ঢাকা, রবিবার, ১২ মাঘ ১৪৩১, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ রজব ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

হাজার টাকার পুঁজিতে লাখপতি বরিশালের আসমা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৫
হাজার টাকার পুঁজিতে লাখপতি বরিশালের আসমা নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে থ্রিপিস দেখাচ্ছেন একে ফ্যাশনের প্রোপাইটর আসমা আক্তার।

বরিশাল: প্রবাদ আছে, পরিশ্রম সাফল্যের চাবিকাঠি। এই প্রবাদ টিকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন নিজ উদ্যোগে ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে বেকারত্ব ঘুচিয়ে সচ্ছলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বরিশালের মেয়ে, নারী উদ্যোক্তা আসমা আক্তার।

অন্যের দেওয়া কষ্টকে শক্তিতে রূপান্তর করে নিজ উদ্যোগে ক্ষুদ্র আকারে পোশাকের ব্যবসা শুরু করে আজ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যেখানে তিনি আজ পাঁচ হাজার টাকার পুঁজি দিয়ে শুরু করা ব্যবসায় লাখ টাকার বিনিয়োগ করার সক্ষমতা অর্জন করেছেন। এরই মধ্যে বরিশাল শহরে নিজের মাথাগোঁজার স্থায়ী সমাধানসহ দুটি শো-রুমও দিয়েছেন। স্বপ্ন আছে এতিমখানা ও বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তুলে সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর।

নিজের ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে গিয়ে এখন অন্য উদ্যোক্তাদেরও সহায়তা করেন নানাভাবে। আর ছয় বছরে নানা বাধা, বিপত্তি কাটিয়ে তার বর্তমান সফলতায় গর্বিত শুভাকাঙ্ক্ষীসহ সমাজ।

বরিশাল নগরের সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের সামনের একে ফ্যাশনের প্রোপাইটর আসমা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, এক প্রতিষ্ঠানে শিশু-নারী ও পুরুষদের পোশাকসামগ্রী পাওয়া যায় আমার নিজের শো-রুমগুলোতে। সেইসাথে নারীদের কসমেটিক্স সামগ্রীসহ পোশাক তৈরির (দর্জি) ব্যবস্থাও আছে শো-রুমে। এক জায়গাতে বিভিন্ন দামে দেশি-বিদেশি পোশাক পাওয়ায় ক্রেতারাও খুশি থাকেন সবসময়। আর ক্রেতাদের চাহিদার কারণে দিন দিন আমার ব্যবসার প্রসারও ঘটছে।

নারী উদ্যোক্তা আসমা আক্তার বলেন, আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। দ্বিতীয় সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে সেই চাকরি ছেড়ে দেই। এরপর একদিন স্বজনদের কাছে মাত্র দেড়শ টাকা চেয়ে না পেয়ে মনে অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম নিজের জন্য কিছু করার। কারণ ১২ বছর চাকরি জীবনে যা উপার্জন করেছি তার সবটাই তো স্বজনদের জন্য খরচ করেছি, নিজের জন্য কিছুই করিনি তাই এবার নিজের জন্য করতে চাইলাম এবং উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা করলাম।

আসমা আক্তার বলেন, এই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে আমার কাছে থাকা দুটি থ্রি-পিস নিজের লোকদের কাছেই পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করি। আর সেই পাঁচ হাজার টাকার পুঁজি দিয়েই ধীরে ধীরে প্রায় অর্ধযুগ এখন ব্যবসায় লাখো টাকার বিনিয়োগ আছে, দুটো শো-রুম করেছি, নিজের জন্য ফ্ল্যাট কিনেছি। যদিও ঋণ আছে, ব্যবসার মুনাফা দিয়েই সেই ঋণ পরিশোধ করতে পারছি।

