টয়লেটের পাশাপাশি এক্সিবিশন হলের বাইরেও পর্যাপ্ত সংখ্যক টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মেলায় খাদ্যদ্রব্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ গঠিত টিম মেলা চলাকালীন প্রতিদিন ভেজালবিরোধী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে।
মেলায় আগত দর্শনার্থীদের জন্য সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও পেশেন্ট কেয়ার অ্যাটেনডেন্ট উপস্থিত থেকে ফ্রি প্রাথমিক চিকিৎসা ও চিকিৎসা পরামর্শ দেবেন।

মেলায় পর্যাপ্ত কার পার্কিংয়ের সুবিধা থাকবে, এমনটি জানিয়ে মেলা কর্তৃপক্ষ জানায়,  পাঁচ শতাধিক গাড়ি পার্কিং সুবিধা সংবলিত দ্বিতল কার পার্কিং বিল্ডিং ছাড়াও এক্সিবিশন হলের বাইরে ছয় একর জমিতে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ব্যাংকিং সার্ভিসের জন্য মেলায় থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যক ব্যাংক বুথ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪
ইএসএস/আরএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।