ঢাকা: দেশে সমুদ্র ও বিমানপথে চোরাই সিগারেট আমদানি বেড়েই চলেছে। এ কারণে সরকার প্রতি বছরে প্রায় ১১০ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অভিযোগ করা হয়েছে।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান ব্যতীত আমদানিকৃত বিদেশ সিগারেট বাজেয়াপ্ত ও ধ্বংস করার দাবি’ শীর্ষক মানববন্ধনে বক্তারা এ দাবি করেন।
মানবিক, প্রত্যাশা, এনডিএফ, গ্রীন মাইন্ড সোসাইটি, বাদসা, ঘাসফুল, নদী ও ডব্লিউ বিবি ট্রাস্ট’ এর সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর বক্তারা এ দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, দেশে সমুদ্র ও বিমানপথে চোরাই বিদেশি সিগারেট প্রবেশ করছে। এসব সিগারেট থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, চীন, জাপান ও দুবাই থেকে অবাধে আসছে।
পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরনগরীকে কেন্দ্র করে চোরাই সিগারেটের ব্যবসা রমরমা হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ করেন বক্তারা। দেশী ব্যান্ডের সিগারেট বিক্রি করে খুচরা বিক্রেতা যে পরিমাণ মুনাফা পান চোরাই সিগারেট বিক্রি করে তার চেয়ে ৫ গুণ বেশি মুনাফা পায় তারা।
এসব সিগারেট একটি সংঘবদ্ধচক্র সরবরাহ ও বিক্রি করলেও প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয় না। ফলে সরকার প্রতি বছর চোরাই সিগারেট থেকে প্রায় ১১০ কোটির বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে।
বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম এসব সিগারেটের ঘাঁটি হলেও ঢাকার বড় বড় শপিংমলে এসব সিগারেট অবাধে বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামের রিয়াজুদ্দিন বাজারে প্রকাশ্যে এসব সিগারেট বেচাকেনা হলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
প্রতি জেলায় জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স’ থাকলেও তাদের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে চোরাই বিদেশি সিগারেট বিক্রি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
বক্তাদের দাবি, বিদেশি চোরাই সিগারেটের কারণে দেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমছে না। উচ্চমূল্যের কারণে যেসব তরুণের ধূমপান ছাড়ার কথা সেসব তরুণকে টার্গেট করেই দেশে ঢুকছে এসব চোরাই সিগারেট।
চোরাই সিগারেটের কারণে শুল্কহার বাড়িয়ে তরুণ ধূমপায়ীদের নিরুৎসাহিত করার কৌশল মাঠে মারা যাচ্ছে। আমদানি শুল্কের বাইরে থাকায় চোরাই বিদেশি সিগারেট তরুণরা পাচ্ছে স্বল্পমূল্যে। কোন কোন ক্ষেত্রে দেশে উৎপাদিত বিড়ির চেয়েও সস্তায় মিলছে এসব সিগারেট।
পাশাপাশি স্মার্ট হতে তরুণরা সঙ্গী করে নিচ্ছে ‘সরু অথচ লম্বা গড়নে’র বিদেশি সিগারেট। এসব সিগারেটে প্রচলিত সিগারেটের চেয়ে বেশি নিকোটিন থাকায় ক্ষতির পরিমাণও বেশি।
জোট নেতাদের দাবি, বিদেশি সিগারেট আমদানির ক্ষেত্রে সংশোধিত আইনের ধারা ১০ এর ৩ উপধারা’র তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন আমদানিকারক চোরাই পথে বিদেশি সিগারেট এনে বাজারজাত করছে।
এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রয়োজনীয় ভূমিকা নিলে সরকার যেমন রাজস্ব পেত তেমনি দেশে তরুণ ধূমপায়ীর সংখ্যাও কমে যেত।
সব মিলিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ধূমপান নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বিদেশি সিগারেটের প্রভাব বন্ধ ও বাজেয়াপ্ত করা না গেলে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির পাশাপাশি সরকার বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে বলে মত দেন তারা।
মানববন্ধনে মানবিক এর টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার রফিকুল ইসলাম মিলন, ডব্লিউ বিবি ট্রাস্ট প্রতিনিধি সৈয়দ অনন্যা রহমান, প্রত্যাশা প্রতিনিধি হেলাল আহমেদ, এনডিএফ চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, বাদসা সভাপতি মাহবুব আলম বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৪