বর্তমানে অনলাইন-অফলাইনে বরিশালসহ গোটা দেশে পোশাক বিক্রি করেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসা করতে গিয়ে শুধু যে আমি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছি এমন নয়, আমার দুটো শো-রুম ও গোডাউন মিলিয়ে এখন ৫-৬ জনের কর্মসংস্থানের স্থায়ী ব্যবস্থা হয়েছে, এটা আমার জন্য অনেক আনন্দের। এ কাজটির শুরু থেকে পরিবারের কারও যেমন সাপোর্ট ছিল না, তেমনি সামাজিকভাবেও নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে হয়েছে আমাকে। প্রতিক্ষেত্রেই বাধা-প্রতিবন্ধকতার মাঝেই এগিয়ে চলছি। এখন পর্যন্ত এমন অনেক সমস্যারও সম্মুখীন হয়েছি যে সবটা বলাও যায় না।

আসমা বলেন, আমরা নারী তাই সর্বত্র প্রতিবন্ধকতা থাকবে। সাহস করে শুরু করলেই ভালো কিছু একটা হবেই। আর এ জন্য আত্মপ্রত্যয়ী থাকতেই হবে। সমাজে আইডেন্টিটি হয়ে গেলে তখন আপনার পরিচয়ে গোটা পরিবার পরিচিত হবে। যেমন আমার স্বামীকে এখন অনেকেই বলে আসমার স্বামী। আমাকে এখন অনেকেই চেনেন, সেরকম অন্যদের বেলাতেও পরিচিতি যত বাড়বে, ততই ব্যবসার প্রসার ঘটবে আর ততোই প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। আমার এখানে হয়েছে তাই হয়েছে। বিশেষ করে বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তাদের কর্মসংস্থানের একটা সুযোগ হচ্ছে নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে।

নারী উদ্যোক্তাদের উন্নতি না হলে দেশের উন্নতি আশা করা যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি, এমনকি উদ্যোক্তাদের বিপদে আপদেও পাশে থাকি। কারণ উদ্যোক্তার যদি এগোতে না পারে তাহলে অর্থনীতির চাকাও মন্থর গতিতে চলবে। আমি নিজেও চাই দেশের আনাচে কানাচে কষ্টে দিন কাটানো নারীদের উদ্যোক্তা করতে। কারণ আমি চাইনা কোনো মেয়ে নির্যাতিতা হোক, কোনো মেয়ে যেন পরনির্ভরশীল না হয়। কারণ নিজে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকি সেটা আমি চাই না, সমাজও তো আমার কাছে কিছু আশা করে।

নারীর কাগজে কলমে স্বাধীন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি এ কাজে নেমে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। কারণ ছোট উদ্যোক্তাদের পাশে যেমন কেউ থাকে না, তেমনি নারীরা পারবে সেটাও কেউ বিশ্বাস করে না। আমি রাষ্ট্র ও সরকারকে বলবো স্বল্প মেয়াদে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের মধ্য থেকে উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা করুন। এতে দেশের অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল হবে। আর মনে রাখতে হবে নারীরা কখন ঋণ খেলাপি হয় না, দেশের বেশিরভাগ ঋণখেলাপিতো পুরুষরাই।

তিনি বলেন, দেশি পণ্য কিনে হন ধন্য এ বিষয়টি মাথায় রেখে আমি দেশি পণ্য শো-রুমগুলোতে রাখছি, সেইসাথে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী কিছু বিদেশি পণ্যও রাখা হয়। আমার শো-রুমে নারীদের পাশাপাশি শিশু ও পুরুষদের পোশাকও পাওয়া যায়। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আউটলেট বাড়ানোর পাশাপাশি আমি একটি এতিমখানা ও বৃদ্ধাশ্রম করতে চাই। কারণ আমি এতিমদের হাহাকার বৃদ্ধদের কষ্ট সবই দেখেছি। আর এ দুটো একসাথে করতে পারলে বৃদ্ধ বাবা-মা পাবে সন্তান আর সন্তানরা পাবে বাবা-মা।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৫
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।