ঢাকা, সোমবার, ১৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৩ মার্চ ২০২৫, ০২ রমজান ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

স্থিতিশীল বাজারদর, কিছুটা বেড়েছে রোজার পণ্যে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২৫
স্থিতিশীল বাজারদর, কিছুটা বেড়েছে রোজার পণ্যে ফাইল ছবি

ঢাকা: রমজানের প্রথম দিনে বেড়েছে রোজার পণ্যের দাম। ভোজ্যতেলের সরবরাহ কম থাকায় আগে থেকেই পণ্যটি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছিল।

তবে অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ যথেষ্ট পরিমাণে থাকায় এক মাস আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।

রোববার (২ মার্চ) প্রথম রমজানের দিন ও আগের দিন শনিবার রাজধানীর মিরপুর ও ফার্মগেট এলাকার বাজার এবং কারওয়ান বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

মেশিনে ভাজা খোলা মুড়ি ৮০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। শনিবার সকালেও ৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। হাতে ভাজা মুড়ির কেজি উঠেছে ১৫০ টাকায়। এক মাস আগে এই মুড়ি ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেট মুড়ি ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

দুই ধরনের ছোলা ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা থেকে ১২৫ টাকায়। রাজধানীর খোলাবাজারের ১২০ থেকে ১২৫ টাকা কেজি দরের ছোলা সুপারশপে প্যাকেট করে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা দরে। ১০ টাকা বেড়ে ছোলার বেসন বিক্রি হচ্ছে বাজার ভেদে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে। ৭০ টাকার কেজি দরের অ্যাংকরের বেশন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। মিক্স বেসন ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আগের দরে চিকন মসুর ডাল ১৪০ টাকা, বড় ডাল ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

খোলা ছোট বরই খেজুর ৬০০ থেকে বাজার ভেদে ৬৫০ টাকা, খোলা নরম খেজুর ২৫০ টাকা, মরিয়ম খেজুর ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। এসব খেজুর  এক আগেও যথাক্রমে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, ২০০ টাকা ও ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া প্যাকেটজাত খেজুর কোম্পানি ও দেশ ভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে।

ভোজ্যতেলে গত কয়েক মাস ধরেই চাহিদা মতো পাওয়া যাচ্ছে না। সরবারহকারী কোম্পানিগুলো চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ থেকে অর্ধেক সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ দোকানদারের। বিশেষ করে আধা লিটার থেকে এক লিটার ওজনের বোতলজাত তেলের সংকট। এসব তেল কম আয়ের মানুষ ব্যবহার করে থাকে। বাড়তি দাম দিলে তেল কোম্পানির লোকজন তেল সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ করেন অনেক দোকানদার। এজন্য আধা লিটারের বোতলে খুচরা মূল্য ৭৫ টাকা লেখা থাকলেও ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

মিরপুর-১৩ নম্বরের দোকানদার লিটন জানান, কোম্পানির লোকজন চাহিদার অর্ধেক তেল দেয়। বাড়তি দাম দিলে গোপনে পৌঁছে দিয়ে যাচ্ছে। অথবা গোপন ঠিকানায় নিয়ে গিয়ে তেল দিচ্ছে। সয়াবিন তেলের কালোবাজারি শুরু হয়েছে!

লিটন আরও বলেন, কোম্পানি থেকে কম তেল সরবরাহ করার কারণে ডিলার ও কোম্পানির লোকজনরা নিজেরা কিনে রেখে সেই তেল গোপনে দোকানদারের কাছে বাড়তি দামে বিক্রি করছে।

রোজার দিন বেড়েছে সব ধরনের শাকের দাম। বাজারে এখন লাল ও পালং শাকের মুঠা ১৫ থেকে বাজার ভেদে ২০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। আগের মাস  ফেব্রুয়ারির শুরুতে বিক্রি হয়েছে ১০ টাকা দরে। ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে লাউ ও পুঁই শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।

লেবুর দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। প্রতি হালি লেবুর দাম ধরন ভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একই লেবু এক মাসে আগে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা হালি বিক্রি হয়েছে।

