ঢাকা: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে পে-কমিশ। এতে সর্বনিম্ন বেতন ৮ হাজার ২’শ ও সর্বোচ্চ সচিবদের ৮০ হাজার টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, রিপোর্ট আজকে দেখলাম। আমাদের ইচ্ছা আছে যাচাই বাছাই শেষে আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করার।
কমিশন বিদ্যমান বেতন কাঠামো ২০টি ধাপ থেকে কমিয়ে ১৬টি করার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রথম ধাপে রয়েছেন সচিবরা। সচিবদের বেতন-ভাতা বিদ্যমান ৪২ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৮০ হাজার টাকা। কোন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হলে তাকে ৪ হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার সুপারিশ করেছে পে কমিশন।
এ ছাড়া সিনিয়র সচিবদের ৮৮ হাজার টাকা, মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিবের সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা বেতনের সুপারিশ করা হয়েছে।
পে-কমিশনের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনের জন্য সপ্তম কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছিলো তখন বাজেটের গড় অনুপাত ছিলো ১৫ ভাগ। আর বর্তমান জাতীয় বাজেটের গড় অনুপাত হচ্ছে ১৪.২ ভাগ।
২০১২ সালে প্রদত্ত শতকরা ২০ভাগ মহার্ঘভাতা নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দিন থেকে বিলুপ্ত হতে পারে। নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন হলে রাজস্ব আয়ের ভিত্তিতে সামান্য ব্যয় বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রস্তাবিত কাঠামোতে ২ সন্তানের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বাবদ ব্যয়সহ ৬ সদস্যের পরিবারের খরচ বিবেচনায় নিয়ে এবারের বেতন কমিশন তাদের সুপারিশ করেছে, যেখানে আগের কাঠামোতে পরিবারের সদস্য সংখ্যা ধরা হয়েছিল ৪জন।
ফরাসউদ্দিন বলেন, বিভাজন সৃষ্টিকারি শ্রেণি বিভাগ রোহিত করা হয়েছে। তার পরিবর্তে গ্রেড এবং ক্লাস দিয়ে পরিচিত হবে। উপনিবেশিক আমলের শোষনযন্ত্র ইবি (ইফিশিয়েন্সি বার) তুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কমিশনের কার্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে সরকারি চাকুরে গণের মধ্যে বিভিন্ন রকম নতুন ভাতা প্রদান ও বিদ্যমান ভাতা বাড়ানোর দাবি প্রবল হয়ে উঠেছে। নতুন বেতন কাঠামোতে যেহেতু বেতন যথেষ্ট বৃদ্ধি পাবে তাতে ভাতা বৃদ্ধি সমীচিন হবে না বলে কমিশন মনে করে।
কিছু ভাতা যৌক্তিকরণ করার পক্ষে মত দিয়েছে কমিশন। এর মধ্যে বাড়ি ভাড়া ভাতা আরও যৌক্তিক করার সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। ৪টি স্তরের সুপারিশ করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিট্রন, চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহর ও সাভার, নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার, জেলা শহর ও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করার সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র বেতনের একটি অংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার বিধানকে যৌক্তিক মনে করে কমিশন। এছাড়া এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে ৬ মাস পর বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে।
লোকসানি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে আলাদা বেতন কাঠামো সমর্থন করে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকে আলাদা বেতন কাঠামো থাকতে পারে। তবে তাতে ১৬টি গ্রেড রাখার সুপারিশ করেছে কমিটি।
সরকারি চাকরিজীবীদের ফ্ল্যাট-বাড়ি
রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মাধ্যমে পুরনো বাড়িগুলো ভেঙে ফ্ল্যাট নির্মাণ এবং খাস জমিতে বাড়ি নির্মাণ করে সরকারি চাকরিজীবীদের দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে কমিশন।
