ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পানিতে ডুবছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল বোরো

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৬
পানিতে ডুবছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল বোরো  ছবি: আবু বকর সিদ্দিকী-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিলেট: ‘পানি খুব বেশি বাড়ছে। এর লাগি (এজন্য) কাঁচা ধানও কাটরাম (কাটছি)।

‘এক রাইতে (রাতে) যা পানি বাড়ছে, পরদিন এগুলাও পাইতাম নায় (পাবো না)’।

কথাগুলো বলছিলেন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার হাকালুকির পাড়ের কৃষক নিয়াজ মিয়া।

একই উপজেলার হাকালুকির পাড়ের কৃষক ছনর আলী এবার ১২ কেদার (৩ একর ৪ শতক) জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছিলেন। ফলনও ভালো হয়েছিল। কিন্তু পাহাড়ি ঢলে ৮ কেদার (২ একর ৪০ শতক) ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে তাড়াহুড়ো করে ৪ কেদার (১ একর ২০ শতক) জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে পেরেছেন বলে জানালেন ছনর আলী।

তিনি বলেন, তার মতো আরও অসংখ্য কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট আগাম বন্যায়। অনেকের বোরো ফসল এখন পানির নিচে। আর তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেক কৃষক কাঁচা ধান কেটে ঘরে তুলছেন। সিলেটের পারাইরচক, হাকালুকি, কুরকুচি, বেতরিসহ বিভিন্ন হাওর ঘোরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। চৈত্রে পাহাড়ি ঢলে ক্রমশ পানিতে ডুবছে কৃষকের স্বপ্নের বোরো ফসল।    

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সোমবার (০৪ এপ্রিল) দিনগত রাত ও মঙ্গলবারের (০৫ এপ্রিল) ভারি বর্ষণে সিলেটের নিম্নাঞ্চলের মতোই তলিয়ে গেছে এসব হাওরের কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি। ফলে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার যদিষ্টিপুর গ্রামের ছানা মিয়া জানান, তিনি এবার ৩০ কেদার জমিতে বোরো ধান রোপন করেন। ফলন ভালো হলেও প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট অকাল বন্যায় ক্রমশ পানি বেড়ে চলেছে। তাই কাঁচা ফসল কেটে ঘরে তুলছেন। এরপরও অনেক ধানি জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে।

সিলেটের পারাইরচক হাওরের আব্দুল মালিক বাংলানিউজকে বলেন, জমিতে আধাপাকা ধান। এরই মধ্যে প্রবল বর্ষণে ধানি জমি পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। শ্রমিকদের দ্বিগুণ টাকা দিয়ে কাজে আনতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে তিনি এবার ২৫ কেদার জমিতে বোরো খেত করে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলেও জানান এই কৃষক।    সরেজমিনে দেখা গেছে, পাহাড়ি ঢলের কারণে হাওরাঞ্চলের পানি ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এতে করে তলিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর ধানি জমি। ফলে কৃষকরা বাড়তি মজুরি দিয়ে শ্রমিকদের কাজে লাগাচ্ছেন। তবে অনেকে সময়মতো শ্রমিক না পেয়ে পড়েছেন বিপাকে। কেউবা নৌকার অভাবে কাটা ধান পারাপার করতে পারছেন না।

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, এবার বিভাগের চার জেলায় ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৭০৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। এর মধ্যে সিলেটে ৭৯ হাজার ৫৪৫ হেক্টর, মৌলভীবাজারে ৫২ হাজার ৩৩৬ হেক্টর, হবিগঞ্জে ১ লাখ ১৩ হাজার ২০ হেক্টর ও সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২০ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমি রয়েছে।

এর মধ্যে গত দু’দিনের পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারে ৩৬৫ হেক্টর ও হবিগঞ্জে ৪৮৫ হেক্টর বোরো ধানি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বোরো ধানের ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যানের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষ্ণ চন্দ্র হোড় বাংলানিউজকে বলেন, পাহাড়ি ঢলের কারণে কৃষকরা আধা পাকা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। তাছাড়া যেসব ধানি জমি পানিতে তলিয়ে গেলেও দু’একদিনের মধ্যে বন্যার পানি নেমে গেছে, সেগুলোতে তেমন একটা ক্ষতি হবে না। তা নাহলে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

তবে কি পরিমান কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন- এর পরিসংখ্যান এখনও নির্ণয় করা যায়নি বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৬
এনইউ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।