ঢাকা: ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গত ৩১ ডিসেম্বরের পর আবারও ট্রাকে করে তেল, ডাল, চিনি, ছোলা ও খেজুর বিক্রি শুরু করছে।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) থেকে ঢাকা মহানগরী ও চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি স্থানে ট্রাকে করে এ ৫টি নিত্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে।
আজ রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়া, কাফরুল ও তেজকুনিপাড়া ঘুরে দেখা গেল, টিসিবির ট্রাকের পেছনে লম্বা লাইন।
রমজানকে সামনে করে টিসিবির পণ্য বিক্রির এসব স্পটে দেখা যায়, নারী, পুরুষ, কিশোর লাইন ধরে অপেক্ষা করছে। প্রায় একমাস আগে এসব এলাকায় সর্বশেষ টিসিবির পণ্য বিক্রি হয়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে খোলা ট্রাকে এই স্থানে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে।
রাজধানীর কাজীপাড়ার খোলার ট্রাকের পেছনে দেখা যায়, টিসিবির পণ্যপ্রত্যাশী মানুষের লম্বা লাইন। গাড়ি দেরিতে আসায় মানুষের লাইনও বড় হচ্ছে। লাইনে শৃঙ্খলা বজার রাখতে হিমসিম খাচ্ছেন টিসিবির পণ্য বিতরণকারীরা।
কাজীপাড়ায় মুকুল আক্তার দেড় মাসের শিশুকে কোলে করে পণ্য নিতে এসেছেন। আগেরবার তার স্বামী পণ্য নিয়ে গেছেন। আজ তার দিনমজুর স্বামী কাজে যাওয়ার কারণে আসতে পারেননি। রোজার পণ্য ছোলা, খেজুর পাওয়া যাবে এজন্য ছেলেকে কোলে নিয়ে এসে লাইনে দাঁড়ান।
মুকুল আক্তারের কোলে ছোট্ট বাচ্চা দেখে টিসিবির ডিলারের লোকজনও তাকে পাশে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। পণ্য বিতরণ শুরু হলে তাকে আগে পণ্য দেওয়া হবে।
রমজানের আগে পণ্য সংগ্রহ করতে গৃহবধূও টিসিবির পণ্যের ট্রাকের সামনে এসে হাজির। সবাই চাচ্ছে কিছুটা সাশ্রয়ে পণ্য কিনতে।
পশ্চিম কাজীপাড়ার নাসরিন আক্তার টিসিবির পণ্য সংগ্রহে এসেছেন। তার স্বামীও দিনমজুর। কাজীপাড়া বিভিন্ন স্থানে কাজ করেন। স্বামী আসতে না পারায় নাসরিন নিজেই এসেছে।
নাসরিন জানান, গত মাসে টিসিবির পণ্য সংগ্রহ করতে পারিনি। তাই এবার আগেই এসে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছি।
লাইনের মধ্যে লোক এসে জোর করে ঢোকার পাশাপাশি নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ এসে হাজির। এ জন্য সহজে মোছা যায় না, এমন কলমের কালি দিয়ে সবার হাতে নম্বর লেখে দেওয়া হচ্ছে। সামনে থেকে হাতে লেখা নম্বর দেখে ২৫০ নারী-পুরুষকে টিসিবির পণ্য দেওয়া হবে; বাকিরা পণ্য পাবেন না। নাসরিন আক্তার, মুকুল, হেমায়েত, রফিকুল সবার হাতে নম্বর লিখে দেওয়া হচ্ছে।
টিসিবির পণ্য নেওয়ার লাইনে হাতে নম্বর লেখাচ্ছেন মো. হেমায়েত উদ্দিন। ষাটোর্ধ্ব হেমায়েত উদ্দিন এবারই প্রথম টিসিবির লাইনে এসেছেন। চাকরির বেতনে আগে সংসার ভালোই চলতো। সাড়ে চার মাস আগে চাকরি হারানোর পর পণ্য সংসার চালানো কঠিন হয়ে গেছে। এখন বাধ্য হয়ে টিসিবির কম দামের পণ্য কিনতে এসেছেন।
হেমায়েতে উদ্দিন বলেন, এ কারণেই আমি টিসিবির লম্বা লাইনে। এর বেশি আর কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না।
এই খোলা ট্রাকে মাসে অন্তত দুইবার পণ্য পেতে চায় অধিকাংশ নিম্নআয়ের মানুষ। মিরপুরের টিসিবির পণ্য নেওয়ার লম্বা লাইনে অধিকাংশ কম আয়ের পরিবারের গৃহবধূ ও কম আয়ের নারী। কাফরুলের খোলা ট্রাক থেকে পণ্য সংগ্রহের লাইনে আমিরুল ইসলাম এই দাবিটাই জোরে-সোরে করলেন।
টিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারী পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্যাদি (ভোজ্যতেল ও ডাল) সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর পাশাপাশি ঢাকা এবং চট্টগ্রামে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্যাদি তেল, ডাল, চিনি, ছোলা ও খেজুর ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে বিক্রি করা হবে।
তারই অংশ হিসাবে রাজধানীতে খোলা ট্রাকে ভোজ্য তেল ২ লিটার প্রতি লিটার ১০০ টাকা, মশুরের ডাল ২ কেজি প্রতি কেজি ৬০ টাকা, চিনি ১ কেজি প্রতি কেজি ৭০ টাকা এবং ছোলা ২ কেজি প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর ৭৮ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে ৫০০ গ্রাম খেজুর।
নির্ধারিত স্থানের ট্রাক থেকে এসব পণ্য সবাই কিনতে পারবে। এ ছাড়া ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমেও পণ্য কেনা যাবে। এ ছাড়া টিসিবি এ মাসে নতুন ছয় লাখ স্মার্ট কার্ড বিতরণ করবে।
নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামের কারণে গত বছরের ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা মহানগরের ৫০টি ও চট্টগ্রাম মহানগরের ২০টি স্থানে টিসিবি পণ্য বিক্রি শুরু করে। পরে একই বছরের এই কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। এক মাস পর সেই কার্যক্রম আবার শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫
জেডএ/এসএএইচ