ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চলমান অবরোধ

পোশাকশিল্পে সাড়ে ৫’শ কোটি টাকার অর্ডার বাতিল

ঊর্মি মাহবুব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৫
পোশাকশিল্পে সাড়ে ৫’শ কোটি টাকার অর্ডার বাতিল ছবি: ফাইল ফটো

ঢাকা: বর্তমানে চলমান রাজনৈতিক অবরোধে দেশের পোশাক শিল্প থেকে প্রায় সাড়ে ৫’শ কোটি টাকার কার্যাদেশ বাতিল করেছেন আন্তর্জাতিক ক্রেতারা। এমনটাই তথ্য পাওয়া গেছে বিকেএমইএ(বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন) থেকে।



‘কিছুদিন আগেই অর্ডার এসেছিলো প্রায় ২৭ লাখ ডলারের। সামনে নভেম্বরে আমার পণ্য ক্রেতাকে সরবরাহ করার কথা ছিলো। আর তার জন্য সব কাঁচামাল আমদানি শেষ হয়ে যাওয়ার পর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ১৩ জানুয়ারি ক্রেতা তার প্রতিনিধির মাধ্যমে অর্ডার বাতিল করেছে। শুধু আমার কোম্পানিই নয়, রফতানি করছে এমন অধিকাংশ কারখানারই কিছু না কিছু কার্যাদেশ বাতিল করেছেন ক্রেতারা। বাতিল করা কার্যাদেশে টাকার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৫’শ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে’

কথাগুলো বলছিলেন বিকেএমইএ এর পরিচালনা পর্ষদের এক সদস্য। তবে কার্যাদেশ বাতিল হয়ে গেছে এমনটা অন্যান্য ক্রেতারা জানলে তা আরো নেতিবাচক হবে এমন ধারণা থেকে পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি বিকেএমইএ এর এই পরিচালক।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন বিকেএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। এমনকি কার্যাদেশ বাতিল হয়েছে এমন কারখানার তালিকায় রয়েছে মোহাম্মদ হাতেমের এমবি নিট ফ্যাশনের নামও। এমবি নিট ফ্যাশনে ক্যাশিও ও কেইলার নামক দুটি ক্রেতা তাদের কার্যাদেশ বাতিল করেছে। এর পরিমাণ প্রায় ৩৮ লাখ ডলার বলে জানান মোহাম্মদ হাতেম।

মোহাম্মদ হাতেম বাংলানিউজকে বলেন, আমার স্পেন ও ফ্রান্সের দুটি ক্রেতা ক্যাশিও ও কেইলার তাদের কার্যাদেশ তুলে নিয়েছে। দুটি ক্রেতার মোট ৩৮ লাখ ডলারের কাজ পেয়েছিলাম। পণ্য তৈরির কাজও কারখানায় শুরু হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু এরইমধ্যে অবরোধের জ্বালাও পোড়াও বিশ্ব মিডিয়ার মাধ্যমে তারা দেখে এ দেশে থেকে এখন কোনো পণ্য নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। আমার কিছুই করার নেই। প্রতিদিনই কোনো না কোনো উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে কার্যাদেশ বাতিল হয়ে যাওয়ার খবর পাচ্ছি।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক ক্রেতা ম্যাগপাই বাংলাদেশের কয়েকটি কারখানা থেকে তাদের কার্যাদেশ তুলে নিয়েছে বলে জানা যায় পোশাক প্রস্তুতকারী ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ থেকে। বিজিএমইএ এর তথ্য মতে, ম্যাগপাই একটি কারখানা থেকেই প্রায় ৩৬ লাখ ডলার  মূল্যের কার্যাদেশ বাতিল করেছে।

উদ্যোক্তারা যে কার্যাদেশ পেয়েছিলো তা কেবল মাত্র রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাতিল হয়ে যাওয়া ভাল লক্ষণ নয় বলে জানান বিজিএমইএ এর সহ-সভাপতি মোঃ শহীদুল্লাহ আজীম।

এসব কারণে চলতি অর্থ বছরে পোশাক রফতানির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে তাও অর্জন সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ এর এই সহ-সভাপতি।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ২৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন কার্যাদেশ পাওয়া তো দূরের কথা আগের কার্যাদেশই বাতিল হয়ে গেছে। এর ফলে পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।

অন্যদিকে অনেক ক্রেতাই বাংলাদেশকে কার্যাদেশ দেয়ার জন্য আসার কথা থাকলেও তারা তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করছে। এরইমধ্যে যারা জিন্সের সঙ্গে জার্মানির ক্রেতা আলডির বৈঠকের কথা থাকলেও তা বাতিল হয়েছে। কার্যাদেশ চাইলে যারা জিন্সের প্রতিনিধি দলকে জার্মানি যেতে হবে বলে জানিয়েছে আলডির কর্মকর্তারা বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহেদী হাসান রানা।

চলতি বছরে এই অবরোধ চলতে থাকলে পুরনো ক্ষতির সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড তৈরি হবে বলে জানান বিজিএমইএ  সহ-সভাপতি মোঃ শহীদুল্লাহ আজীম।

বিজিএমইএ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, একদিনের হরতালে ৬৯৫ কোটি টাকার রফতানির পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে পোশাক শিল্পের উৎপাদন হরতাল বা অবরোধের একদিনে ব্যাহত হয় ২১৫ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ সময়ঃ ১৪২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।