ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ মাঘ ১৪৩১, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬ শাবান ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ক্ষুদ্র ঋণে কিছুই হয়না, হবেও না

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৪
ক্ষুদ্র ঋণে কিছুই হয়না, হবেও না ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ

ঢাকা: ক্ষুদ্র ঋণ দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়, এ ধারণা পুরো পৃথীবিতে। আসলে ক্ষুদ্র ঋণে কোনো সমস্যারই সমাধান হয়না।

এতে কিছুই হয়না, হবেও না।
 
রোববার (২১ ডিসেম্বর) ‘নারীর ক্ষমতায়নে ক্ষুদ্র অর্থায়ন: সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ এ কথা বলেন।

ন্যাশনাল ককাস ফর উইমেন ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট আয়োজিত সভাটি রাজধানীর পিকেএসএফ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়।
 
ড. খলীকুজ্জামান বলেন, নারী ক্ষমতায়ন পুরুষের দান নয়। এটা তাদের প্রাপ্য। মানুষ হিসেবে পুরুষের সমান ক্ষমতায়ন হওয়া নারীর অধিকার। তবে ক্ষুদ্র ঋণ দিলেই নারীর ক্ষমতায়ন হয়না। সব সমস্যার সমাধান হয়না। এতে কিছুই হয়না, হবেও না। কারণ ক্ষুদ্র ঋণ মানেই তো ক্ষুদ্র। তাই আরো বড় পরিসরে ভাবতে হবে।

তিনি বলেন, ৩০-৪০ বছর আগে দুই হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হতো। এখন ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু তুলনামূলকভাবে তখনকার দুই হাজার টাকার মূল্যই বেশি। কাজেই এ ঋণ বাড়াতে হবে।
 
তিনি আরো বলেন, ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে সবার মধ্যে দু’টি ভুল ধারণা আছে। একটি হচ্ছে-নারীদের মাধ্যমে ঋণ প্রদান করা হলে ক্ষমতায়ন হবে। অন্যটি হচ্ছে- যেহেতু ঋণ নিয়ে তারা পরিশোধ করছেন, কাজেই তাদের উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু ভেবে দেখা হচ্ছে না, তারা কিভাবে তা শোধ করছেন।
 
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ২০০৬ সালের জরিপ অনুযায়ী ৭ শতাংশ ঋণ গ্রহীতা দারিদ্রসীমার ঊর্ধ্বে উঠতে পেরেছেন। সম্প্রতি আরেকটি জরিপে ১০ শতাংশের কথা উঠে এসেছে। কাজেই ঋণ পরিশোধ করলেই উন্নয়ন বা সমৃদ্ধি হয়েছে, তা বলা যাবে না।
 
ক্ষুদ্র ঋণে বাংলাদেশ পৃথিবীর কাছে মডেল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরাই নজির স্থাপন করেছি। যে সমস্যাগুলো রয়েছে, তা চিহ্নিত করে আবার সমাধানের পথও দেখছি।
 
সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনান ককাস ফর উইমেন্স ইকোনোমিক এমপাওয়ারমেন্ট এর সদস্য সচিব হোসনে আরা খান।

তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ঋণে সফলতা না আসার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে নারীরা বাজারমুখী নয়। অর্থাৎ তারা উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এজন্যই তাদের ক্ষমতায়ন হচ্ছে না। এছাড়া নারীর হাতে টাকা দিলে তা কোনো না কোনোভাবে পুরুষের হাতে চালে যায়। এসব কারণেই দারিদ্র বিমোচন কিংবা ক্ষমতায়ন কোনোটিই এগুতে পারছেনা।
 
সভাপতির বক্তব্যে ন্যাশনাল ককাস ফর উইমেন্স ইকোনোমিক এমপাওয়ারমেন্ট’র চেয়ারপারসন ড. সাদেকা হালিম বলেন, নারী ক্ষমতায়নের জন্য মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। অনেক সময় নারীদের খাটো করে দেখার মানসিকতা তাদের পিছিয়ে দেয়। পারবেনা, বলেই পুরুষরা তাদের দমিয়ে রাখে। এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
 
সভায় অন্যদের মধ্যে ককাস সদস্য মাহবুবা হক, পিকেএসএফ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল করিম, নির্বাহী ভাইস-চেয়ারম্যান (এমআরএ) খন্দকার মাজহারুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া সারাদেশে থেকে আসা বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) প্রতিনিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।
 
বক্তারা বলেন, দেশে ৩ কোটি ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতা রয়েছেন। এদের মধ্যে দুই কোটি ৭০ লাখই নারী। কিন্তু নারীদের তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। এজন্য শুধু নারী নয়, পুরুষকে অ্যাড্রেস করেও কাজ করতে হবে। নারী-পুরুষ উভয়ের মানসিকতার পরিবর্তন হলেই কেবল ক্ষুদ্র ঋণের সুফল আসবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।