ঢাকা: অত্যধিক ঋণগ্রস্ত থাকায় বেক্সিমকোর কারখানাগুলোকে চালানোর জন্য কোনো ব্যাংকই নতুন ঋণ দিতে পারছে না বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এবং বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির আহ্বায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সরকার বিগত ২৪ নভেম্বর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে পারিপার্শ্বিক শিল্প স্থাপনাদি ও জনজীবনে সৃষ্ট অভিঘাত পর্যালোচনা ও তৎপ্রেক্ষিতে করণীয় কার্যব্যবস্থার সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে ১১ সদস্য বিশিষ্ট ‘বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’র শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে এই কমিটির ৫টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক জনতা ব্যাংক পিএলসি থেকে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিক-কর্মচারীদের ৩ মাসের বকেয়া বেতন সংস্থান করা হয়েছে। যার পরিমাণ সেপ্টেম্বরে ৫৫ কোটি টাকা, নভেম্বরে ৫৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, ডিসেম্বরে ৪৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের বেতন উপদেষ্টা পরিষদের পরবর্তী সিদ্ধান্তের আলোকে প্রদান করার প্রস্তুতি রয়েছে।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অর্থ বিভাগ থেকে ৫০ কোটি টাকা এবং সরকারের কেন্দ্রীয় তহবিল হতে ১০ কোটি টাকা সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এখনো পর্যন্ত সরকার মোট ২২৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। অত্যধিক ঋণগ্রস্ত অবস্থায় কারখানাগুলো চালানোর জন্য কোনো ব্যাংকই তাদেরকে নতুন ঋণ দিতে পারছে না।
তিনি বলেন, দেশের মালিক জনগণ এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পরিপূর্ণভাবে জনগণের স্বার্থ রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। এই সরকার সমষ্টিগতভাবে জনগণের স্বার্থকেই অগ্রগণ্য বলে বিবেচনা করে।
তিনি আরও বলেন, হাইকোর্ট বিভাগে চলমান রিট মামলায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্যানেল আইনজীবী পরিবর্তন করা হয়েছে এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আলোচনা করে একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠান বিক্রয়/লিজ প্রদান/ হস্তান্তরের লক্ষ্যে কোম্পানিগুলোর সম্পদ বিবরণী, দায়-দেনা, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে মর্টগেজকৃত সম্পদের বিবরণী, চলমান ব্যবসা ও আয় সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী কোম্পানিগুলোর সম্পদ বিক্রয়/ হস্তান্তর/ লিজ প্রদান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী ২৬ জানুয়ারি বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো চলমান আর্থিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এবং ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি সভা আয়োজন করা হয়েছে। ২৮ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির পরবর্তী সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় সর্বশেষ অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং দায়-দেনা ও সম্পদের বিবরণ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
বিগ্রেডিয়ার ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সরকার শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধে সর্বদা সজাগ এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে উপদেষ্টা কমিটি সর্বোচ্চ সোচ্চার রয়েছে। সরকার লে-অফ হওয়া কর্মচারী ও শ্রমিকদের বাস্তবতা উপলব্ধি করে ধৈর্যের পরিচয় দিতে আহ্বান জানাচ্ছে এবং দেশের স্বার্থে ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
জিসিজি/এসএএইচ