ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পাথরের ডাস্ট নিয়ে বিপাকে মধ্যপাড়া খনি কর্তৃপক্ষ

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৬
পাথরের ডাস্ট নিয়ে বিপাকে মধ্যপাড়া খনি কর্তৃপক্ষ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পার্বতীপুর (দিনাজপুর): দিনাজপুরের পার্বতীপুরে মধ্যপাড়া খনিতে মজুদ বিপুল পরিমাণ পাথরের ডাস্ট (পাথরের গুড়া) নিয়ে বিপাকে পড়েছে খনি কর্তৃপক্ষ। ডাস্ট বিক্রিতে কোনো অগ্রগতি নেই।



ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ডাস্টের চাহিদামত ক্রেতা না মিললে স্থান সংকটে পড়বে খনিটি। দেশীয় শিল্প কারখানা ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকলেও ডাস্ট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে ড্রিলিং, ব্লাস্টিং, ক্র্যাশিং ও সর্টিং করার পর ১৩-১৪ শতাংশ ডাস্ট বের হয়। এ হার ৭-৮ শতাংশে কমিয়ে আনা গেলে একদিকে যেমন পাথরের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় খনির আয় বেড়ে যাবে, অপরদিকে ডাস্ট নিয়েও খনি কর্তৃপক্ষকে চিন্তায় পড়তে হবে না।

খনি সূত্রে জানা গেছে, খনি ভূ-গর্ভ থেকে কয়েক ধাপে পাথর ভেঙে বিভিন্ন সাইজে রুপান্তর করে তা উত্তোলন করা হয়। পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে ড্রিলিং, ব্লাস্টিং, ক্র্যাশিং ও সর্টিং করার পর ১৩-১৪ শতাংশ ০-৫ (শুন্য থেকে ৫ মিলিমিটার) মিলিমিটার আকারের ডাস্ট বের হয়। এ হার ৭-৮ শতাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

খনি থেকে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টন পাথর উত্তোলন করা হয়। এ পরিমাণ পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টন ডাস্ট বের হয়। অথচ ৭-৮ শতাংশ হলে ডাস্ট বাহির হতো ৩০০-৪০০ টন। প্রতি টন ডাস্টের বিক্রয় মূল্য ৫.৯ ডলার আর প্রতিটন পাথরের গড় বিক্রয় মূল্য ২৫ ডলার। এ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করে খনিটি ধীরে ধীরে লাভজনক প্রতিষ্ঠানের দিকে এগিয়ে যেতে পারতো।

সূত্র মতে, দেশের গৃহ নির্মাণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান গবেষণা প্রকৌশলী মঈন উদ্দীন আহম্মেদের ২০০৪ সালে প্রদত্ত এক রিপোর্ট অনুযায়ী মধ্যপাড়া খনি পাথরের ডাস্ট যে কোনো নির্মাণ শিল্পে ব্যবহার করতে কোনো বাধা নেই। বরং ডাস্ট ব্যবহার বাড়াতে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ওই রিপোর্টে। ডাস্ট সহজেই  সিমেন্ট বালুর সঙ্গে মিশে যায়। পানি শোষণ ক্ষমতা সন্তোষজনক বিধায় নির্মাণ কাজ হয় শক্তিশালী। ওই রির্পোট অনুযায়ী মধ্যপাড়া খনির পাথরের ডাস্ট ব্যবহার করে ঘরের মেঝে ঢালাই, দেয়াল প্লাস্টার, পানির ট্যাংক তৈরি, সেচ নালা তৈরি, বোল্ডার তৈরি ও বাঁধ নির্মাণে ব্যবহার করলে সিমেন্টের পরিমাণ কম লাগবে।

অপরদিকে ডাস্টে সিলিকন অক্সাইড, ফেরিক অক্সাইড, এ্যালুমেনিয়াম অক্সাইড, ক্যালসিয়াম অক্সাইড ছাড়াও রয়েছে ক্লোরাইড সালফেট। যা এএসটিএম ভাবে পরীক্ষিত।

সূত্র মতে, পাথরের ডাস্ট সিমেন্ট ও টাইলস তৈরির অন্যতম কাঁচামাল। ডাস্ট থেকে বর্তমানে ইট, সিমেন্ট, ডেকোরেশন টাইলস তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে বসুন্ধরা ও মেঘনা সিমেন্ট কোম্পানি শুধু এখানকার ড্রাস্ট ব্যবহার করছে। এছাড়া, এলজিইডি রাস্তা কার্পেটিং কাজে মোটা বালুর পরিবর্তে ডাস্ট ব্যবহার করে সফলতা পাওয়া যাচ্ছে।

সড়ক ও জনপদ বিভাগ ও এলজিইডির রাস্তা কার্পেটিং কাজে মধ্যপাড়ার পাথরের ডাস্ট ব্যবহারে সরকারি বাধ্যবাধকতা থাকা প্রয়োজন। মধ্যপাড়া থেকে সড়ক ও রেলপথে দেশের যে কোনো প্রান্তে সহজেই ডাস্ট ও পাথর পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে সূত্র জানায়।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমিনুজ্জামান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে জানান, খনি ইয়ার্ডে বর্তমানে প্রায় দেড় লাখ টন ডাস্ট মজুদ রয়েছে। গড়ে প্রতিদিন ২০ মেট্রিক টন ডাস্ট বিক্রি হচ্ছে। ডাস্ট বিক্রি বাড়াতে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাথর উৎপাদনকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসিকে ডাস্টের পরিমাণ কমিয়ে আনার জন্য বলা হয়েছে। তাছাড়া পুরোনো যন্ত্রপাতি দিয়ে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে ডাস্টের পরিমাণ বেড়ে গেছে। নতুন যন্ত্রপাতি দিয়ে উৎপাদন শুরু হলে ডাস্টের পরিমাণ কমে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে এমডি বলেন, গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে খনির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে এবং মজুদ পাথরও বিক্রি শেষ হয়েছে। বিদেশ থেকে মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট জাহাজে করে নিয়ে আসা হচ্ছে। চলতি মাসের শেষের দিকে যন্ত্রপাতি খনি এলাকায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে। যন্ত্রপাতি এলেই তা ভূ-গর্ভে বসিয়ে পাথর উৎপাদন শুরু করা হবে। মার্চের প্রথমার্ধে পুরোদমে পাথর উত্তোলন শুরু করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।