ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৫
আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ভোলা: রোগ ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ ছিলনা। তাই ভোলায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে।

কৃষকের বিস্তীর্ণ ফসলের খেত থেকে ভেসে আসছে এখন পাকা ধানের ঘ্রাণ।
 
বিগত বছরের তুলনায় এ বছর আমন ধানের ফলন ভালো হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকদের মধ্যে। দুই-একদিনের মধ্যেই ধান কাটা শুরু করে গোলায় তুলবেন তারা। এ ধান বিক্রি করে লাভবান হতে পারবেন -এমন আশা তাদের চোখে-মুখে।

কৃষকরা জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে আমন আবাদ করে ভাগ্য খুলেছে তাদের। এছাড়া, মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, জেলায় এ বছর ১ লাখ ৮২ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে উফশী ও স্থানীয় জাতের আমন ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮০ হেক্টর উফশী ও ৭৬ হাজার ৯৪৫ হেক্টর স্থানীয় জাতের আমন রয়েছে।
 
চলতি মৌসুমে সদর উপজেলায় ২৫ হাজার ৬৪৫ হেক্টর, দৌলতখান উপজেলায় ১৪ হাজার ২৮০ হেক্টর, বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ২১ হাজার ৭০০ হেক্টর, তজুমদ্দিন উপজেলায় ১১ হাজার ১৫০ হেক্টর, লালমোহন উপজেলায় ২৫ হাজার ৬৬০, চরফ্যাশন উপজেলায় ৭১ হাজার ৭৯০ হেক্টর  ও মনপুরা উপজেলায় ১২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় ও উফশী জাতের আমনের আবাদ হয়েছে।

জেলায় এ বছর আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার ৫২৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে।

সদর উপজেলার আলীনগর, ভেলুমিয়া, ভেদুরিয়া, ধনিয়া, ইলিশাসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কৃষকের বিস্তীর্ণ ফসলের খেতে আমনের  সমারোহ। পাকা ধানের খেতে কৃষকের হাসি মুখ। আমন উৎপাদনের খরচ পুষিয়ে লাভের আশা করছেন চাষিরা। কেউ কেউ ধান কাটা শুরু করে দিয়েছেন। আবার কেউ ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

চাষিরা জানান, গত কয়েক বছর থেকে এ মৌসুমে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় বাজার দরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সদরের সাচিয়া গ্রামের ধান চাষি আলাউদ্দিন বলেন, এ বছর ৬ গণ্ডা জমিতে আমদের আবাদ করেছি, খেতে কোনো পোকা মাকড়ের আক্রমণ ছিল না। ফলন অনেক ভালো হয়েছে।

ধান চাষি হানিফ জানান, জমি চাষ থেকে শুরু করে  চারা রোপন, আগাছা দমন, সার-ওষুধ প্রয়োগ ও খেতের নিয়মিত পরিচর্যা করেছি। ফলনও এবার অনেক ভালো। উৎপাদন খরচও হয়েছে কম।

২ একর জমিতে আমনের আবাদ করেছেন ধান চাষি সিরাজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ১০ হাজার টাকা উৎপাদন খরচ হয়েছে। এবার একর প্রতি ৪০/৪৫ মন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এ মৌসুমে ফসলের খেতে কোনো বিপর্যয় দেখা দেয়নি।

একই কথা জানান আবু তাহেরসহ স্থানীয় অন্যরা। তারা জানান, নিজের পুঁজি, এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আমনের আবাদ করেছেন তারা। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তাই ধান বিক্রির টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ ও আনুষঙ্গিক খরচ পুষিয়ে লাভবান হবেন তারা।

শুধু জেলা সদর নয়, এ বছর দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। সেখানকার কৃষকের মধ্যেও হাসি ফুটেছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। আগামীতে বিপুল উৎসাহ নিয়ে তারা আমন আবাদে ঝুঁকে পড়বেন বলে জানান তারা।

এ ব্যাপারে ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রশান্ত কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ  দেওয়া হয়েছে। যখনই কৃষকরা কোনো সমস্যায় পড়েছেন তাৎক্ষণিক মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বে নিয়োজিত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা তাদের পরামর্শ দিয়েছেন।

এছাড়াও ফসলের খেতে ক্ষতির  আশঙ্কায় স্কোয়াড গঠন করা হয়েছে। বিতরণ করা হয়েছে লিফলেট। কৃষকদের বাড়ি বাড়ি উঠান বৈঠকও করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় ফলন অনেক ভালো। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ বেশি হয়েছে। এতে কৃষকরা আগামীতেও আমন আবাদে আগ্রহী হবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০১২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৫
এমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।