ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঘর সাজাতে আড়ংয়ের পণ্য

মোস্তফা ইমরুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১৫
ঘর সাজাতে আড়ংয়ের পণ্য ছবি: দীপু মালাকার- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা থেকে: পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছিমছাম ঘর। পরিপাটি শয়ন কক্ষ।

খোলা জানালা। তার পাশের দেয়ালে সুতোয় বোনা নকশীকাঁথার ওয়ালমেট। নরম সোফা। তাতে হাতের কাজ করা কুশন কভার। ঘরজুড়ে বাহারি ডিজাইনের বেতের তৈরি প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ফার্নিচার। ভাবুন তো, আপনার ঘরটি যদি এমনভাবে ‍সাজানো থাকে, তবে কেমন লাগবে? নিশ্চয় বলবেন ‘স্বপ্নের সাজানো ঘর’।

এই স্বপ্নের ঘর সাজাতে ক্রেতাদের পছন্দের জায়গা আড়ং। ঘর সাজানোর পণ্যে আবার আড়ং কেন- এমন প্রশ্ন আসতে পারে অনেকের মনে। কারণ, আড়ং তো দেশের সেরা কাপড়ের প্রতিষ্ঠান হিসেবেই মানুষের কাছে পরিচিত। কিন্তু এর বাইরে ঘর সাজানোর পণ্য তৈরিতেও আড়ংয়ের রয়েছে অন্যরকম সুনাম। কেবল সুনামই নয়, হাতের তৈরি ঘর সাজানোর পণ্য সরবরাহেও সেরার খেতাব আড়ংয়ের।

এসব পণ্য নিয়ে আড়ং ক্রেতার কাছে হাজির হয়েছে রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় দু’দিনব্যাপী হোম ফেস্ট মেলায়। মেলায় স্টল নিয়ে বসেছে ঘর সাজানোর নানা অনুষঙ্গ তৈরির ৩০টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানও তাদের স্টলে রেখেছে আড়ংয়ের বিভিন্ন পণ্য।

মেলায় গিয়ে দেখে-শুনে পছন্দসই পণ্যটির অর্ডার দিতে পারেন যে কেউ। তাছাড়া, ঘরে বসেও আড়ংয়ের ওয়েবসাইট (http://www.aarong.com/) থেকে কেনা যাবে পছন্দের পণ্য। এতে লাগবে না কোনো প্রকার ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর)।

আড়ংয়ের কর্মকর্তাদের মতে, বাজারে যতো পণ্য আছে, তার মধ্যে আড়ংয়ের পণ্য সবার চেয়ে ভিন্ন। কেন ভিন্নতা তাদের পণ্যে? কারণ তাদের সব পণ্যই হাতের তৈরি। গ্রামের অল্প শিক্ষিত দক্ষ কারিগররা তাদের এ পণ্য সযত্নে তৈরি করেন। তাও আবার একজন দু‘জন নন, আড়ংয়ের পণ্য তৈরিতে কাজ করেন ষাট হাজার কারিগর। রাতদিন পরিশ্রম করে নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় দেশের মানুষের কাছে তারা তুলে দিচ্ছেন মনোমুগ্ধকর ডিজাইনের এসব পণ্য।

আড়ংয়ের ফার্নিচারগুলো তৈরি হয় রাতান থেকে। রাতান হলো এক প্রকার বেত। এই বেতকে ছুরি দিয়ে ছেঁচে সরু বানানো হয়। তারপর সেসব দিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন ফার্নিচার। ফার্নিচারের এসব কাঁচামাল আমদানি করা হয় ইন্দোনেশিয়া থেকে।

বিভিন্ন পণ্যকে ডায়নিং, লিভিং, ডেকোর ও ফার্নিচার- অর্থাৎ চার ভাগে ভাগ করে তৈরি করে আড়ং। এর মধ্যে রয়েছে সোফা, চেয়ার টেবিল, কফি টেবিল, ডায়নিং ও বেড। কেবল ফার্নিচারই নয়, আড়ং ঘর সাজানোর ছোটখাট পণ্যও তৈরি করে।   এরমধ্যে ব্রাশ নভেলটিস, মোমবাতি, আয়না, নকশীকাঁথা ও ওয়ালমেটের কথা উল্লেখ করা যায়। এছাড়াও তারা তৈরি করে থাকে কুশন কভার, বেড কভার, রাগ, কার্পেট, বাতি, টেবিল ক্লথ, কাপ, মগ, জগ ও তাওয়েলসহ বিভিন্ন পণ্য।

শুক্রবার (৬ নভেম্বর) মেলার স্টলে আড়ংয়ের মার্কেটিং ম্যানেজার তানভীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, দেশের ৪০টি গ্রামের ৬০ হাজার কারিগর দিয়ে আড়ংয়ের তৈরি পণ্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। এ প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কৃত লভ্যাংশের কিছু চলে যায় ব্র্যাকে। সেখানে গিয়ে তা ব্যয় করা হয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন সেবামূলক খাতে। ফলে দেশের টাকা দেশেই থেকে যায়।

তিনি বলেন, এই আড়ংই দেশে প্রথম নকশীকাঁথাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। সেই তাগিদ থেকেই জামালপুর, মানিকগঞ্জ ও যশোরের নারীদের দিয়ে তৈরি করে নকশাযুক্ত কাঁথা।

তানভীর হোসেন বলেন, আড়ং পণ্যে দাম বেশি রাখা হয় বলে অনেকে অভিযোগ করেন। কিন্তু কেউ কি জানেন, একটি নকশীকাঁথা তৈরি করতে কতো সময় লাগে? কতো ব্যয় হয়? একটি নকশীকাঁথা তৈরিতে এক মাস ধরে আটজন নারী কাজ করেন।

আড়ংয়ের লক্ষ্য নিয়ে তিনি বলেন, রাতানের (বেত) ফার্নিচারের পাশাপাশি আরও কিছু উপাদান দিয়ে ফার্নিচার তৈরি করবো আমরা। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করছে। আমরা এবার রাতান ছাড়াও বাঁশ, কাঠ ও অন্যান্য উপাদান ব্যবহার করবো। এ জন্য চলছে পরীক্ষামূলক গবেষণার কাজ।

সারাদেশের মানুষের চাহিদা মেটাতে আড়ং খুলেছে ১৫টি আউটলেট। এরমধ্যে ঢাকায় রয়েছে ৯টি। এগুলো আছে- বনানী, উত্তরা, ধানমন্ডির সিটি কলেজ ও আসাদ গেট, যমুনা ফিউচার পার্ক, গুলশান, মিরপুর মগবাজার, ওয়ারীতে। আর চট্টগ্রামে ষোলশহর ও হালিশহরে রয়েছে দু‘টি। একটি করে আউটলেট রয়েছে কুমিল্লা, খুলনা, সিলেট ও নারায়ণগঞ্জে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৫
এমআইকে/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।