ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অবরোধের বলি

নওগাঁয় বন্ধ হওয়ার পথে চালকল

শফিক ছোটন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৫
নওগাঁয় বন্ধ হওয়ার পথে চালকল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নওগাঁ: ২০ দলীয় জোটের চলমান টানা অবরোধে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের বৃহৎ চালের মোকাম নওগাঁ।   প্রতিদিন প্রায় শত কোটি টাকার লেনদেন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মিল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীরা।



ইতোমধ্যে উৎপাদন বন্ধ বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৮০ ভাগ চালকলে। বেকার হয়ে পড়েছেন এসব কলে কর্মরত অন্তত ২০ হাজার শ্রমিক।

খোঁজে নিয়ে জানা যায়, জেলার ১১ উপজেলায় প্রায় ২ হাজার চালকল রয়েছে। চাল উৎপাদনে মাঝারি আকারের শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে অর্ধশতাধিক।

সব মিলিয়ে প্রতিদিন দেশের বৃহৎ এ চাল উৎপাদন এলাকায় উৎপাদন হয় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন চাল। উৎপাদিত এসব চাল সরবরাহ করা হয় রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন খুচরা ও প‍াইকারি বাজারে। কিন্তু চলামান অবরোধে ভেঙে পড়েছে সেই সরবরাহ ব্যবস্থা। ফলে সরবারহ না থাকায় কলগুলোতে নেই উৎপাদন, তেমনি শ্রমিকদের নেই কাজ।  

নওগাঁ শহরের মশরপুর বাইপাস এলাকার মজুমদার অটোমেটিক রাইস মিলের স্বত্ত্বাধিকারী নৃপেন্দ্র কুমার মজুমদার বাংলানিউজকে জানান, অবরোধের কারণে চাল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া কলে ধানও আনা যাচ্ছে না। আমন  মওসুমের শুরুতে মিলে যে ধান ছিল সেগুলো ক্রাশিং করে চাল উৎপাদন করা হয়েছে। কিন্তু এখন ধানের অভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে কল।

তিনি জানান, কলের উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ থাকলেও ব্যাংক ঋণের সুদ, শ্রমিকের মজুরি, বিদ্যুৎ বিল ও  অন্যান্য ব্যয়সহ প্রতিদিন প্রায় এক লাখ টাকার লোকসান গুণতে হচ্ছে তাকে। এলাকার প্রতিটি কল মালিকদের একই অবস্থা বলেও জানান তিনি।

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি তৌফিকুল ইসলাম বাবু জানান, অবরোধের প্রভাবে জেলার প্রায় ৮০ ভাগ চালকল বন্ধ হওয়ার পথে। কলগুলোতে সব মিলিয়ে শ্রমিক রয়েছে প্রায় ২০ হাজার। এদের প্রায় ৮০ ভাগ শ্রমিক দিনমজুর হিসেবে চাতালে ধান শুকানোর কাজ করে জীবিকা চালান। কলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়ায় বেকার হয়ে পড়েছেন এসব শ্রমিকরাও।

সদর উপজেলার মফিজ উদ্দিন চালকলের শ্রমিক সামছুন নাহার, বেগম, মোসলেম, জিয়াউর জানান, চাতালে কাজ না থাকায় সংসারে দুর্দিন নেমে এসেছে তাদের। দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকে বাধ্য হয়ে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।   

নওগাঁ জেলা ধান-চাউল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোদ বরন সাহা চন্দন জানন, জেলায় চাল ব্যাবসায়ীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। কম-বেশি সবাই ব্যাংক ‌ঋণের ওপর নির্ভরশীল।   অবরোধে চাল সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ায় বছরের শুরুতেই বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা। এতে প্রতিদিন অন্তত কোটি টাকার লেনদেন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।

এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দিনে দেশের বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি বাজারগুলোতে চালের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি পাওয়ার শতভাগ সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি আরো জানান, আড়তদার ও চাল ব্যবসায়ীদের লোকসান হিসাব করলে প্রতিদিন মাঝ‍ারি আকারের একজন ব্যবসায়ীকে অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে জেলার চাল শিল্পকে টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।