ইফতারিতে বেগুনি তৈরিতে লম্বা বেগুনের কদর বাড়ে। ৪০ থেকে ৫০ টাকার লম্বা বেগুন বাজার ভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় উঠেছে। বেশি চাহিদার বড় বেগুনের কদর কমেছে, বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। একই দরে বিক্রি হচ্ছে মাঝারি বেগুন।

রোজায় ১০ থেকে ২০ টাকা দাম বেড়েছে সব ধরনের ফলের। মালটা ধরন ভেদে ৩২০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, আপেল ৩৩০ থেকে ৩৬০ টাকা, কমলালেবু ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা, আঙুর ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, নাশপাতি ৩৫০ টাকা, বেদানা ৪৬০ টাকা ও তরমুজ ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আনার, প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা। রোজা শুরুর আগের দিন পাইকাররা আনারের দাম বাড়িয়েছেন বলে দোকানদাররা অভিযোগ করেছেন।

এ ছাড়া কাঁচাবাজারে বেশির ভাগ পণ্য আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। পটল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, উস্তা ৮০ টাকা, ঢেঁড়শ ১০০ টাকা, মিস্টি কুমড়া ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা, সিম ৫০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, লতি ১০০ টাকা, চিচিংগা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দাম বেড়েছে লাউ, টমেটো ও দেশি শসার।  ৪০ থেকে ৫০ টাকায় মাঝারি সাইজের লাউ, ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বড় লাউ বিক্রি হচ্ছে। ১০ টাকা বেড়ে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। বাজার ভেদে হাইব্রিড শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, দেশি শসা ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আগের দামেই পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, দেশি রসুন ১৩০ টাকা, আমদানির বড় রসুন ২৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজার স্থিতিশীল। প্রায় সব ধরনের মাছ আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। দুই-একটি মাছের দাম বাড়লেও কাঁচকি ও মলা মাছের দাম সামান্য কমেছে। কাঁচকি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, মলা ৩৬০ থেকে বাজার ভেদে ৪০০ টাকা। ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের রুই ও কাতলা ৩৪০ থেকে বাজার ভেদে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোট রুই-কাতলা ২০০ টাকা। টাকি ৪০০ টাকা, বড় শোল ১,০০০ টাকা থেকে বাজার ও ধরন ভেদে ১,২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষের ট্যাংরা ৬০০ টাকা, নদী-বিলের ট্যাংরা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে ৭০০ টাকা এবং মাঝারি বাইম ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রূপচাঁদা ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া ২২০ টাকা, বড় সিলভার কাপ ও পাঙ্গাস ১৯০ থেকে ২০০ টাকা এবং আকারে ছোট্ট মাছ ১৪০ থেকে ধরন ভেদে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বড় আইড় ও বোয়াল ৬০০ টাকা, রুই ৪৫০ টাকা, কাতল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে।

৪০০ গ্রামের ইলিশ ১,২০০ টাকা, ৫০০ গ্রামের থেকে বেশি ওজনের ইলিশ ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত এবং এক কেজি বা বেশি ওজনের ইলিশ ২,২০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

গরুর মাংস এক মাস আগে ৭২০ থেকে ৭৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। রোববার ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস ফেব্রুয়ারি শুরুর তুলনায় ১০০ টাকা বেড়ে ১২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ছাগির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১,০০০ থেকে ১,১০০ টাকা কেজি দরে।

ডিমের হালি ৪৫ টাকা, ডজন ১২৫ টাকা, প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকা পিস। ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা বেড়েছে। ব্রয়লার প্রতি কেজি ২১০ টাকা, সোনালি ৩১০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এবার দুয়েকটি পণ্যের দাম বাড়লেও বেশির ভাগ পণ্যের দাম গত এক মাসের তুলনায় বাড়েনি। যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে, গত বছরের রোজার মাসের তুলানায় এখন পর্যন্ত তা কম। এমনটাই জানালেন বেশ কয়েকজন ক্রেতা। মিরপুর-১৩ নম্বর সেকশনের ক্রেতা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, এবার কয়েকটি পণ্যের দাম কিছুটা বাড়লেও বাজার স্থিতিশীল আছে। এই অবস্থা থাকলেই ভালো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০২৫
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।