ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

খিলগাঁও কমিক ক্যাফে

অফারের কৌশলে ভ্যাট ফাঁকি!

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৬
অফারের কৌশলে ভ্যাট ফাঁকি!

ঢাকা: কখনো পাস্তা, কখনো কফি আর কখনো মজেরলা চিজের মতো মুখরোচক সব খাবারে দেয় ‘একটা কিনলে একটা ফ্রি’ অফার। ছাড়ও দেয়, তবে তা ভ্যাট বা মূসক!
 
মাসে দেয় নামমাত্র মূসক।

সে মূসক অফারের কৌশলে ভোক্তা থেকে উঠিয়ে নেয়। ‘অসাধু’ মূসক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দেয় ‘ফিক্সড ভ্যাট’! ফলশ্রুতিতে অভিযান!
 
‘অফার’ আর ‘ফিক্সড ভ্যাটে’র কৌশলে দীর্ঘদিন ধরে মূসক ফাঁকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার কমিক ক্যাফের বিরুদ্ধে।
খিলগাঁও তালতলা নাইটিঙ্গেল হাইটস ভবনের ৫ম তলায় কমিক ক্যাফে। এছাড়াও ধানমন্ডি এলাকায় কমিক ক্যাফের আরো একটি শাখা রয়েছে।
 
ভোক্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর ‘কমিক’ স্টাইলে ‘বিক্রি পাহারা’ দিয়ে এ সত্যতা পেয়েছে। মূসক গোয়েন্দার একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
 
সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটি পাস্তা’র জন্য বিখ্যাত। এছাড়া পিজা, ফাস্ট ফুড, কাবাব অ্যান্ড কারিসহ রয়েছে সব মুখরোচক খাবার। ছোট পাটি, জন্মদিনের অনুষ্ঠান লেগেই থাকে।
 
অর্ডারের এক ঘণ্টার মধ্যে ‘ফুডপান্ডা’ আর ‘হাংরিনাকি’র মাধ্যমে হয় হোম ডেলিভারি। ক্যাফেতে জায়গা না পেয়ে থাকতে হয় ‘গেস্ট ওয়েটিং’ লিস্টে।
 
এতোসব আয়োজনের পরও গলদ ‘অফারে’। অফারে ছাড়ের নামে ভ্যাটে দেয় ডিসকাউন্ট। তাও ভোক্তাদের কাছ থেকে ভ্যাট নেয়, কিন্তু সঠিকভাবে জমা দেয় না।
সূত্র আরও জানায়, ভ্যাট নেয় নিজস্ব চালানে, ভ্যাট চালান দেয় না। ব্যবহার করে না ইসিআর। আর অফার কৌশলে ভ্যাট ফাঁকিসহ নানা অভিযোগ করেন ভোক্তারা।
 
গোয়েন্দারা প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পান।

সম্প্রতি দু’টি শাখায় পাস্তা, মজেরলা চিজ আর কফির তিনদিনের ‘একটা কিনলে একটা ফি’ অফার দেওয়া হয়। এভাবে প্রতিমাসে কয়েকবার অফার দিয়ে মূসক পকেটস্থ করে প্রতিষ্ঠানটি। অফারের শেষদিন খিলগাঁও শাখায় দু’জন মূসক গোয়েন্দা প্রায় ‘চার ঘণ্টা’ পাহারা দেন।
 
গোয়েন্দারা হাতে নাতে পেয়ে যান প্রমাণ। দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ইসিআর ব্যবহার করে না, নেয় ভ্যাট, কিন্তু দেয় নিজস্ব চালান।

হিসেব করে দেখা যায়, চার ঘণ্টায় বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫৬ হাজার টাকা। যেখানে ভ্যাট প্রযোজ্য হয় সাড়ে ৮ হাজার টাকা। অথচ প্রতিষ্ঠানটি জানুয়ারি মাসে মূসক (ফিক্সড ভ্যাট) দিয়েছে মাত্র ৫ হাজার টাকা।
 
একদিনে চার ঘণ্টায় বিক্রি ৫৬ হাজার টাকা। পূর্ণ সময় বিক্রি হলে লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতো। তিনদিনে এক শাখায় তিন লাখ টাকার বেশি বিক্রি হয়।
 
সূত্র আরো জানায়, অফার ছাড়া দৈনিক গড়ে ২৮ হাজার টাকা হিসেবে মাসে বিক্রি হয় প্রায় সাড়ে ৮ লাখ ‍টাকা। এতে মূসক প্রযোজ্য হয় ১ লাখ ২৭ হাজার ৫শ’ টাকা।
 
ফাঁকির চিত্র দেখে গোয়েন্দাদের চোখ ছানাবড়া। ফাঁকি ঢাকতে চলে ‘ম্যানেজের’ চেষ্টা। না পেরে পালিয়ে যান প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
 
সূত্র আরো জানায়, তিনদিনের অফারে ৪৯০ কেজির বেশি পাস্তা, ২৭০ কেজির বেশি মজেরলা চিজ বিক্রি হয়েছে। কিন্তু বিক্রির সঠিক কোনো হিসাব দেয় না প্রতিষ্ঠানটি।
 
প্রতিষ্ঠানটির মূসক ফাঁকির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

নাইটিঙ্গেল হাইটস ভবনে শর্মা কিং, ইউনিক ল, গ্রাউন্ড হাউজসহ ছয়টি রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফে রয়েছে।
 
সবগুলোসহ খিলগাঁও এলাকার ক্যাফে, রেস্টুরেন্টগুলো নামমাত্র মূসক দেয়। মূসক গোয়েন্দার অব্যাহত অভিযানের ফলে কিছু সংখ্যক প্রতিষ্ঠান মূসক দিচ্ছে।
 
ভোক্তা সিনথিয়া হাবিবা অভিযোগ করেন, ভ্যাট ঠিকমতো নেয়, কিন্তু চালান দেয় না। তাছাড়া খাবারের মানও আগের মতো নেই।
 
মাহাদি ইসলাম অভিযোগ করেন, অফারের সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত থাকে। ভ্যাট নিলেও কোনো চালান দেয় না। অথচ ভ্যাটের নামে খাবারের দাম বাড়তি রাখা হয়।
 
কমিক ক্যাফের মালিক পূর্ণয় মূসক ফাঁকি অস্বীকার করে বলেন, আগে আমরা ফিক্সড ভ্যাট দিতাম, এখন দেই না। জানুয়ারি মাসে ৫ হাজার টাকা নয়, অনেক বেশি দিয়েছি।
মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, শুধু কমিক ক্যাফে নয়, খিলগাঁও এলাকার বেশিরভাগ ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট ঠিকমতো মূসক দিত না। আমাদের অভিযানে কিছু প্রতিষ্ঠান মূসক দিচ্ছে। মূসক গোয়েন্দা মাঠে রয়েছে। কঠোর মনিটরিং করছে।

তিনি বলেন, শুধু খিলগাঁও নয় পর্যায়ক্রমে বনানী, ধানমণ্ডি, বনশ্রী এলাকায় পাহারা বসানো হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষনিক সাজা দেয়া হবে।

এক্ষেত্রে ভোক্তাদের সচেতন হওয়া ও তথ্য দিয়ে সহায়তার আহ্বান জানান তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৬
আরইউ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।