সুপারিশে বলা হয়েছে, ৬০:৪০ অনুপাতে ভিত্তিতে মালিকানার হতে পারে। এ ছাড়া ২০ জন বা ১০ জনের গ্রুপকে ৫ বা ১০ কাঠা জমি দিয়ে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ৫০ মাসের মূল বেতনের সমান ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সাধারণ ভাবে জমি কেনার প্রমাণ সাপেক্ষে ৫০ মাসের মুল বেতনের সমান ঋণ হিসেবে দেওয়ার চিন্তা করা যেতে পারে বলে মনে করে কমিশন।
ফরাসউদ্দিন বলেন, কমিশন মনে করে এই কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে ম্রিয়মান আবাসন খাতে প্রাণের সঞ্চার ঘটবে।
গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে প্রাধিকার প্রাপ্তদের বাইরে ৩ গ্রেডের কর্মকর্তাদের ২৫ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার চিন্তা করা যেতে পারে। তবে আধাসরকারি বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে অনুরূপ গাড়ির ঋণ দেওয়া হলে তার রক্ষনাবেক্ষণ খরচ সেই প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করতে বলা হয়েছে।
মাসে একশ টাকা দিয়ে ৫ বছর পর্যন্ত ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বীমা চালু করা যেতে পারে। বীমার দাবি সরাসরি হাসপাতালে পরিশোধযোগ্য হতে পারে, নগদ প্রদানযোগ্য নয়। এই খাতের অর্থ থেকে ৫শ শয্যার হৃদরোগ হাসপাতাল নির্মাণ করা যেতে পারে। এতে প্রথম বছর টাকা খরচ হলেও পরে আর তেমন অর্থের প্রয়োজন পড়বে না বলে মনে করে কমিশন।
এই ব্যবস্থা নেওয়া হলে বীমা খাতে প্রণের সঞ্চার হতে পারে বলে মন্তব্য করেন ফরাসউদ্দিন।
কমিশন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডেপুটেশন বাতিল ও প্রেশনে থাকা কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভাতা বাতিলের সুপারিশ করেছে।
তিনি আরও বলেন, ইনক্রিমেন্ট চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এ হিসেবে কেউ চাকরিতে যোগ দেওয়ার ১৫ বছরের মধ্যে তার বেতন দ্বিগুণ হয়ে যাবে। অষ্টম ও নবম যোগ করে প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরির প্রবেশপথে ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
৬ বছরের মূল্যস্ফীতি ও প্রতিবেশী দেশের চিত্র পর্যালোচনা করে নতুন এ বেতন কাঠামোর সুপারিশ করা হয়।
এর আগে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য দূর করতে গত বছরের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে ১৭ সদস্যের এ কমিশন গঠন করা হয়।
কমিশনের ৬ মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা থাকলে পরে আরও ৬ মাস বাড়িয়ে এক বছর করা হয়।
নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়িত হলে ১৩ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এর আওতায় আসবেন। এর মধ্যে চাকরিতে সক্রিয় রয়েছেন প্রায় ১১ লাখ। আর দু’ লাখ অবসরকালীন হিসেবে এ সুবিধার আওতায় চলে আসবেন।
সর্বশেষ ২০০৭ সালে সপ্তম পে-কমিশন গঠন করা হয়। যার রিপোর্টের ভিত্তিতে ২০০৯ সালের জুলাই থেকে সর্বশেষ সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়।
বর্তমান কর্মচারীদের বছরে বেতন-ভাতা বাবদ ৩৮ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এ সুপারিশ বাস্তবায়ন করলে ৬৩.৭ ভাগ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।
গত ৫ বছরে ৬৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে যে বিষয়টি বিবেচনা করে কমিশন এই সুপারিশ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ফরাসউদ্দিন।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৪/আপডেটেড- ১৪৪০ ঘণ্টা
** পেনশন ৯০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ
** সচিবালয় কর্মচারীদের বেতন কমিশনের রিপোর্ট হস্তান্তর
** শিক্ষার্থীদের বেতন যাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে