ঢাকা: দেশি-বিদেশি লাভজনক ও নামিদামি কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত (লিস্টেড এবং নন-লিস্টেড) কোম্পানির করহারের ব্যবধান ৫ শতাংশ হতে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে।
সোমবার (২ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ একথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি লাভজনক ও নামিদামি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে লিস্টেড এবং নন-লিস্টেড কোম্পানির করহারের ব্যবধান ৫ শতাংশ হতে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে।
এছাড়া, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও লেনদেন বৃদ্ধি উৎসাহিতকরণে সিকিউরিটিজ লেনদেনের মোট মূল্যের ওপর ব্রোকারেজ হাউজসমূহের নিকট হতে উৎসে কর সংগ্রহের হার ০.০৫ শতাংশ হতে হ্রাস করে ০.০৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে স্টেকহোল্ডারদের বাজেটের সুপারিশগুলো যেমন ছিল-
ডিএসইর বাজেট প্রস্তাবনা
পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। সুপারিশগুলো হলো-শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির মধ্যেকার করপোরেট কর হারের ব্যবধান বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করা, বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের বাজারে ধরে রাখতে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর লেনদেনের ওপর থেকে ১ লাখ টাকার বিপরীতে অগ্রিম আয়কর ৫০ টাকার পরিবর্তে ১৫ টাকা করা, সব ধরনের বিনিয়োগকারীর মূলধনি মুনাফাকে করমুক্ত করা, এক লাখ পর্যন্ত লভ্যাংশ আয়কে করমুক্ত করা, এক লাখ-পরবর্তী লভ্যাংশ আয়ের ওপর আরোপিত করকে চূড়ান্ত দায় হিসেবে ঘোষণা করা।
সিএসইর বাজেট প্রস্তাবনা
এদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে আসন্ন প্রস্তাবিত বাজেটে। সেগুলো হলো—কমোডিটি এক্সচেঞ্জকে ৫ বছরের জন্য কর অব্যাহতি প্রদান করা, লভ্যাংশ করের ওপর দ্বৈত করের বিধান প্রত্যাহার করে লভ্যাংশ আয়কে করমুক্ত ঘোষণা করা, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হারের ব্যবধান ন্যূনতম ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করা, এসএমই ও অল্টারনেটিং ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহকে প্রথম তিন বছরের জন্য কর অব্যাহতি দেওয়া, জিরো কুপন বন্ডের মতো অন্য বন্ডগুলি (কর্পোরেট বন্ড, সরকারি সিকিউরিটিজ ইত্যাদি) হতে উদ্ভূত আয়কেও কর অব্যাহতি দেওয়া, স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের নিকট থেকে উৎসে আয়কর কর্তনের হার পূর্ববর্তী ০.০১৫ শতাংশ পুনঃনির্ধারণ করে এ রূপে কর্তিত করকে ব্রোকারেজ ব্যবসা হতে উদ্ভূত সমুদয় আয়ের জন্য চূড়ান্ত করদায় বিবেচনা করা, ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকায় উন্নীত করা, যেসব দেশের সাথে দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি বিদ্যমান আছে সেসব দেশের কোম্পানি কর্তৃক প্রদত্ত পরামর্শ বা কনসালটেন্সি সেবা, কারিগরি বা টেকনিক্যাল সেবা ও সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্সের ওপর উৎসে কর কর্তনের বিধান রাজস্ব বোর্ডের কোনো রূপ সনদপত্র ছাড়া প্রত্যাহার করা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ বা সম্পদ ব্যবস্থাপক কর্তৃক ইস্যুকৃত ইউনিট সার্টিফিকেট এবং মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বোচ্চ সীমা ৫ লাখ টাকা উঠিয়ে দেওয়া।
ডিবিএ’র বাজেট প্রস্তাবনা
আসন্ন বাজেটকে কেন্দ্র করে ডিবিএর পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়। প্রস্তাবগুলো হলো—কোম্পানি ব্যতীত অন্যান্য করদাতার ক্ষেত্রে লভ্যাংশের ওপর ১৫ শতাংশ চূড়ান্ত কর ধার্য করা, কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি কর্তৃক অর্জিত মূলধনী আয় তার প্রারম্ভিক ইক্যুইটির ২০ শতাংশ অথবা ৫০ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি সেটাই মূলধনী আয় করমুক্ত সীমা নির্ধারণ, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোনো সিকিউরিটিজ অথবা বিএসইসি কর্তৃক অনুমোদিত কোনো মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা তহবিলের ইউনিট লেনদেনের মাধ্যমে মূলধনী ক্ষতির সমন্বয় বা জের টানার বিধান রাখা, ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সিকিউরিটিজ লেনদেনের মূল্য পরিশোধকালে ০.০২ শতাংশ হারে কর সংগ্রহ করা, কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ বা সম্পদ ব্যবস্থাপক বা ফান্ড ম্যানেজার কর্তৃক ইস্যুকৃত ইউনিট সার্টিফিকেট এবং মিউচুয়াল ফান্ড ইটিএফ বা যৌথ বিনিয়োগ স্কিম ইউনিট সার্টিফিকেটে যেকোনো পরিমাণ অর্থের বিনিয়োগ থাকলে কর রেয়াত সুবিধা প্রদান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের অধীনে পরিচালিত কোনো স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে তালিকাভুক্ত শেয়ার বা স্টক/মেয়াদী মিউচ্যুয়াল ফান্ড/ট্রেজারি বন্ডসহ যেকোনো সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ থাকলে কর রেয়াত সুবিধা প্রদান, তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংরক্ষিত আয়, সঞ্চিতি, উদ্বৃত্ত ইত্যাদির ওপর কর আরোপ প্রত্যাহার ও তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হারের ব্যবধান ন্যূনতম ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা।
এসএমএকে/এসআইএস