ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চাঁদপুরে জনপ্রিয় সাথী ফসল

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৪ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০১৬
চাঁদপুরে জনপ্রিয় সাথী ফসল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চাঁদপুর: পদ্মা-মেঘনা, ধনাগোধা ও ডাকাতিয়া নদী বহমান চাঁদপুর জেলা। কৃষি ও মৎস্য আহরণই এ জেলার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস।



এখানকার কৃষকরা আগে ফসলি জমিতে শুধু ধান চাষ করলেও এখন সাথী ফসল চাষাবাদ করছেন তারা। সাথী ফসল চাষ করে এক অঞ্চলের কৃষকদের সাফল্য দেখে অন্য অঞ্চলের লোকজন এক জমিতে একই সঙ্গে দুই ফসল চাষ করছেন।

চাঁদপুর জেলার মধ্যে সদর, মতলব উত্তর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলায় সাথী ফসল সব চেয়ে বেশি চাষ হয়। বর্তমানে সাথী ফসলসহ তিন বা তারও বেশি ধরনের ফসল চাষ করা হয়েছে এ জেলার এক হাজার ৪৪৮ হেক্টর জমিতে।

চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কৃষি খাতকে উন্নয়নমুখি ও লাভজনক করতে চাঁদপুর জেলায় তিন ফসলি জমিগুলোকে চার ফসলি করার চেষ্টা চলছে। বর্তমানে জেলায় তিন ফসলি জমির পরিমাণ ২৫ হাজার ৩৩১ হেক্টর, দুই ফসলি জমির পরিমাণ ৪২ হাজার ৭৮৩ হেক্টর ও এক ফসলি জমির পরিমাণ ২৪ হাজার ৫৫৫ হেক্টর। এছাড়া জেলার দু’টি সেচ প্রকল্প ও এর বাইরের অনেক জমিতে এখন সাথী ফসল চাষ করছেন কৃষকরা।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা ইউনিয়নের মদনের গাঁওয়ের কৃষক রহমান গাজী জানান, তিনি এ বছর সাথী ফসল হিসেবে আলুর সঙ্গে আখ চাষ করেছেন। আলু তোলা শেষ। এখন চলছে আখের পরিচর্যা। এ বছর তিনি প্রায় ৪০ শতাংশ জমিতে সাথী ফসল করেছেন।

তার মতো স্থানীয় অনেকেই প্রায় ১০ বছর ধরে আলুর সঙ্গে আখ চাষ করে আসছেন।

চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের নিজ গাছতলা গ্রামের কৃষক শফিউল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, তিনি এ বছর এক একর জমিতে আলুর সঙ্গে ধনিয়া, লাল শাক ও মরিচ চাষ করেছেন। এসব সবজির পাশাপাশি একই জমিতে চাষ করেছেন পুঁইসহ দুই ধরনের শাক। এরপর তিনি একই জমিতে ধইঞ্চা চাষ করবেন। পর পর একাধিক ফসল চাষ করে তারা লাভবান হয়েছেন। তবে এক্ষেত্রে পরিবারের লোকজনকে সার্বক্ষণিক পরিশ্রম করতে হয়।

তিনি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে এসব ফসল জেলা সদরের আড়ৎগুলোতে  বিক্রি করেছেন। এবার সাথী ফসল বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা আয় হয়েছে বলেও জানান তিনি।

একই গ্রামের কৃষক শফিউল্লাহ, অলি উল্লাহ, আবদুল আজিজ ও খালেক গাজী জানান, তারা প্রায় ১৫ বছর ধরে সাথী ফসল চাষ করে আসছেন। ধনিয়া, লাল শাক, আলুর শাক, ক্ষীরা, পুঁই শাক, মরিচ ও আলুর সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে ভুট্টা চাষ করে আসছেন। এ মাঠে প্রায় ১শ’ একর জমিতে রয়েছে একই ধরনের চাষাবাদ। বর্ষা মৌসুমে জ্বালানির চাহিদা মেটাতে এসব জমিতে পাট ও ধইঞ্চা চাষাবাদ করা হয়।

চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের কৃষকদের দেখাদেখি স্থানীয় জনগণ সাথী ফসল চাষ করছেন। কৃষকরা জমিগুলো পতিত অবস্থায় না রেখে একাধিক ফসল ও সাথী ফসল করলে আর্থিক সচ্ছলতা আসবে এবং সবজিসহ মৌসুমী ফসলের চাহিদা পূরণ হবে বলে মনে করেন বাগাদী গ্রামের কৃষক মো. লিটন সৈয়াল।

বাগাদী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খালেদ মাহমুদ জানান, এই ইউনিয়নের কৃষকরা সাথী ফসল চাষের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রায় ১শ’ একর জমিতে ব্যাপক হারে সাথী ফসল চাষাবাদ করা হয়েছে। এ ফসল চাষাবাদ করার জন্য জৈব সারই বেশি ব্যবহৃত হয়। এ কারণে বীজ কেনা ছাড়া তেমন কোনো খরচ নেই। তবে আলু ও ক্ষীরা চাষে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়।

কৃষকদের সব সময় উন্নতমানের বীজ ব্যবহারসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলী আহম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, চাঁদপুরে তিন ফসলি জমিগুলোকে চার ফসলি করার জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাথী ফসল করার প্রতি কৃষকদের আগ্রহ অনেক বেশি।

কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের নিয়ে মাঠ দিবসসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। এছাড়া প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হয় বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৬
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।